মাগো, তুমি বিদ্যা দাও সকলেরে - দৈনিকশিক্ষা

মাগো, তুমি বিদ্যা দাও সকলেরে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মাগো, তুমি বিদ্যা দাও সকলেরে

ওম জয় জয় দেবী চরাচরসারে,

কুচযুগ শোভিত মুক্তা হারে,

বীণা রজিত পুস্তক হস্তে,

ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্ততে

ওম সরস্বতী মহা ভাগে,

বিদ্যা কমলোলোচনে,

বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী,

বিদ্যাং দেহি নমহস্ততে!!

প্রতি বছর মা সরস্বতী ধরণিতে আসেন আমাদের বিদ্যাবুদ্ধি দিতে, আমাদের বিদ্যার ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে, পরিপূর্ণ করতে। বিদ্যার্থীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ১২টি মাস, ৩৬৫ দিন, কখন বিদ্যাদেবী আসবেন তাদের শিক্ষাঙ্গনে। সব শিক্ষার্থী ছেলেমেয়ে একত্রিত হয়ে ‘মা’কে আগমন জানাতে তৈরি করে নতুন প্রস্তুতি, সিদ্ধান্ত নেয় মা সরস্বতীকে পূজা দিতে এবারে কী কী আয়োজন থাকবে। প্রথমেই তারা দেবীর মূর্তি তৈরির জন্য নির্দিষ্ট কারিগরের কাছে চলে যায়, দেখে-শুনে মূর্তিপ্রাপ্তির তারিখ নিশ্চিত করে। তারপর শুরু হয় তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মহড়া, সেইসঙ্গে মন্ডপ তৈরি, পুরোহিতকে সময়-তারিখ নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে আলপনা আঁকা আর মন্ডপ সাজানোর কাজ চলতে থাকে। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, সরস্বতী পূজা দুর্গাপূজার মতোই সর্বজনীন। দলমতনির্বিশেষে আবালবৃদ্ধবনিতা এ পূজায় শরিক হয়। মার কাছে বিদ্যা চাইতে সবাই জোড়হাত তুলে প্রণাম করে। মা তো বিদ্যার দেবী, তাই তার কাছেই বিদ্যা চাইবে সবাই। বিদ্যা যদি না পাই তবে তো পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারব না। একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে হলে বিদ্যার বিকল্প নেই। আচার, আচরণ, স্বভাব, প্রকৃতি সবকিছুই পরিপূর্র্ণতা পায় বিদ্যার গুণে। তাই বিদ্যার দেবীকে অঞ্জলির মাধ্যমে নিবেদন করে শিক্ষার্থীরা। তাদের মনোস্কামনা যেন দেবী সরস্বতী পূরণ করেন- এ প্রার্থনাই পূজার মূলমন্ত্র।

বাঙালির ঘরে ঘরে যে পূজা আবহমানকাল থেকে হয়ে আসছে তা হচ্ছে সরস্বতী পূজা। দেবী সরস্বতী মা ‘বিদ্যার দেবী’ তাই শিক্ষার্থীদের জন্য আসেন বিদ্যার স্বরূপ হয়ে। বিদ্যাবুদ্ধিতে সন্তানরা সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে মায়ের আশীর্বাদে, এ দিন তাই সকালে পূজার আয়োজন চলে ঘরে ঘরে। অঞ্জলি আর প্রসাদ বিতরণের মধ্যে পূজামন্ডপ হয়ে ওঠে আনন্দ উৎসবে মুখর।

মা দেবী সরস্বতী আমাদের বিদ্যাবুদ্ধি, জ্ঞান, আর সুরের মূর্ছনায় ভরিয়ে দিতে আসেন প্রতি মাঘে। শীতের এই কুয়াশাঢাকা সকালে স্নান করে বই, খাতা, কলম নিয়ে মা দেবী সরস্বতীর কাছে আমরা হাজির হই পুষ্পাঞ্জলি দিতে। কারণ মাকে আমার ভক্তি নিবেদন করতে হবে, কেননা বিদ্যাবুদ্ধি আমার চাই-ই। কথায় বলে শিক্ষার শেষ নেই। আমার যতই ডিগ্রি আর পদবি থাকুক, জানার যেমন শেষ নেই তেমন আমার বিদ্যাকে, আমার বুদ্ধিকে আরও আমি বাড়াতে চাই। তাই বলে বিদ্যার জাহাজ হওয়ার জন্য নয়। বিদ্যার একটি ছোট ডিঙি নৌকা তো হতে পারি!

সরস্বতী পূজায় শিক্ষাঙ্গনের শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, তাদের সঙ্গে মিলিত হন সব শিক্ষক, শিক্ষয়িত্রী, কর্মচারী, কর্মকর্তা। সবাই মিলেই পূজাকে সার্থক ও পরিপূর্ণভাবে উদ্যাপন করে। অঞ্জলি আর দেবীর প্রসাদ বিতরণের পর শুরু হয় যজ্ঞ, তারপর ভোগ। সবাই আমন্ত্রিত হয়ে আসে পূজামন্ডপ দর্শন আর প্রসাদ গ্রহণ করতে। সবশেষে আরতি আর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করে বাড়ি ফিরে যায়। বিদ্যাদেবী সরস্বতী পূজার দিন অঞ্জলি দিয়ে দেবীর কাছে প্রার্থনা করে, তাদের যেন বিদ্যাবুদ্ধি হয়, জীবনে তারা যেন শিক্ষিত হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সংসার, সমাজ আর দেশসেবা দিয়ে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

সরস্বতী পূজা যে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছাত্রছাত্রীদের নিয়েই হয় তা কিন্তু নয়, তাদের সঙ্গে ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ থাকে এ পূজার আকর্ষণীয় দিক। পূজামন্ডপে ছেলেমেয়েদের সুন্দর সাজে সজ্জিত হয়ে গান, আরতি, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, রঙিন সাজে ধূপধুনা আর ফুল দিয়ে অঞ্জলি দিতে দেখা যায়। এ দৃশ্য দেখলে মন আনন্দে ভরে যায়, কে হিন্দু, কে মুসলমান কেই-বা খ্রিস্টান বোঝা বড়ই কঠিন। এ যেন এক মিলনমেলা। তখনই সত্যিকারভাবে ফুটে ওঠে সেই চিত্র ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’।

মানবকল্যাণমূলক চেতনাকে মনেপ্রণে ধারণ করে আমাদের মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। তবেই মনুষ্যত্বের বিকাশ সম্প্রসারিত হবে। আর মনুষ্যত্বের বিকাশের মাধ্যমেই সাধিত হবে মানুষের তথা সমাজের কল্যাণ। এর ফলে মানুষের মধ্যে প্রকাশিত হবে মানবিক মূল্যবোধ। বাংলাদেশে আমরা যেন এভাবেই সবাই মিলেমিশে চলতে পারি। পূজার দিনে আমরা কামনা করি, দেশটি যেন সত্যিকারভাবেই অসাম্প্রদায়িক চেতনায়, মুক্তিযুদ্ধের আলোকে সাংস্কৃতিক অঙ্গন ভরে থাকে বছরের সারাটা দিন। সরস্বতী দেবীর কাছে আমাদের প্রার্থনা একটিই- ‘মাগো, তুমি বিদ্যা দাও সকলেরে’।

লেখক : অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী, একুশে পদকপ্রাপ্ত এবং শব্দসৈনিক (স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র)।

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00341796875