মাতৃত্বকালীন ভাতা পাচ্ছেন পুরুষ! - দৈনিকশিক্ষা

মাতৃত্বকালীন ভাতা পাচ্ছেন পুরুষ!

বরগুনা প্রতিনিধি |

আল-আমিন চৌকিদার বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ছোট পোটকাখালী এলাকার বাসিন্দা। তিনিও দুগ্ধদায়ী মা হিসেবে মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা পাচ্ছেন। তালিকায় নামের জায়গা খালি থাকলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট নম্বরটি রয়েছে। তার স্ত্রীর সুখি বেগমও রয়েছেন এ তালিকায়। বরগুনায় ল্যাকটেটিং মাদার কর্মসূচি নিয়ে এমনই এলাহিকাণ্ড চলছে। আল-আমিন ও সুখি দম্পত্তি জানায়, দুজনের নাম ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে অফিস সহকারী নাজমুল ইসলামকে ছয় হাজার টাকা দিয়েছেন।

বরগুনায় মাতৃত্বকালীন ভাতার সুবিধাভোগী করে দেওয়ার নামে ঘুষের রমরমা কারবার এখানে ‘ওপেন সিক্রেট’। টাকার বিনিময়ে বয়স্ক, স্বামী-শিশুহীন নারী এমনকি পুরুষও পাচ্ছেন মাতৃত্বকালীন ভাতা। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগী এক নারী।

জানা যায়, মায়ের স্বাস্থ্য ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত কর্মসূচির আওতায় শিশুর জন্ম থেকে ৩ বছর পর্যন্ত প্রত্যেক মাকে ২৮ হাজার ৮০০ টাকা সহায়তা দেওয়া হয় মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। ২০-৩৫ বয়সী দুগ্ধদায়ী মায়েরা এ সুবিধা পেয়ে থাকেন। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বরগুনা পৌর শহরে ‘ল্যাকটেটিং মাদার’ কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫০ জন। তবে অভিযোগ উঠেছে, নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ঘুষের বিনিময়ে কর্মসূচিতে সুবিধাভোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে বয়স্ক, স্বামী-শিশু নেই এমন নারী এমনকি পুরুষও এ সুবিধা নিচ্ছেন।

এখানে এ কর্মসূচির শুরু থেকেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। পৌর এলাকার নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মায়েদের বদলে, ঘুষের বিনিময়ে অন্য উপজেলার বাসিন্দাদের দেওয়া হয়েছে বরাদ্দ। আবার বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগে উঠেছে। আবার অন্য জেলার ভোটার হয়ে স্বামী স্ত্রী দুজনই পাচ্ছেন মাতৃত্বকালীন ভাতা। 

এ কার্যক্রমের শুরুর দিকের সুবিধাভোগী পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মাস্টার রোল কর্মচারী মরিয়ম আক্তার বিথী। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ঘুষের বিনিময়ে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। পরে ১৬৯ জনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়ে তা তুলে দেন চক্রের অন্য সদস্যদের হাতে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মরিয়ম আক্তার বিথী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, যারা টাকা খেয়ে তাদের নাম দিয়েছে তারাই এখন বলে আপনার টাকা আর পাবেন না। তাহলে এই টাকা গেলো কোথায়। তিনি আরও বলেন, আমি মূলত এক টাকাও খায়নি, টাকা খেয়েছে ওরা। এর দায়ভার আমি কেনো নেবো?

সুবিধাভোগী একাধিক নারী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বরগুনা মহিলা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী নাজমুল ইসলাম ও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মেহেরুন নাহার মুন্নির যোগসাজশে উৎকোচের বিনিময়ে এমন অনৈতিক কাজ চলছে।

বরগুনা পৌর শহরের কলেজ ব্রাঞ্চ সড়কের বাসিন্দা বিলকিস রিনা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ৫৩ বছর। তার কনিষ্ঠ সন্তান এখন লেখাপড়া করছে দশম শ্রেণিতে। তিনিও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে এ প্রকল্পের অধীনে সহায়তা পাচ্ছেন উৎকোচের বিনিময়ে। তিনি ছয় হাজার টাকা দিয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।

বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের দক্ষিণ মনসাতলি এলাকার বাসিন্দা স্বর্ণা সরকারের শিশু নেই। অথচ তিনি কর্মসূচির আওতায় নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন।

বরগুনা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অফিস সহকারী নাজমুল হাসান ঘুষ নিয়ে নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, ঘুষ নেওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। তবে, এক ভুক্তভোগীর সঙ্গে শালিস বৈঠকের ভিডিও দেখালে তিনি চুপ হয়ে যান। 

বরগুনা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেহেরুন্নাহার মুন্নি দাবি করেন, নীতিমালা মেনেই সুবিধাভোগী বাছাই ও ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। তবে অফিস সহকারীর ঘুষ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার (নাজমুলের) বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038611888885498