ইউক্রেনের নাগরিক মারিয়া আমার সহপাঠী ছিল। একদিন তার দেশের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হচ্ছিল। সে বলল, প্রায় সব চাকরিতেই শুধু সিভি চাওয়া হয়। সেটায়ও প্রার্থিত পদের জন্য দরকারি শিক্ষা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ফোকাস করতে হয়। প্রাথমিক ইন্টারভিউয়ে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হলে তাকে ‘শিক্ষানবিশ’ হিসেবে নিয়োগ দেয়। কাজেই দক্ষতা প্রমাণ করতে পারলে চাকরি কন্টিনিউ হয়, নইলে একপর্যায়ে না করে দেয়। সে তখন পর্যন্ত তিনটা চাকরি করেছে। কোথাও তাকে শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমাণের জন্য সনদ বা তার ফটোকপি জমা দিতে হয়নি! মঙ্গলবার (২৩ জুন) বণিক বার্তার এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধনটি লিখেছেন মো. আব্দুল হামিদ।
নিবন্ধনে আরও জানা যায়, খুব অবাক হচ্ছেন, তাই না? নামিদামি সার্টিফিকেট, ওজনদার গ্রেড, অমুক-তমুকের প্রত্যয়ন, এমনকি বিশেষ ব্যক্তি কর্তৃক সুপারিশ...এগুলোকে তারা কেয়ারই করে না? আমি অবশ্য তেমন অবাক হইনি। কারণ তারা কাজ চায়, ডিগ্রি বা গ্রেড ধুয়ে পানি খাওয়া তাদের লক্ষ্য নয়। আমাদের দেশেও কিন্তু বহুলাংশে এই চর্চা হয়। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা, রেস্টুরেন্টে বাবুর্চি নিয়োগ দেয়ার সময় কি তার শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখা হয়, নাকি রান্না করার দক্ষতা? ট্রাক-লরি-বাস এমনকি আপনার ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার নিয়োগের সময়? কাজের বুয়া, দর্জি, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাসের মিস্ত্রি, মোবাইল ফোন বা টিভি মেরামতকারী খোঁজার সময় কি দেখেন সংশ্লিষ্ট কাজের দক্ষতা বা ডিগ্রি?
এগুলো সব অতি নিম্নমানের উদাহরণ হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে তেমন পেশায় কল্পনা করতে আপনার প্রেস্ট্রিজে বাধছে, তাই তো? ফাইন। এবার তাহলে বলেন, জাতীয় দলে ক্রিকেটার নির্বাচনে কোনটা বড়? ডিগ্রি না খেলার দক্ষতা? সিনেমায় হিরো বা হিরোইনের রোল দেয়া হয় কী দেখে? এমপি নমিনেশন বা মন্ত্রী নিয়োগের সময়ও কি ডিগ্রি দেখা হয়? এমন আরো অসংখ্য উদাহরণ মাথায় আসছে। তবে আমি যা বলতে চাইছি তা উপলব্ধি করার জন্য এগুলোই যথেষ্ট।
এবার একটু অন্যভাবে বিষয়টা দেখা যাক। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি বা ভালো রেজাল্ট থাকাই কি সেই বিষয়ে সত্যিকারের সফল হওয়ার নিশ্চয়তা দেয়? আমাদের দেশের অতিসফল পাঁচজন মানুষের নাম মনে করতে চেষ্টা করুন। দেখুন তো, যে খাতে তারা খ্যাতির শীর্ষে রয়েছেন, সেই বিষয়েই তারা প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা করেছেন কিনা? আরেকটু সহজ করে বলি, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান পড়েছেন পরিসংখ্যান আর ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম ছিলেন অর্থনীতির ছাত্র! অন্যদিকে সাংবাদিকতা পড়ে হার্টথ্রব নায়ক হয়েছেন ফেরদৌস আর ইতিহাস পড়ে মুশফিক হয়েছেন দেশসেরা ক্রিকেটার। বলুন তো, বিজনেস পড়ে কয়জন ব্যবসা করার কথা ভেবেছেন? আবার এ দেশে সফল ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঠিক কয়জন বিজনেস বিষয়ে ডিগ্রিধারী?
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি নিয়ে আনিসুল হক আর নৃবিজ্ঞান পড়ে সা’দত হোসাইন হয়েছেন খ্যাতিমান সাহিত্যিক! হুমায়ূন আহমেদের কথা আমরা সবাই জানি। রসায়নের রস নয়, বরং সাহিত্যবোদ্ধাদের অন্য রসে হাবুডুবু খাওয়ানোর ক্ষেত্রে তার জুড়ি মেলা ভার। বাংলা বা ইংরেজি সাহিত্য পড়ে এ দেশের সাহিত্য অঙ্গনে দ্যুতি ছড়ানো কারো নাম কি এই মুহূর্তে আপনার মনে পড়ছে? নায়িকা জয়া, নুসরাত, মাহি কিংবা বুবলি কোন বিষয়ে ডিগ্রিধারী, তা কি কখনো আপনার জানতে ইচ্ছা হয়েছে? তাহলে যে ডিগ্রি বা গ্রেডের পেছনে সবাই ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছি, তা কখন, কীভাবে এতটা তাত্পর্যপূর্ণ হয়ে উঠল?
এ দেশের ওপরতলার বাসিন্দারা কখনো প্রচলিত শিক্ষাকে ‘কেয়ার’ করে না। একেবারে চালচুলোহীনদেরও এসবের বালাই নেই। তারা জানে, গতর খাটালে পয়সা আসবে, নইলে না। ফলে এই দুই গোষ্ঠীর ডিগ্রি বা রেজাল্টবিষয়ক কোনো উদ্বেগ আমাদের নজরে আসে না। মজার বিষয় হলো, তাদের বেকারত্বের হারও আমাদের নজর কাড়ে না! তাহলে মাঝের এই গোষ্ঠীটা কেন বড় বড় ডিগ্রি আর জিপিএ ফাইভের পেছনে ছুটছে? এটা হওয়ার (খুব সম্ভবত) বড় কারণ হলো, মধ্যবিত্তের ছকে বাঁধা কর্মজীবনের প্রত্যাশা।
মা নিজে ডাক্তার হতে চেয়েছিলেন। যে কারণেই হোক সেটা পারেননি। এখন সন্তানের কাঁধে সেই স্বপ্ন চাপিয়ে দিয়ে তাকে নিত্যদিন চাবুক মারছেন! কিন্তু সেই মা জানেন না যে এখন মেডিকেলের বেশির ভাগ ছাত্রই ডাক্তারিবিদ্যা শেখার চেয়ে বিসিএস গাইডে বেশি মনোযোগী থাকে! আজ ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া সন্তান যেদিন কর্মজীবনে প্রবেশ করবে, সেদিন নতুন ও আকর্ষণীয় অসংখ্য জব সৃষ্টি হবে, তা কল্পনা করার শক্তি সেই অভিভাবকের নেই। তাই বাস্তবিক পেশা গ্রহণের ২০-২৫ বছর আগেই তার ক্যারিয়ার ঠিক করে দেয়াটা আমাদের বিস্ময় জাগায় না! কেন এমনটা হয়?
আমাদের দেশে এখনো শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হলো ভালো একটা চাকরি পাওয়া। ঘুষ দিয়ে, পরীক্ষায় দুই নম্বরি করে, বিশেষ কাউকে ম্যানেজ করে হলেও একটা চাকরিতে ঢুকতে পারলেই মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন সবাই তাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন। শিক্ষার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে ভেবেও তারা তৃপ্ত হন। কিন্তু একবার ভাবুন তো, আয়মান সাদিকের পেশাগত পরিচয় কী? সে কি তথাকথিত ‘ফার্স্টক্লাস জব’ করে, নাকি বড় শিল্পপতি? পাঠাওয়ের সহ-উদ্যোক্তা হোসাইন ইলিয়াস বিসিএস দেয়নি বলে কি তার জীবন ব্যর্থ হয়ে গেছে? মাত্র ৩২ বছর বয়সে সে ১০০ মিলিয়ন ডলারের কোম্পানি চালায়। সে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েনি, এটা কি তার সফলতার পথে বাধা হতে পেরেছে?
মাঝেমধ্যে খুব জানতে ইচ্ছে করে, সমাজের বেঁধে দেয়া সফলতাগুলো আসলে কোন মানদণ্ডে সফল? এ দেশে ঈর্ষণীয় পদে ২০ বছর সরকারি চাকরি করেও (সৎ উপার্জন দিয়ে) একটা গাড়ি কেনা সম্ভব হয় না, পরিবারের মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই করা যায় না, বড় রোগে চিকিৎসার জন্য অন্যদের সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়...তার পরও আমাদের সন্তানদের সে রকম সফল করার জন্য হেন কোনো পন্থা নেই, যা আমরা অবলম্বন করি না! তাহলে কি ‘ডালমে কুচ কালা হ্যায়?’
আবার আমরা শুধু যানজট আর সেশনজট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করি। কিন্তু বেকারজট নিয়ে সত্যিই কি সেভাবে উদ্বিগ্ন হই? উচ্চতর পড়ালেখা শেষে বেকার হওয়া অনেকটা নিয়তি ভেবে সবাই মেনে নিয়েছি। কিন্তু একবার ভাবুন তো, একটা কোম্পানি প্রতিদিন যে পণ্য উৎপাদন করে, সেগুলোর যদি বাজারে চাহিদা না থাকে (কিংবা বিক্রি না হয়), তবুও কি সেই প্রতিষ্ঠান তার উৎপাদন অব্যাহত রাখবে? নতুন পণ্য উৎপাদনে আরো অর্থ লগ্নি করবে? নাকি বাজারে চাহিদা আছে এমন পণ্য উৎপাদনে মনোযোগী হবে?
এত কথা বলার কারণ হলো, গতিশীল বিশ্বগ্রামে বাস করেও আমরা ‘শিক্ষা’ বিষয়ে সেকেলে মানসিকতা লালন করছি। দুনিয়া যতই বদলে যাক না কেন, আমরা মান্ধাতা আমলের ডিগ্রি-রেজাল্ট-বিশেষ কিছু চাকরির ঘোর কাটাতে পারছি না। শিক্ষা বিষয়ে আমাদের মূল ফোকাস কখন যে শিফট হয়ে গেছে তা খেয়ালই করিনি! এখন অধিকাংশই শেখা নয়, ডিগ্রির কাঙাল হয়েছি। আর সেটা কেন এত দরকারি? প্রত্যাশিত চাকরি পাওয়ার জন্য, তাই না?
আজব এই মানসিকতা আমাদের ধ্বংস করে ফেলছে। লাখ লাখ বেকার ভবিষ্যতে কোনো রকম আশার আলো দেখছে না। তবুও ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে সামনের দিকে। মনে প্রশ্ন জাগছে না, আচ্ছা যদি প্রত্যাশিত চাকরিটা আমি না পাই, তখন কী হবে? অধিকাংশই এর জবাবটা খোঁজার প্রয়োজন মনে করে না। ফলে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হারিয়ে যায়, বিয়েশাদির বয়স পেরিয়ে যায়। মাথার চুল, চোখের জ্যোতি, চেহারার দ্যুতি একে একে সবই বিদায় নেয়। তবুও ওই সোনার হরিণটার পেছনে ছোটা বন্ধ হয় না!
নিশ্চয়ই ভাবছেন, তাহলে কী করা উচিত? মনে করুন, আপনি দূরপাল্লার এক বাসের যাত্রী। কিছুদূর যাওয়ার পর গাড়ির কন্ডিশন, চালক ও তার সহযোগীদের আচরণ আপনার ভালো লাগে না। পাশের যাত্রীরাও গন্তব্যে পৌঁছা নিয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে আপনি বুঝেই ফেললেন যে ওদের ভরসায় থাকলে গন্তব্যে পৌঁছা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে আপনি কী করবেন? বসে বসে ওই বাস কর্তৃপক্ষ, ড্রাইভার-হেলপারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করবেন, নাকি বিকল্প উপায় খুঁজতে থাকবেন?
আপনি গাড়ির মালিক বা ড্রাইভার নন, নিতান্তই একজন যাত্রী। তাই আপনার ক্ষমতার মধ্যে আছে—হয় ওই গাড়িতে বসে অনিশ্চিত গন্তব্যের প্রহর গোনা, নইলে গাড়ি থেকে নেমে বিকল্প খোঁজা। আমাদের বড় ডিগ্রিধারী, রেজাল্ট নিয়ে গর্বিত তরুণদের বড় একটা অংশের জীবন এখন সেভাবে এগোচ্ছে। তারা খুব ভালো করে জানে, তার বিদ্যা-বুদ্ধি ও দক্ষতা দিয়ে কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। তার পরও মা-বাবার ঘাড়ে বছরের পর বছর বসে অন্ন ধ্বংস করছে। বাস্তবতা উপলব্ধি করে সে মোতাবেক ‘একটা কিছু করা’র পরিকল্পনা নেই, তাড়না অনুপস্থিত। শুধু অন্যদের দোষারোপ করা ছাড়া নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা ও আকাঙ্ক্ষা তাদের অধিকাংশই লালন করে না!
অনেকেই গত্বাঁধা কিছু যুক্তি রিপিট করতে পছন্দ করে। কথায় কথায় সরকার, শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের ধুয়ে ফেলে। আর ভাবে, বিরাট কিছু উদ্ধার করে ফেলল! ভাইরে, এতদিন তাও সবকিছু মোটামুটি একটা স্ট্রাকচারে চলছিল। ভবিষ্যৎ বিষয়ে কিছুটা আঁচ করা যেত। কিন্তু করোনা যে ধাক্কা দিল, তাতে আগামীতে আপনার দুঃখ শোনার মতো কেউ থাকবে বলে মনে হয় না। কারণ তারা নিজেদের সমস্যা নিয়েই জর্জরিত থাকবে। তাই নিজেই নিজেকে সাহায্য করতে হবে।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যেটুকু বুঝি, এ দেশে এ পর্যন্ত যারা সফল হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই হয়েছেন নিজের চেষ্টায়। সিস্টেম কখনই তাদের তরতর করে উচ্চ আসনে নিয়ে বসায়নি। আর নতুন পরিস্থিতি যে খুব কঠিন হবে তা সহজেই অনুমেয়। ফলে আগামীতে আপনার উচ্চ ডিগ্রি বা ওজনদার গ্রেড মোটেই সাহায্য করতে পারবে না। ভবিষ্যতে যেসব খাতে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে, সেখানে স্পষ্ট জানতে চাওয়া হবে—আপনি কাজ জানেন কিনা? প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও গুণাবলি না থাকলে নিয়োগকর্তাও আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন না!
আমি বিজনেস ডিসিপ্লিনের মানুষ। ফলে আমার ভাবনা ব্যবসায়িক যুক্তি দ্বারা প্রভাবিত হবে, সেটাই স্বাভাবিক। আর শিক্ষার মতো আবশ্যকীয় পণ্যের ব্যবসায়িক সম্ভাব্যতা বিষয়ে উদাসীন থাকার সুযোগ নেই। একবার ভাবুন, একটা পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে ও পরে কত রকম গবেষণা হয়। ক্রেতাদের মতামতের ভিত্তিতে তা প্রায়ই আপডেট করা হয়। প্রয়োজনে পণ্যের অনেক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আনা হয়। এমনকি মাঝেমধ্যে কিছু পণ্য নির্মমভাবে ছেঁটে ফেলা হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে নিয়মিত নতুন পণ্যের উদ্ভাবন হয়।
কিন্তু শিক্ষার মতো মৌলিক এই পণ্য নিয়ে আমাদের দেশে সত্যিকারের কোনো গবেষণা হয়েছে কি? অসংখ্য প্রজেক্ট হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। সহসা হওয়ার যৌক্তিক কারণও দেখি না। তাহলে কি এভাবেই চলতে থাকবে? কাঠামোগত কারণেই আরো অনেক দিন চলবে। কিন্তু আপনার বয়স, শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য কি বসে থাকবে? সবাইকে দোষারোপ করে পুরো সিস্টেমের সামান্য অংশেও কি কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন?
তবে হ্যাঁ, পরিবর্তন আনা সম্ভব। কীভাবে? আপনার নিজেকে বদলে ফেলার মাধ্যমে। আপনার সাধ্যের মধ্যে এটাই রয়েছে। করোনা সংকটে বিপন্ন এক পাইলট বাইকার হিসেবে ফুড ডেলিভারি দিচ্ছেন! এমন খবর দেখার পরও বুঝতে পারছেন না, আপনার ভাবনায় বড় পরিবর্তন আনা দরকার! কল্পনা করুন, সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে আপনি জাহাজ থেকে সাগরে পড়ে গেছেন। তখন কী করবেন? আপনার এই পড়ে যাওয়ার জন্য কে দায়ী, কেন এটা হলো, আপনার সঙ্গে এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না—এসব ভাববেন, নাকি আপনার মাথায় একটি বিষয়ই কাজ করবে—কীভাবে সেখান থেকে উদ্ধার পাবেন, তাই না?
বর্তমানে কর্মহীনদের করণীয় সেটাই। আপনি বলছেন, চাকরি পাচ্ছেন না। অথচ যারা নিয়মিত চাকরির ইন্টারভিউ নেন, তারা বর্তমান চাকরিপ্রার্থীদের পারফরম্যান্সে খুবই হতাশ! কারণ শুধু ডিগ্রি আর গ্রেডের পেছনে ছুটতে গিয়ে তারা জীবনের জন্য দরকারি অন্য কোনো গুণাবলিতে নজর দেয়নি। অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এক্ষেত্রে খুব একটা সাহায্য করেনি। ফলে অধিকাংশের বই বা চোথা মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় উগরে দেয়া ছাড়া তেমন কোনো স্কিল অর্জিত হয়নি! কিন্তু আগে হয়নি বলে এখনো করা যাবে না, ব্যাপারটা তেমন নয়। আমার পরিচিত যারা কোনো না কোনো কাজ শিখেছে, তাদের জবের অভাব হচ্ছে না। কিন্তু শুধু ডিগ্রিধারীদের সাহায্য করা যাচ্ছে না!
কর্মহীনদের বোধোদয় হতে হবে। সেটা যত দ্রুত হয় ততই কল্যাণ। জীবনের সোনালি সময় কঠোর পরিশ্রম দিয়ে রাঙিয়ে তুলবেন, নাকি হতাশার বীজ বপন করে তাতে নিত্যদিন পানি ঢালবেন, তা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। অন্যদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। শুধু আমাদের দেশ নয়, গোটা বিশ্বই এখন বড় অস্থির সময় পার করছে। নিজেদের সমস্যা নিয়ে সবাই ভারাক্রান্ত। সেখানে আপনার মতো সামর্থ্যবান একজন যুবকের দুঃখ-কষ্ট কে শুনবে? তাই আজই নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঢেলে সাজান। বাস্তবতা মোকাবেলায় হোন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
ও হ্যাঁ, সরকার কেন করে না, অমুক কী করছে, তমুক কেন দেখছে না—এসব তর্ক করা যদি আপনার খুব পছন্দের হয়, তবে এ লেখাটি আপনার জন্য নয়। নিরাপদ ও কল্যাণকর হোক আগামীর বিশ্ব!
লেখক:মো. আব্দুল হামিদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক এবং ‘শিক্ষা স্বপ্ন ক্যারিয়ার’ বইয়ের লেখক