ভুল প্রশ্নে পাবলিক পরীক্ষা, দায় কেন শিক্ষার্থীর? - দৈনিকশিক্ষা

ভুল প্রশ্নে পাবলিক পরীক্ষা, দায় কেন শিক্ষার্থীর?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রায়ই ভুল প্রশ্নে নেওয়া হয় পরীক্ষা। বিশেষ করে নতুন সিলেবাসের পরীক্ষার্থীদের দেওয়া হয় পুরনো সিলেবাসের প্রশ্ন। আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রথমে ভুল প্রশ্ন দেওয়া হলেও কিছু সময় পরে তা সংশোধন করা হয়। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই মাসুল দিতে হয় শিক্ষার্থীদের।

সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র বিতরণ ও ছাপায় যদি কোনো ভুল হয় তার দায়দায়িত্ব যারা বিতরণ করছেন তাদের, যেমন বিজি প্রেস বা শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু এর দায় কেন শিক্ষার্থীদের নিতে হবে? রোববার (২১ এপ্রিল) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় রাজধানীর দনিয়া কলেজের পাঁচটি কক্ষে প্রথমে ভুল প্রশ্ন দেওয়া হয়। নতুন সিলেবাসের শিক্ষার্থীরা শুরুতে মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চন (এমসিকিউ) অংশের প্রশ্ন পেয়েই উত্তর দেওয়া শুরু করে। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর প্রায় ২০ মিনিট পর অধিকাংশ শিক্ষার্থী দেখতে পায়, তাদের দেওয়া প্রশ্নে আছে ৪০টি এমসিকিউ, কিন্তু থাকার কথা ৩০টি। পরীক্ষককে বিষয়টি জানালে দেখা যায়, ওই প্রশ্ন ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের সিলেবাসে পুরাতন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত। কারণ, তখন ৪০টি এমসিকিউ ছিল, আর লিখিত পরীক্ষায় ছিল ৬০ নম্বর। কিন্তু এখন নতুন সিলেবাসে এমসিকিউ ৩০টি, আর লিখিত পরীক্ষায় ৭০ নম্বর।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রায় ২৫ মিনিট পরে তাদের প্রশ্ন বদলিয়ে নতুন সিলেবাসের প্রশ্ন দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা আবার নতুন করে পরীক্ষা শুরু করে। যদিও তাদের ২৫ মিনিট সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এমনটা কেন হবে?

এ বিষয়ে দনিয়া কলেজের একজন শিক্ষক জানান, এখানে আমাদের কোনোই ভুল নেই। আমরা যেই প্যাকেট খুলে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন দিয়েছি, সেখানে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের সিলেবাস লেখা ছিল। কিন্তু প্যাকেটের ভেতরে ছিল ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের প্রশ্ন।

দনিয়া কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়া একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘প্রথমে এক প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়া, পরে আবার তা পরিবর্তন করে দেওয়ায় আমার সন্তান মানসিক বিপর্যয়ে পড়ে। যে কারণে তার লিখিত অংশের পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। কিন্তু এতে আমার সন্তানের কী দোষ? কেন তাকে ভুল প্রশ্নের দায় নিতে হলো?’

এ ছাড়া গত ১ এপ্রিল রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর সরকারি কলেজের একটি করে কক্ষে নতুন শিক্ষার্থীদের পুরনো সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরে ব্যাপারটা জানাজানি হলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের খাতা আলাদা করে রাখে। এবার যারা পুরনো সিলেবাসের পরীক্ষার্থী তাদের আলাদা কক্ষে বসিয়েও এই সমস্যার সমাধান করা যায়নি।

গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ৯টি কেন্দ্রে পুরনো সিলেবাসের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। একইভাবে মুন্সীগঞ্জে সদরের এভিজেএম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বাজিতপুর হাফেজ আব্দুর রাজ্জাক পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, শেরপুরের শ্রীবরদীতে এমএনবিপি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পঞ্চগড়ের দুই উপজেলার দুটি কেন্দ্র, কুমিল্লার দেবিদ্বারে দুয়ারিয়া এজি মডেল একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ফকিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রে নতুন শিক্ষার্থীদের পুরনো সিলেবাসে প্রশ্ন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

জানা যায়, ভুল প্রশ্ন পাওয়া অনেক কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের পরে প্রশ্ন বদল করে নতুন প্রশ্ন দেওয়া হয়। আবার অনেক কেন্দ্রে পুরনো সিলেবাসেই পরীক্ষা শেষ করতে বাধ্য করা হয়। এখন এসব শিক্ষার্থী নতুন সিলেবাস অনুযায়ী পড়ালেখা করলেও তাদের পুরনো সিলেবাস অনুযায়ী দেওয়া পরীক্ষাই মূল্যায়ন করা হবে।

সূত্র জানায়, গত বছরের পাবলিক পরীক্ষা থেকে ভুল প্রশ্ন বিতরণের ঘটনা বেশি ঘটেছে। প্রশ্নফাঁস রোধে এখন পরীক্ষা শুরুর মাত্র ২৫ মিনিট আগে জানানো হয়, কোন সেটে পরীক্ষা হবে। এতে মাত্র ২৫ মিনিটে শিক্ষকদের প্রশ্ন পড়ে দেখার সময় থাকে না। ফলে কোনো প্যাকেটে ভুল প্রশ্ন থাকলেও তারা সেটাই বিতরণ করেন। আবার অনেক সময় তাদের নিজেদের ভুলেও প্রশ্ন ওলট-পালট হয়।

তবে নতুন ও পুরনো সিলেবাসের সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি একটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন একজন কর্মকর্তা। তিনি জানান, পুরনো সিলেবাসে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি নয়। তাই পুরনো সিলেবাসের শিক্ষার্থীদের জন্য ভিন্ন রঙের কাগজে প্রশ্ন করা যেতে পারে। এতে রং দেখেই কাদের প্রশ্ন কোনটা তা বুঝতে পারবেন শিক্ষকরা।

এসব বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন, “এইচএসসিতে যে দুটি কেন্দ্রের কিছু শিক্ষার্থী পুরনো সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের খাতা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হবে। তারা অন্য পরীক্ষাগুলো কেমন দিয়েছে, তা বিবেচনায় নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদেরও শুরুতেই দেখা উচিত, যে প্রশ্নটা সে পেয়েছে, সেটা তার কিনা? তবে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, এ ধরনের সমস্যা যাতে আর না হয়।’

পুরনো সিলেবাসের শিক্ষার্থীদের জন্য ভিন্ন রঙের প্রশ্নের ব্যাপারে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা খুবই ভালো প্রস্তাব। আমরা অবশ্যই ব্যাপারটি গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখব।’

সূত্র: কালের কণ্ঠ

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029361248016357