সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের এক অধিবেশন থেকে আরেক অধিবেশনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের বেশি বিরতি দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু করোনাভাইরাসজনিত বর্তমান পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক এ বাধ্যবাধকতা রক্ষা করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১১ এপ্রিলের পরে সাধারণ ছুটি আর না বাড়লে সমস্যা হবে না। কিন্তু এরপরও পরিস্থিতি একই থাকলে সাংবিধানিক এ নির্দেশনা পালনে জটিলতা দেখা দেবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানিয়েছেন, ৬০ দিনের এই বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে যাওয়ার মতো কোনো নির্দেশনা সংবিধানে নেই। তাই এক দিনের জন্য হলেও অধিবেশন বসতে হবে। সংসদের বৈঠক কখন ও কোথায় বসবে সেটা নির্ধারণের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তিনি সম্মত হলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংসদের বৈঠক করা যায় কিনা সেটাও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত স্পিকার জানান, ভারতের সংবিধানে অবশ্য সংসদ অধিবেশনের জন্য ৬০ দিনের এই বাধ্যবাধকতা নেই।
একাদশ সংসদের সর্বশেষ ষষ্ঠ অধিবেশন শেষ হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সংসদের অধিবেশন শুরুর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। তবে এতে বলা হয়েছে, ১০ ও ১১ এপ্রিল (শুক্র ও শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটিও এর সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এরপর ১২ ও ১৩ এপ্রিল রোববার ও সোমবারের পরে ১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার আবারও পহেলা বৈশাখের ছুটি রয়েছে। আর ১৭ ও ১৮ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার ছুটির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। তাই অধিবেশন ডাকার মতো সময় রয়েছে ১৫ অথবা ১৬ এপ্রিলে।
সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সরকারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতি সংসদ আহ্বান, স্থগিত ও ভঙ্গ করবেন এবং সংসদ আহ্বানকালে রাষ্ট্রপতি প্রথম বৈঠকের সময় ও স্থান নির্ধারণ করবেন। সংসদের এক অধিবেশনের সমাপ্তি ও পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের মধ্যে ৬০ দিনের অতিরিক্ত বিরতি থাকবে না। তবে রাষ্ট্রপতি এ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।
এই অনুচ্ছেদের শেষাংশে আরও বলা হয়েছে, কার্যপ্রণালি বিধি দ্বারা বা অন্যভাবে সংসদ যেভাবে নির্ধারণ করবে, সংসদের বৈঠক সেভাবে সময়ে ও স্থানে অনুষ্ঠিত হবে।
সংসদ সংশ্নিষ্টদের কেউ কেউ মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের জানমালের নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়িয়ে সাংবিধানিক নির্দেশনা মানার বা সংসদের বৈঠক আহ্বানের যৌক্তিকতা নেই। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যদের এখন জনগণের পাশে দাঁড়ানোর দাবিও উঠছে। তবে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, সংবিধান পর্যালোচনা করে তিনি এমন কোনো নির্দেশনা পাননি যাতে বৈঠক না ডেকে পারা যায়। তার মতে, এক দিনের জন্য হলেও সংসদ বসে দীর্ঘ সময়ের জন্য মুলতবি করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সব সংসদ সদস্যের উপস্থিত হওয়ারও কিছু নেই। ঢাকা ও আশপাশের এলাকার এমপিরা যোগ দিলেই কোরামের জন্য নির্ধারিত ৬০ জন সদস্য হয়ে যাবেন। তবে এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি বিবেচনা করে নেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংসদের বৈঠক বসার পরিকল্পনা সম্পর্কে স্পিকার বলেন, এটা পুরোপুরি প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ৬৪ জেলায় ডিসিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। সেভাবে এমপিরা সাড়া দিতে পারলে এটা হয়তো সম্ভব।
এর আগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৩ মার্চ সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়। যা ২২ মার্চ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে অধিবেশন বাতিল করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।