বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার একটি শিক্ষাবান্ধব সরকার। এই সরকার মাদরাসা শিক্ষায় বহুমাত্রিক উন্নয়ন সাধন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আলাদা মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর হয়েছে, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং অধিকাংশ মাদরাসায় স্থায়ী অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে।
সরকারের এই দূরন্ত পথ চলার সহযাত্রী মাদরাসা শিক্ষকরা সমতালে এগোতে পারছে না, বাঁধ সেধেছে মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮। এই নীতিমালায় মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে সকল প্রভাষক বঞ্চিত হয়েছেন এবং বিস্মিত হয়েছেন।
মাদরাসার প্রশাসনিক পদে জেনারেল শিক্ষকরা তো আবেদন করতে পারবেনই না এমনকি আরবি প্রভাষকরাও আবেদন করতে পারবেন না। আলিম মাদরাসার প্রশাসনিক পদে আরবি প্রভাষকদের বঞ্চিত করে দাখিল মাদরাসার সুপার ও সহ-সুপারকে নিয়োগের সুযোগ রাখায় মাদরাসায় কর্মরত হাজার হাজার আরবি প্রভাষকের মধ্যে চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। এছাড়া ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোয় মাদরাসার প্রশাসনিক (সহ-সুপার, সুপার, আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ ও ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ) পদে জেনারেল শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছিল। যার ফলে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের সংশোধিত পরিপত্র প্রকাশের পূর্বে বেশ কয়েকজন জেনারেল শিক্ষক মাদরাসার প্রশাসনিক পদে নিয়োগ পেয়েছেন এবং এমপিওভুক্ত হয়ে বেতন-ভাতার সরকারি অংশ ভোগ করছেন।
আকস্মিকভাবে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে সংশোধিত পরিপত্র প্রণয়ন করা হয় যাতে মাদরাসার প্রশাসনিক পদে নিয়োগে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ঠিক রেখে অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করা হয়। মাদরাসায় শিক্ষকতার স্থলে মাদরাসায় আরবি বিষয়সমূহে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। ‘আরবি বিষয় সমূহ’ এই কথাটি যুক্ত করায় জেনারেল শিক্ষকদের আশা-আকাঙ্ক্ষার অপমৃত্যু হয়। প্রতিবাদে মুখরিত হয়ে ওঠে জেনারেল শিক্ষক সমাজ। কিন্তু তাদের কোনো কথায় গুরুত্ব না দিয়ে কর্তৃপক্ষ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় মাদরাসায় কর্মরত জেনারেল শিক্ষদেরকে শতভাগ বঞ্চিত করেছেন। পাশাপাশি এই নীতিমালায় মাদরাসায় গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক পদেও জেনারেল শিক্ষিতদের আবেদনের সুযোগ রাখা হয়নি। এরকম অসঙ্গতিতে ভরা মাদরাসায় জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮।
মাদরাসার আরবি প্রভাষক ও জেনারেল শিক্ষকরা হতাশার মধ্যে রয়েছেন। এই সংকট সমাধানে মাদরাসায় শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের এমপিও নীতিমালা অনুসারে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা পুনর্বহাল করার অনুরোধ জানাই। মাদরাসা শিক্ষার স্বার্থে, শিক্ষার্থীর স্বার্থে শিক্ষকদের ক্ষোভ ও হতাশার অবসান ঘটানো প্রয়োজন। সকল শিক্ষকের প্রাণের আকুতি উপলদ্ধি করে কর্তৃপক্ষ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের এমপিও নীতিমালা অনুসারে সংশোধন করে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নেবার পথ সুগম করবেন। এমনটাই শিক্ষক সমাজের প্রত্যাশা।
লেখক : জহির উদ্দিন হাওলাদার, মহাসচিব, বাংলাদেশ মাদ্রাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন।