মাউশি অধিদপ্তরে নিয়োগবাণিজ্য : মন্ত্রণালয় কেন তদন্ত স্থগিত করলো? - দৈনিকশিক্ষা

মাউশি অধিদপ্তরে নিয়োগবাণিজ্য : মন্ত্রণালয় কেন তদন্ত স্থগিত করলো?

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রদর্শক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম, নিয়োগ কমিটির প্রধানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত কেন থামিয়ে দিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়? এই প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। অধিদপ্তরের সাবেক কয়েকজন মহাপরিচালক ও পরিচালক এবং বেসরকারি শিক্ষক নেতাদের মতে, গত শিক্ষা অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাকে সমর্থন দেন মন্ত্রণালয়ের কেউ কেউ। যে কারণে, একের পর এক প্রশ্নফাঁস, নিয়োগ ও এমপিও জালিয়াতি ধরা পড়লেও কারো শাস্তি হয়না। 

তাদের মতে, নিরপেক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার জন্য আইবিএ, বুয়েট কিংবা অন্য কোনো সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া উচিত। অতীতে কয়েকবার প্রশ্নফাঁসের পর আইবিএকে পরীক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তদবির ও নিজেদের লোকের চাকরি নিশ্চিত করতে না পারায় ‘বেশি খরচের’ জুজু দেখিয়ে ফের নিজেদের হাতে পরীক্ষা নেয়া হয়। 

আরও পড়ুন : শিক্ষা অধিদপ্তরে শাহেদুলের নিয়োগবাণিজ্য: দুদকের তদন্ত শুরু

 

গত ১৩ মে অনুষ্ঠিত মাউশি অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষার প্রধান পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী। নিয়োগ কাজে মহাপরিচালকের কোনো ভূমিকা নেই। 

গতবছর অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষার সময়ও নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী। সদস্যসচিব ছিলেন উপপরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) মো. রুহুল মোমিন। নানা অনিয়মের অভিযোগে রুহুল মোমিনকে বদলি করা হয়। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস। তিনিও আগের ধারাবাহিকতায় নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

গত বছরের ২ রা ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশটি প্রত্যাহার করেছে। এ জন্য আমাদের তদন্তকাজ বন্ধ আছে।’ আজ বৃহস্পতিবারও জানা গেছে তদন্তকাজ বন্ধই আছে। এরই মধ্যে অন্য পদের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর।

জানা যায়, গত বছরের ২৮ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ জমা হয়। অভিযোগ বলা হয়, সরকারি কলেজে বিভিন্ন বিষয়ের প্রদর্শকরা পরে পদোন্নতি পেয়ে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত প্রভাষক হন। এমনকি তাঁদের অধ্যাপক হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। অথচ এ ধরনের পদে ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। নিয়োগ কমিটির অনেকেই এ ব্যাপারে একমত না হলেও নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।

সূত্র জানায়, সরকারি কলেজে ১০টি বিষয়ের প্রদর্শক, গবেষণা সহকারী, সহকারী গ্রন্থাগারিক-কাম-ক্যাটালগার, ল্যাবরেটরি সহকারীর পদগুলো দশম গ্রেডের। এ ধরনের ৬১০টি পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, দশম থেকে দ্বাদশ গ্রেড পর্যন্ত দ্বিতীয় শ্রেণির পদ। মাউশির নিয়োগবিধিতে এই পদগুলোকে তৃতীয় শ্রেণির দেখিয়ে শুধু এমসিকিউ পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য পদের মধ্যে ২০তম গ্রেডের অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা প্রহরী, মালি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং ১৬তম গ্রেডের অফিস সহকারী, হিসাব সহকারী, ক্যাশিয়ার, স্টোরকিপার, গাড়িচালকসহ আরো কিছু পদের সবারই এই এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরেও বড় নিয়োগ চলছে। তারা বুয়েটকে দিয়ে তাদের খাতা মূল্যায়ন করাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও তাদের নিয়োগ পরীক্ষার মূল্যায়নের দায়িত্ব দেয় বুয়েটকে। 

নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী দীর্ঘদিন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত ছিলেন। প্রথমে তিনি বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ছিলেন। এরপর সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি অধ্যাপকের জ্যেষ্ঠতার তালিকায় অনেক পেছনে থাকলেও বর্তমান সরকারের মেয়াদের শুরুতে শিক্ষা প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) হন।

শাহেদুল খবির তিন বছর আগে ঢাকা বোর্ড ছেড়ে এসেছেন, কিন্তু এখনো তিনি বোর্ডের বাসায় থাকেন। 

এর আগে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ কমিটির পাঁচ সদস্যের একজন ছিলেন অধ্যাপক শাহেদুল খবির। সে সময় অকৃতকার্য হওয়া এক প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করে কমিটি। তখন প্রায় ৪০ লাখ টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। পরে সেই নিয়োগ বাতিল করা হয়। এমনকি নিয়োগ কমিটির সদস্যদের ভবিষ্যতে কোনো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটির সদস্য না করার জন্য আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অথচ চার হাজার ৩২টি পদে নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সেই শাহেদুল খবিরকেই।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে একাধিকবার অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরীর মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি। নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসও এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

দুর্নীতির দূর্গখ্যাত  মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের অধীন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে চার হাজার কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ শুরু থেকেই। দ্বিতীয় শ্রেণির পদে শুধু এমসিকিউ (মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন) পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। 

সূত্র জানায়, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে ২৮টি পদে চার হাজার ৩২ জনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় মাউশি অধিদপ্তর। এতে আবেদন করেন আট লাখ ৯৭ হাজার ৪৯ জন। এরই মধ্যে বেশির ভাগ পদের এমসিকিউ টাইপের পরীক্ষা শেষ হয়েছে।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0086019039154053