রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খানকে নতুন সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এর আগে আওলাদ হোসেনকে অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও শিক্ষকদের উপর নির্যাতনের অভিযোগে সভাপতির পদ থেকে অপসারণ করা হয়। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়। চিঠি প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে নতুন সভাপতিকে প্রথম সভা আয়োজনের নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খানকে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সভাপতি মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। চিঠি প্রাপ্তির তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার তথ্য বোর্ডকে জানাতে হবে সভাপতিকে।
রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নির্যাতনকারী সবেক সভাপতি আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মসহ বিভিন্ন নানা অভিযোগ রয়েছে। টর্চার সেল বানিয়ে শিক্ষকদের নির্যাতনের অভিযোগের ভিডিওটি ভাইরাল হলে অপসারণ করা হয় আওলাদ হোসেনকে। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষায় সভাপতির টর্চার সেলের ভিডিও রিপোর্টটি প্রকাশ হয়। তবে, স্থানীয় এমপি নির্যাতনের শিকার শিক্ষকদের শর্ত দিয়েছেন যে, অপসারণের পর আওলাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বা মন্ত্রণালয়ে বা শিক্ষা বোর্ডে আর কোনো অভিযোগ করতে পারবেন না শিক্ষকরা। অতি গোপনে পদত্যাগপত্র জমা দেন আওলাদ।
সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা তৎকালীন সভাপতির বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ করবেন না এমন শর্ত দেয়ার পর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন আওলাদ হোসেন। সভাপতির পদত্যাগে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা ও কর্মচারীরা। এদিকে সভাপতির অপসারণের খবরে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, প্রকাশিত ভিডিও এবং রিপোর্টটির মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সারাদেশের শিক্ষক সমাজ নির্যাতনকারী সভাপতির দুর্নীতির খবর জানতে পেরেছেন।
ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন: সভাপতি আওলাদের পদত্যাগ দাবিতে মতিঝিল মডেল স্কুলে মিছিল!
গত ৯ ডিসেম্বর (সোমবার) রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে আওলাদ হোসেনের অপসারণ ও নতুন সভাপতি মনোনয়ন দাবিতে মানববন্ধন করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও অভিভাবকরা। এসময় অভিযোগ করে বলেন, ‘শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও কথায় কথায় বরখাস্ত করেন। প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন সভাপতি।’ মানববন্ধনে শিক্ষকরা কয়েকজন শিক্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দেন। সভাপতির বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন তারা। শিক্ষকরা বলেন, সভাপতি ঢাকায় চারটি বাড়ি করেছেন যদিও তার কোনো বৈধ আয় নেই।
৯ ডিসেম্বর মানববন্ধনে শিক্ষকরা বলেছিলেন, ‘প্রায় ১১ বছর ধরে আওলাদ হোসেন প্রতিষ্ঠানটি লুটেপুটে খাচ্ছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের পদে থাকায় ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে চান না অনেক শিক্ষক-কর্মচারী। সভাপতি স্কুলের ভেতরে একটা টর্চার সেল তৈরি করেছেন। যেখানে ঢোকার সময় মনে হবে বেহেশতখানায় ঢুকছেন কিন্তু বের হওয়ার সময় কাঁদতে কাঁদতে বের হতে হয়।’
আরও পড়ুন: মতিঝিল মডেলের সভাপতির অপসারণ দাবি, স্কুল রক্ষায় শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
প্রশ্নফাঁস, কোটি কোটি টাকার কেনাকাটা, শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়মের বেশ কিছু অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই। বছরের পর বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি; আবার অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পদে পূর্ণ দায়িত্ব না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালানো হচ্ছে। এসব পদেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের যখন খুশি তখন পরিবর্তন করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষকদের মধ্যে ভেতরে-ভেতরে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে।
আর এসব কারণে একসময়ে ভালো ফল করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির এসএসসি পরীক্ষার ফল ধারাবাহিকভাবে খারাপ হয়েছে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ (‘এ’ প্লাস) পেয়েছিল ১ হাজার ১৩০ জন শিক্ষার্থী। সেটা প্রতিবছর কমতে কমতে চলতি বছর জিপিএ-৫ পায় ২২৫ জন। যদিও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিনা শামসী দাবি করেন, আশপাশে একাধিক ভালো প্রতিষ্ঠান থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকে একপর্যায়ে চলে যায়। এরপরও তাঁরা ভালো করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মানববন্ধনে একটি নতুন ভবনের কাজে ১ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন মর্মে অভিযোগ করেন। পরীক্ষার ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকার প্রায় ৮০ লাখ সভাপতিকে দিতে হয়। অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শাখা মতিঝিল কলোনিতে অবস্থিত, আরেকটি শাখা ক্যাম্পাস বাসাবো এলাকায়। বর্তমানে ১১ হাজার বেশি শিক্ষার্থী পড়ছে।