ভুয়া তথ্যে অস্তিত্বহীন ১১ স্কুলকে সরকারিকরণের চেষ্টা - দৈনিকশিক্ষা

ভুয়া তথ্যে অস্তিত্বহীন ১১ স্কুলকে সরকারিকরণের চেষ্টা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ভুয়া তথ্য দিয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার অস্তিত্বহীন ১১টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের পাঁয়তারা চলছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাইমারি এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (পিমিএমআইএস) অনলাইনে এসব ভুয়া তথ্য সংযোজন করা হয়েছে। অনলাইনে এসব ভুয়া তথ্য থাকা সত্ত্বেও সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে প্রতি বছর তা নবায়ন করছেন। এ ঘটনার সঙ্গে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গণি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নির্ধারিত কোড নম্বর দিয়ে নির্দিষ্ট অনলাইনে তার বিদ্যালয়ের তথ্য হালনাগাদ করবেন। পরে তিনি হালনাগাদ তথ্য উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর পাঠাবেন। তিনি যাচাই-বাছাই করে একই প্রক্রিয়ায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে ওই বিদ্যালয়ের তথ্য পাঠাবেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই শেষে তথ্য সরাসরি আপডেট করে থাকেন।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৭ মে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন হাওলাদার অধিদপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৬১টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওই তালিকায় এই ১১টি বিদ্যালয়ের নাম ছিল না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিক্ষা অফিসের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, এই ১১টি বিদ্যালয়ের নাম ও তথ্য অনলাইনে সংযোজন করা হয়েছে ২০২১ সালে। এসব বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিতে একতলা ভবন, নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, জমি ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিয়ে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবরে আব্দুল গণি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার পর এসব তথ্য সংযোজন করা হয়েছে। জেনেশুনে এসব ভুয়া তথ্য হালনাগাদ করেছেন তিনি। 

সরেজমিনে ওই সব বিদ্যালয়ে খোঁজ নিতে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আটটি বিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। তিনটির অস্তিত্ব রয়েছে ছিটেফোঁটা। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগড়দাড়ী ইউনিয়নের নেহা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারটি ছোট ছোট কক্ষ রয়েছে। বাঁশের বেড়া ও অ্যাসবেস্টস দিয়ে ছাউনির এসব ঘরে সাতটি বেঞ্চ, দুইটি টেবিল ও তিনটি চেয়ার রয়েছে। 

স্থানীয় জোবায়দা খাতুন জানান, বছর দুযেক আগে তাঁদের গ্রামের এ বিদ্যালয়টি করা হয়েছে। কিন্তু এখানে কেউ পড়তে আসে না। 

বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফরিদউদ্দিন এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দাবি করে বলেন, ‘বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের জন্য আমি ৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। তবে স্কুল জাতীয়করণ হয়নি।’ 


 
তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। করোনার আগে ৬৯ জন শিক্ষার্থী ছিল। তবে করোনার পরে কেউ বিদ্যালয়ে আসে না। টাফরারডাঙি বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ঘর থাকলেও তার কোনো কার্যক্রম নেই। 

বাঁশদহা ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, একটি ঘর রয়েছে। ওই বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা তহিদুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়টি ২০১৮ সালের দিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্থানীয় আব্দুল মান্নান নামে একজনের বাড়িতে মাস দু-এক এর কার্যক্রম ছিল। ৭ মাস আগে আব্দুল মান্নান ১৭ শতক জমি কিনে তাতে একটি ৩০ ফুট লম্বা ও ১২ ফুট চওড়া একটি টিনের শেড ঘর বানিয়েছেন। ওই বিদ্যালয়ে আব্দুল মান্নান, স্ত্রী, তাঁর ভাইয়ের মেয়ে ও ভাইয়ের স্ত্রীকে শিক্ষক হিসেবে দেখানো হয়েছে। 

দক্ষিণ হাওয়ালখালী গ্রামের যুবক মো. মরিজ্জামান বলেন, ‘আমাদের গ্রামে দক্ষিণ হাওয়ালখালী বালিয়ডাঙ্গা নামে কোনো বেসরকারি-সরকারি বিদ্যালয় নেই।’ 

বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফরিদউদ্দিন বলেন, ‘কাওনডাঙ্গা মিয়ারাজ উদ্দীন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই।’ 

অনলাইনে হালনাগাদ করা পিমিএমআইএস অনুযায়ী, দত্তবাগ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কানিজ ফাতেমা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয় সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।’ 

খেজুরডাঙ্গা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেব নাম থাকা সমীরণ কুমার সরকার বলেন, ‘এক সময় একটি ঘর তোলা হয়েছিল, তবে বর্তমানে কোনো অস্তিত্ব নেই।’ 

অনলাইনে নাম থাকা ফুলবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নাম থাকা রোমানা সুলতানা বলেন, এক সময় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল স্কুল করার। পরে আর আগানো হয়নি। 

পূর্ব কুশখালি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী হিসেবে নাম থাকা জিতেন্দ্র নাথদাস জানান, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য হয়তো শিক্ষক হিসেবে তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল। তবে এ সম্পর্কে এখন কিছু জানেন না বলে জানান তিনি। 

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে বালিথা পশ্চিমপাড়া ও বঙ্গবন্ধু শিমুলবাড়িয়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও অস্তিত্ব মেলেনি। অস্তিত্বহীন এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে চারটি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি দেখানো হয়েছে বাঁশদহা গ্রামের সোহরাব হোসেনকে। 

অভিযোগের বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গণি পিমিএমআইএস অনলাইনে ভুয়া তথ্য সম্পর্কে বলেন, ‘ওই বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো সরকারি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি সাতক্ষীরায় যোগদান করার আগে অধিদপ্তরের সফটওয়্যারে ওইগুলো দাখিল করা ছিল। তবে করছি, করব বলে সেগুলো সরানো হয়নি। এবার আমি ওয়েবসাইট থেকে নামিয়ে ফেলব।’ 

সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমি বলেন, ‘আমি কয়েক মাস মাত্র যোগ দিয়েছি। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে - dainik shiksha একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের - dainik shiksha ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম - dainik shiksha থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান - dainik shiksha প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051548480987549