ভাসানী, শেরেবাংলা-সোহরাওয়ার্দীকেও জাতির পিতা করার পরামর্শ - দৈনিকশিক্ষা

ভাসানী, শেরেবাংলা-সোহরাওয়ার্দীকেও জাতির পিতা করার পরামর্শ

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

সংবিধানে জাতির পিতা হিসেবে শুধু একজনকে স্বীকৃতি না দিয়ে যৌথভাবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমানের নাম প্রস্তাব করেছেন  সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।  সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের বিরোধিতা করেছেন তারা। এছাড়াও সংবিধানের বর্তমান মূলনীতি পরিবর্তন করে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের কথা সন্নিবেশিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সংবিধান সংস্কার কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তারা এসব পরামর্শ দেন। 

সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের বিরোধিতা করে তারা বলেছেন, এটি অন্য ধর্মের সঙ্গে চরম বৈষম্য। কারণ রাষ্ট্রধর্ম থাকলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্য ধর্মের মানুষ বিজাতি হয়ে যায়। তারা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে যায়। সেজন্য সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম রাখা ঠিক হবে না।

তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি ফের স্থাপন, বিচার বিভাগ স্বাধীন করতে কার্যকর উদ্যোগ ও সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুস্পষ্ট নিয়ম সংবিধানে স্পষ্ট করার পরামর্শও দিয়েছেন তাদের অনেকে।

জাতীয় সংসদ ভবনের ক্যাবিনেট কক্ষে এ সভায় স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ, বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক, বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, মুসা আল হাফিজ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ড. শহিদুল আলম ও মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি অংশ নেন।

কমিশনের পক্ষে কমিশনপ্রধান ড. আলী রীয়াজ এবং কমিশন সদস্য অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, অধ্যাপক মো. ইকরামুল হক, ড. শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী ও ফিরোজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সোমবার কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করে এ কমিশন।

সভা সূত্র জানায়, মঙ্গলবারের মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্যের ওপর জোর দেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা দেশের সাংবিধানিক ইতিহাস বর্ণনায় সব রাজনৈতিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে সারসংক্ষেপ সংবিধানে বর্ণনায় নিতে পরামর্শ দেন। একজন আলোচক সংবিধানে থাকা ন্যায়পাল কার্যকরে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বলেন। নির্বাচন পদ্ধতি ইস্যুতে দ্বিধাবিভক্ত মত দেন তারা। কেউ সংখ্যানুপাতিক হারে আবার কেউ বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলেন। তবে সংখ্যানুপাতিক নাকি বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন, সেটি রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানায় কমিশন।

সংবিধান সংস্কার কমিশনে কী মতামত দিয়েছেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ বলেন, সংবিধানে থাকা বর্তমান মূলনীতির পরিবর্তন করে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের কথা সন্নিবেশিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একজন পরপর দুবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে আরেক মেয়াদ বাদ রেখে পরে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, সেই ব্যবস্থা থাকা উচিত। 

সংবিধানে ফের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রবর্তনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে আগের মতো একই ফরমেটে না হলেও এর সদস্যদের গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হতে হবে।

জাতির পিতা হিসেবে শুধু একজনকে স্বীকৃতি না দিয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমানের নাম প্রস্তাব করেন তিনি।

দেশের সাংবিধানিক ইতিহাস বর্ণনায় সব রাজনৈতিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে সারসংক্ষেপ বর্ণনায় নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, একই সঙ্গে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তালিকা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করতে হবে। প্রবর্তন করতে হবে গণভোটের প্রথাও। বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও বিচারপতি নিয়োগের শর্ত ও পদ্ধতি থাকতে হবে সংবিধানে।

সংখ্যানুপাতিক ভোটের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে ভোট হলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে সরকার স্থিতিশীল হবে না। কোয়ালিশন সরকার হবে। সরকারে ভাঙন হতে পারে যে কোনো সময়। এতে রাজনীতি এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেজন্য বর্তমান পদ্ধতিতেই সংসদ নির্বাচন এবং সরকার গঠন হতে হবে।

তিনি বলেন, সংবিধানে জরুরি অবস্থা জারির বিধান থাকবে। তবে যখন তখন যাতে জরুরি অবস্থা জারি না করতে পারে এবং যথাযথ পরিস্থিতিতে যাতে জরুরি অবস্থা জারি হয়, সেই শর্ত থাকতে হবে। এ ছাড়া ধর্ম ও রাজনীতির বিষয়টিও উল্লেখ করার কথা বলেন তিনি।

খুশী কবির বলেন, ৫২ বছর ধরে এটি সংবিধানে থাকলেও কার্যকর করা হয়নি। এটি কার্যকর করা দরকার। রাষ্ট্রধর্মের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, রাষ্ট্র সবার, সংবিধানও সবার। কোনো ধর্মের মানুষের নয়। সেজন্য ধর্ম নিয়ে বৈষম্যের শিকার যাতে না হতে হয়, সেজন্য ধর্মনিরপেক্ষতা রাখতে হবে।

আনুপাতিক হারে ভোটের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যে যত ভোট পাবে, শতকরা হিসাবে তত আসন পাবে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে এটি কার্যকর আছে।

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে না থাকলেও মতলববাজি হিসেবে জেনারেল এরশাদ সংবিধানে এটি পুনঃস্থাপন করেন। এটি অন্য ধর্মের সঙ্গে চরম বৈষম্য। কারণ রাষ্ট্রধর্ম থাকলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্য ধর্মের মানুষরা বিজাতি হয়ে যায়। তারা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে যায়। সেজন্য সংবিধোনে রাষ্ট্রধর্ম রাখা ঠিক হবে না।

বিচার বিভাগরে স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও সেটি বাস্তবে হয়নি। বিচারপতি এস কে সিনহা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করলে তাকে দেশছাড়া করা হয়। তার উদ্যোগ থামিয়ে দেওয়া হয়। সেজন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ’৭২-এর সংবিধানের ১১৫ ও ১১৬ ধারা পুনঃস্থাপনের পরামর্শ দেন তিনি।

সংবিধান পুনর্লিখন নাকি সংশোধন করা হবে—কমিশনের কাছে তা জানতে চান এই আইনজীবী। তিনি বলেন, সংবিধানে হাত দেওয়া আসলে খুব একটা সহজ হবে না। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে।

শিক্ষার্থীদের টাকার পেছনে না ছোটার পরামর্শ শিক্ষা উপদেষ্টার - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের টাকার পেছনে না ছোটার পরামর্শ শিক্ষা উপদেষ্টার বৈষম্যের অবসান চান মাদরাসার জেনারেল শিক্ষকরা - dainik shiksha বৈষম্যের অবসান চান মাদরাসার জেনারেল শিক্ষকরা অযোগ্যদের নিয়োগ দিয়ে শিক্ষকতা পেশাকে লজ্জিত করবেন না - dainik shiksha অযোগ্যদের নিয়োগ দিয়ে শিক্ষকতা পেশাকে লজ্জিত করবেন না আবারো রাজপথে নামতে প্রস্তুত, প্রয়োজনে জীবন দেবো - dainik shiksha আবারো রাজপথে নামতে প্রস্তুত, প্রয়োজনে জীবন দেবো প্রাথমিক শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মান উন্নয়ন করাই লক্ষ্য: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মান উন্নয়ন করাই লক্ষ্য: গণশিক্ষা উপদেষ্টা ভারতকে পছন্দ করেন ৫৩.৬ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতকে পছন্দ করেন ৫৩.৬ শতাংশ বাংলাদেশি পিএসসির নন-ক্যাডারে নিয়োগ, পদ ৪৮২ - dainik shiksha পিএসসির নন-ক্যাডারে নিয়োগ, পদ ৪৮২ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করলেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি - dainik shiksha আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করলেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.012573003768921