ভর্তি বিড়ম্বনা এবং ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা - দৈনিকশিক্ষা

ভর্তি বিড়ম্বনা এবং ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা

পলাশ রায় |

দিন দিন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে? আমার স্ত্রী স্নাতকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হলেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ফল প্রকাশের আগেই সাইট হ্যাক করে দু’দিন আগে ইন্টারনেটে ফল ছড়িয়ে পড়ে। স্নাতকের পর এমএ ভর্তির পালা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দিলো ভর্তির জন্য। অনলাইনে প্রথমে আবেদন করতে হবে। নিজের কম্পিউটার, উচ্চক্ষমতার ইন্টারনেট সার্ভিস সবই আছে। তবু ভাবলাম, পেশাগত প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আবেদন করি। শহরের একটি কম্পিউটারের দোকানে কাগজপত্র নিয়ে গেলাম। দোকানি জানালেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভারে ঢোকা যাচ্ছে না। কাগজপত্র রেখে যান গভীর রাতে চেষ্টা করতে হবে। দুদিন পরে সার্ভারে ঢুকে আবেদন করা গেল। এরপর ফিরতি মেসেজে কদিন পর ভর্তির জন্য বিষয় নির্ধারণ করে দিল। তবে ওই মেসেজ অনুযায়ী আবারও ভর্তির ফরম তুলতে হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভার থেকে। ১৮ জুলাই ভর্তিও শেষদিন। মেধা তালিকায় যারা প্রথমবারে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন, তাদের ১৪ থেকে ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে ভর্তি হতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে  ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সে দোকানে হাজির হলাম।  দোকানি আমাকে দেখেই বললেন ‘একই অবস্থা সার্ভারে,  ঢোকা যাচ্ছে না। আজ ১৭ জুলাই দুপুরেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভারে ঢুকতে পারেনি অনেকেই। অথচ ভর্তির শেষদিন কাল। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ভর্তি ফরম তুলতে পারলে তা পূরণ করে নির্ধারিত কলেজে যেতে হবে। নির্ধারিত টাকার ব্যাংকড্রাফট, সত্যায়িত কাগজপত্র জমা দেয়া এবং তারপর আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভার। তবে ১৮ জুলাইয়েও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভারে ঢোকা যায় কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আর এ বর্ষে আদৌ ভর্তি হওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সংশয়।[inside ad]

পাঠক আরও একটু পারিবারিক বিড়ম্বনার গল্প তুলে ধরলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। শ্যালিকা মাধ্যমিক পাশ করল গত বছর। গ্রাম ছেড়ে এবার শহরের কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়বে ঠিক করেছে। শহর না হয়ে গ্রামের কলেজে ভর্তি হলেও একই অবস্থা। অনলাইনে ভর্তির জন্য আবেদন করতে হবে প্রথম। সেখানে ভর্তি হতে ইচ্ছুক তিনটি কলেজের প্রস্তাবসহ ফরম পূরণ করতে হবে। শাশুড়িকে নিয়ে শ্যালিকা গ্রামের বৃষ্টিভেজা মেঠোপথের কাদাা মাড়িয়ে মাইল খানেক হেঁটে শহরের দিকে যাত্রা করলেন। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমনে যাত্রা। এরপর আবার কোন এক কম্পিউটারের দোকানে এলেন। সেখানে শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের ভীড়। ভর্তিযুদ্ধের প্রথম ধাপেই এমন অবস্থা। সামনে আরও মহাবিপদ যে অপেক্ষা করছে, তা বুঝতে আমার শাশুড়ির দেরি হলো না। যাহোক অনেক কষ্টে ফরম পূরণ হলো। এবার ফিরতি মেসেজ আসার জন্য অপেক্ষা। দিন যায়, কোন ফিরতি মেসেজ আসে না। ফোনে মায়ের সাথে কথোপকথনে আমার স্ত্রী উদ্বিগ্ন। ছোট বোন ভর্তি হতে পারবে তো! অন্তত উচ্চ মাধ্যমিক শেষ না হলে বিয়ে দেবে কী করে? কম্পিউটারের  দোকানিকে ফোনে আবারও তাগাদা দিলেন শাশুড়ি। কিন্তু দোকানি কী বলছেন, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। অবশেষে আরও দু’তিন দিন একই কায়দায় শহরে যাতায়াত করতে হয়। সার্ভার বন্ধ বা অকেজো হয়ে পড়ার সমস্যা ৪/৫ দিনে শেষ হয়। 
ডিজিটালের নামে ভর্তির আগেই যদি অভিভাবক শিক্ষার্থীদের এত হয়রানিতে পড়তে হয়। কী দারুণ আমাদের ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা!

লেখক: সাংবাদিক ও লেখক

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036640167236328