নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, গাইবান্ধা, সৈয়দপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু মসজিদে বৃহস্পতিবার রাতে একযোগে আজান দেয়া হয়েছে। এত রাতে হঠাৎ আজান শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অনেক মানুষ। তবে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় মাঝরাতে মসজিদে আজান দেয়া হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন অনেকে। আবার একই সময়ে ফেসবুকেও আজান প্রচার করা হয়েছে।
মো. মাসুদ রানা নামে একজন স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, ‘রাত ১১ টায় হঠাৎ আজান?? তার স্ট্যাটাসে নোমান এন হাসান নামে একজন কমেন্ট করেন, ‘বলা নাই কওয়া হঠাৎ করে একযোগে আজান দেয়ায় অনেকে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন।
জামিল সওদাগর দাওয়াতুল হক নামে একজন ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, ‘রাত ১২ টা ৭ মিনিটে আজান নিয়ে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না এবং কেউ কাউকে বিভ্রান্ত করবেন না। কারণ, আজান করোনা মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দেয়া হয়েছে।। আল্লাহ আজানের উছিলায় মহামারী করোনা থেকে মুক্তি দান করুক।। এছাড়া আজকে জুম'আ রাত দোয়া কবুলের রাত।
পরে তিনি আরেকটি স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘করোনা মহামারি থেকে বাঁচতে বিভিন্ন মসজিদে আজান দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) রাত ১০ টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে এ আজান দেয়া হয়। সমমনা ইসলামী দলের আয়োজনে এ কর্মসূচী পালন করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সমমনা ইসলামী দলের সমন্বয়ক মাওলানা ফেরদৌসুর রহমান জানান, অতিরিক্ত ঝড়, বৃষ্টি কিংবা মহামারী থেকে বাঁচতে এমন আজান দেয়া যায়। মহামারি থেকে বাঁচতে এমন আযান দেয়া যায়, এটি মূলত রাতেই দেয়া হয়। এটি আমাদের কর্মসূচী ছিল।’
নামাজের সময় ছাড়া এভাবে আজান দেয়ার বিধান সম্পর্কে ইসলাম কি বলে জানতে চাওয়া হলে একজন ফাজিল মাদরাসার আরবি প্রভাষক জানান, 'কিছু ক্ষেত্রে আজান দেয়া সুন্নাত। সেগুলো হলো সন্তান জন্ম নিলে, কোনো মহামারি দেখা দিলে, আগুন লাগলে, জ্বিন দূরীভূত করা, মানসিক রোগী, কেউ রাস্তা হারিয়ে ফেললে, কোনো হিংস্র জানোয়ারের আক্রমণ রোধ করার জন্য, কেউ অতিরিক্ত রাগান্বিত হলে, কোনো এলাকায় মহা দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে। তবে এসব স্থানে আজানের ক্ষেত্রে হাইয়্যা আলাস সালাহ্’ ও ‘ হাইয়্যা আলাল ফালাহ্’ ব্যাতিত বাকি শব্দগুলো উচ্চারিত হবে।'
তবে হঠাৎ এ আজানে মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে গেছে, এটি আগে জানানো সম্ভব ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ঐ মাদরাসা শিক্ষক বলেন, ‘এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ আলেমদের মত হচ্ছে যে, মহামারি থেকে বাঁচতে সম্মিলিতভাবে আজান দেয়ার একটি ঘোষণা দেয়া যেত। ব্যাপকভাবে জানান দিয়ে দিলে উত্তম হতো এবং কোনো গ্রহণযোগ্য আলেম অথবা শীর্ষস্থানীয় শরীয়াহ বোর্ড থেকে বিষয়টি প্রচারিত হলে বিভ্রান্তির আশঙ্কা ছিল না। বিষয়টি না জানায় জনমনে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এই মুহূর্তে সকলকে ধৈর্য ধারণ করার জন্য এবং ভালোকে মেনে নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
জানা গেছে, পুরো আয়োজনটিই ফেসবুক নির্ভর। অজ্ঞাত উৎস থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে এটি ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। তবে অন্য একটি সূত্র জানায়, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কয়েকজন নেতা রাত ১০টায় একযোগে আজানের প্রস্তাব করলে ফেসবুকের মাধ্যমে এটি অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে এই আজান। তবে এতে কোনো ইসলামী দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল না।
গত বছরের শেষ দিকে চীন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তা ছড়িয়ে পরে সারা বিশ্বে। মার্চের শুরুতে বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে করোনা ভাইরাস। ভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, রাস্তা-ঘাট, বাজার-সদাই সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশজুড়ে এক নিস্তব্ধ, দমবন্ধ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য আতঙ্কিত মানুষ যা সামনে পাচ্ছে তাই আকড়ে ধরার চেষ্টা করছে। বৃহস্পতিবার রাতের আজান তারই অংশ হিসেবে বলে ধারণা সাধারণ মানুষের।
বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) নতুন করে ৫ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বর্তমানে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৪ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১১ জন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচজন মৃত্যুবরণ করেছেন। সারাবিশ্বে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২২ হাজার ৯৯৩ জন আক্রান্ত মৃত্যুবরণ করেছেন।