মাতৃভাষায় পাঠদানে সাফল্য আসছে না - Dainikshiksha

আদিবাসী দিবস আজমাতৃভাষায় পাঠদানে সাফল্য আসছে না

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আদিবাসী পাঁচটি সম্প্রদায়ের শিশুদের হাতে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রাক-প্রাথমিকে তাদের মাতৃভাষার পাঠ্যবই তুলে দেয় সরকার। এর মধ্যে সমতলে গারো ও সাত্রী এবং পাহাড়ে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষার পাঠ্যবই চালু করা হয়। কিন্তু নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব বর্ণমালা ও মাতৃভাষায় প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবে সাফল্য মিলছে না এ উদ্যোগে। ফলে আদিবাসী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা নিজ মাতৃভাষায় পাঠদানের বিষয়ে দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এরই মধ্যে অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিশুদের নিজস্ব বর্ণমালা ও মাতৃভাষা শিক্ষা দিয়ে তা রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব আদিবাসী দিবস। শুক্রবার (৯ আগস্ট) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সত্রং চাকমা ও উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গ্যা।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নৃ-ভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার  মাধ্যমে বাংলাদেশে বসবাসরত প্রায় ৫৪টি আদিবাসী গোষ্ঠীর ৪১টি ভাষার সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ভাষা বিপন্ন। ভাষাগুলো হলো- খাড়িয়া, কোড়া, সৌরা, মুন্ডারি, কোল, মালতো, খুমি, পাংখোয়া, রেংমিটচা, চাক, খিয়াং, বম, লুসাই ও পাত্র। শুধু তাই নয়, হারাতে বসেছে ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও বর্ণমালাও।

সরেজমিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বান্দরবান সদর উপজেলার ক্রামাদি ম্রো পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সিরি চ রুডায়- অ, সিরি চ রুডায়- আ, কওরি- ক, খইরি-খ এভাবে ম্রো ভাষার বর্ণমালা পড়াচ্ছেন এক ম্রো আদিবাসী শিক্ষক। তিনি বাংলা বর্ণমালার অ, আ, ক, খ নিজস্ব মাতৃভাষার উচ্চারণে পড়াচ্ছেন। হারাতে বসা নিজস্ব ভাষা রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এ শিক্ষক হচ্ছেন মেন পয় ম্রো (৪৮)। তিনি স্বশিক্ষিত। প্রচলিত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেননি তিনি। তার পরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শিশুদের নিজস্ব ভাষাটি শেখানোর। বাড়ির উঠোনে বসে শিশুদের শেখাচ্ছেন ম্রো ভাষা। কারণ, সরকার আদিবাসীদের ভাষা রক্ষায় পাঠ্যবই শিশুদের হাতে তুলে দিলেও তা কাজে আসছে না। এ অঞ্চলের কিছু শিশু সরকারি প্রাইমারি স্কুলে পড়লেও সেখানে তাদের মাতৃভাষায় বইটি পড়ানোর কেউ নেই। 

এ ব্যাপারে ম্রো নেতা, গবেষক, লেখক ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য সিং ইয়ং ম্রো বলেন, বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার কিছু জায়গা মিলে ম্রো জনসংখ্যা ৬৫ হাজারের মতো। এই জনসংখ্যার বেশিরভাগ লোকই নিজস্ব মাতৃভাষার বর্ণমালায় পড়তে ও লিখতে জানে না। এ ছাড়া নিজস্ব দক্ষ কোনো শিক্ষকও নেই। তার ওপর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকাতে হুমকির মুখে আছে ম্রো ভাষা। 

খুমী সম্প্রদায় থেকে প্রথম উচ্চশিক্ষিত এবং বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণকারী লেলুং খুমী বলেন, দিন যত পার হচ্ছে তত একটা একটা করে শব্দ, বাক্য আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে এক সময় কয়েকটি জাতির ভাষার অস্তিত্ব আর পাওয়া যাবে না এই পৃথিবীতে।

বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকারিভাবে এ বছর চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের নিজস্ব ভাষার বর্ণমালায় জেলায় প্রায় ১০ হাজার বই বিতরণ করা হয়েছে। তবে প্রাথমিক স্কুলগুলোতে তা পড়ানো হয় না বললেই চলে। 

প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তাবিবুর রহমান বলেন, প্রথমত দক্ষ শিক্ষকের অভাব। দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজস্ব শিক্ষক সংখ্যা খুবই কম। এতে প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃভাষা শিক্ষা আগাচ্ছে না।

এদিকে রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলার ৯৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণিতে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা শিশুদের জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৭টি মাতৃভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে। ৮টি উপজেলার মধ্যে ৬টিতে ৩৬ জন করে এবং ২টি উপজেলায় ৩০ করে শিক্ষককে ১৪ দিনের জন্য মাতৃভাষা শিক্ষার ওপর মৌলিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। 

তবে কয়েকজন শিক্ষক জানান, শিক্ষকদের ১৪ দিনের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও এটি পর্যাপ্ত নয়। এ ছাড়া মাতৃভাষার সঠিক কোনো কারিকুলাম না থাকায় মূল্যায়ন কম হচ্ছে। এ উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়নে আদিবাসীদের মাতৃভাষায় পড়ানোর জন্য স্থায়ীভাবে মাতৃভাষায় প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন।

জুরাছড়ি উপজেলার সামিরামুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক কনিকা চাকমা, কিরণ বিকাশ চাকমাসহ অনেকে বলেন, মাতৃভাষায় আদিবাসী শিশুদের পাঠ্যপুস্তক দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তবে ছেলেমেয়েদের পড়ানো হয়নি।

১৪৫নং বনযোগীছড়া মৌজার প্রবীণ হেডম্যান করুণাময় চাকমা জানান, চার-পাঁচ দশক আগেও আদিবাসী ভাষা চর্চার এতটা বেহাল দশা ছিল না। পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক গুরুজনই চাকমা ভাষায় নিজেদের মধ্যে চিঠিপত্র লেখালেখি করতেন। কিন্তু ব্যবহারিক উপযোগিতা না থাকায় এখন তাও হারিয়ে গেছে।

জুরাছড়ি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কৌশিক চাকমা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আদিবাসীদের মাতৃভাষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সঠিক নির্দেশনা- এটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মূল্যায়নের ব্যবস্থাও থাকা প্রয়োজন।

জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা বলেন, আদিবাসী শিশুরা বাসায় যে ভাষায় কথা বলছে, বিদ্যালয়ে সে ভাষায় লেখাপড়া করছে না। বাংলা বুঝতে না পারার কারণে শিশুদের মনে পাঠ্যবই কোনো দাগ কাটছে না, স্কুলের পাঠ গ্রহণও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রবিউল হোসেন জানান, এ বছর ৮টি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৩৫ জন করে শিক্ষককে মাতৃভাষার ওপর মৌলিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আদিবাসীদের মাতৃভাষায় পাঠদানের এ কার্যক্রমের সাফল্য পেতে আরও দুই বছরের মতো সময় লাগবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্যাঞ্চল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইন্টু মনি তালুকদার বলেন, সামগ্রিকভাবে আদিবাসীদের উন্নয়ন ও তাদের মৌলিক অধিকার এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ ছাড়া তাদের যে ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে সেগুলো আজ সংকটাপন্ন। তিনি বলেন, বিশেষ করে পার্বত্য শান্তি চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত আদিবাসীরা তাদের মৌলিক অধিকারসহ ভাষা, সংস্কৃতির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0098738670349121