মাদরাসা ছাত্রদের ক্ষমতার সিঁড়ি বানাতে চেয়েছিল মামুনুল - দৈনিকশিক্ষা

মাদরাসা ছাত্রদের ক্ষমতার সিঁড়ি বানাতে চেয়েছিল মামুনুল

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করলেও হেফাজতে ইসলামের অনেক নেতার গোপন রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ রয়েছে। তারা রাষ্ট্রক্ষমতারও অংশ হতে চায়। মাদরাসার ছাত্রদের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে সংগঠনটির কোনো কোনো নেতা এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ছক কষেছিলেন। উদ্দেশ্য হাসিলে হাজার হাজার মাদরাসার ছাত্রদের তারা ঘুঁটি হিসেবে কাজে লাগাতে চান। হেফাজতের বিতর্কিত যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন জিজ্ঞাসাবাদে যুক্ত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা। গত বছর মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা নাশকতা ও ভাঙচুরের মামলায় মামুনুল সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। বুধবার (২১ জানুযারি) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাহাদাত হোসেন পরশ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, জানতে চাইলে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, মামুনুল অনেক তথ্য দিয়েছেন। কিছু প্রশ্নের বিষয়ে একেবারে চুপচাপ থাকছেন।

তিনি আরও বলেন, হেফাজতের নেতাকর্মীদের উস্কানি দিতেন মামুনুল। তিনি বলতেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে হেফাজতের সমর্থন ছাড়া কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারবে না। মামুনুলকে পেছন থেকে কারা উস্কানি দিত, দ্রুত তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময় মামুনুল হক ওয়াজে যে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন, তার কয়েকটি একত্র করেন গোয়েন্দারা। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সেগুলো তাকে শোনানো হয়। এসব ওয়াজে উগ্র আচরণের মাধ্যমে ধর্মভীরু মানুষের মধ্যে উন্মাদনা ছড়িয়েছেন মামুনুল। রিমান্ডে তাকে যেসব ভিডিও দেখানো হয় তার মধ্যে ছিল- ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে মুরগিচোর বলা, হাসানুল হক ইনু ও সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই জুতাপেটা করার কথা বলে দেওয়া বক্তব্য। এর মাধ্যমে অনুসারীদের উত্তেজিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন তিনি।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন সময় দেওয়া উস্কানিমূলক বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে মামুনুল বলেন, 'এসব বয়ান প্রতীকী অর্থে রাজনৈতিক। জোশের বশে এমন\হ মন্তব্য করে ফেলেছি। অনুসারীদের চাঙ্গা করতে মাঝেমধ্যে এমন বয়ান দিই।' অরাজনৈতিক সংগঠন হয়েও রাজনৈতিক বয়ান দেওয়া এবং ইসলামে সমর্থন না করলেও অন্যের অনুভূতি ও চরিত্রকে আঘাত করে বিশিষ্টজনকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বয়ান করা নিয়ে প্রশ্ন করলে মামুনুল এলোপাতাড়ি কথা বলেন। তিনি বলেন, 'যখন এসব বয়ান করেছি, তখন হেফাজত নেতা নয়, খেলাফত মজলিসের নেতা হিসেবে করেছি।' তখন গোয়েন্দারা তার বয়ানের ভিডিও দেখিয়ে বলেন, হেফাজতের একাধিক কর্মসূচিতে আপনি এমনটি বলেছেন। মিথ্যা বলছেন- এটা হাতেনাতে ধরা পড়ার পর চুপচাপ থাকেন মামুনুল।\হপুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা বলেছেন, হেফাজতের কর্মসূচি ঘিরে কেন বারবার মাদরাসার ছাত্রদের মাঠে নামিয়ে জ্বালাও-পোড়াওয়ে উস্কানি দেন এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কেন ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন- এসব প্রশ্নে একেবারে চুপ ছিলেন মামুনুল।

জানা গেছে, মোহাম্মদপুর থানার মামলায় বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী এবং ওই দিনের হামলার ভিডিও দেখিয়ে মামুনুলকে প্রশ্ন করা হয়েছে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, মসজিদের সাদপন্থি লোকদের মারধর করা হলো কেন? এর জবাবে মামুনুল বলেছেন, এটি ঠিক হয়নি। মামুনুল ও তার অনুসারীরা মূলত তাবলিগের অন্য গ্রুপ জুবায়েরপন্থি হিসেবে পরিচিত।

চমকপ্রদ তথ্য :গত ১৪ এপ্রিল লালবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হেফাজতের সাবেক প্রচার সম্পাদক মুফতি ফখরুল ইসলামকে। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলনেরও চেয়ারম্যান। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে তিনি। তার জবানবন্দিতে চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে।

২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের 'ঢাকা ঘেরাও' কর্মসূচির আগে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও এক জামায়াত নেতার সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠক হয়। খোকার বাসা ও একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অফিসে ওই বৈঠক হয়। সেখানে হেফাজত নেতাদের টাকা-পয়সা দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়, তাদের ১৩ দফা বাস্তবায়ন না হলে সরকার পতনের আন্দোলন করা হবে। ৫ মের কর্মসূচির আগে ২৮ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে হেফাজত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে গোপন বৈঠক হয়। সেখানে আলোচনা হয়- শাপলা চত্বরে কর্মসূচি স্থায়ী হলে বিএনপি-জামায়াত তাতে যোগ দেবে।

মুফতি ফখরুল আরও বলেন, ৫ মে দুপুর থেকে বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের কর্মীরা রাস্তায় স্বাভাবিক চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। মুফতি ফয়জুল্লাহ ও মাইনুদ্দিন রুহি শাপলা চত্বরে অবস্থানের মূল আয়োজক। ওই দিন বিকেল ৩টার দিকে তার নেতৃত্বে পাঁচ-সাত হাজার লোক নিয়ে ফখরুল শাপলা চত্বরে পৌঁছান। শাপলা চত্বরে গিয়ে তিনি আবদুল্লাহ রব ইউসুফী, জুনায়েদ আল হাবিব, মামুনুল হক, আবু জাফর কাসিমি, ফজলুল করিম কাসিমি, ফয়সাল আহমেদ, এজাহারুল ইসলাম চৌধুরী, হারুন এজাহার, মনির হোসেন কাসিমি, জাবের কাসিমি, হাবিবুল্লাহ নিয়াজী, মজিবুর রহমানমহ আরও অনেককে স্টেজে দেখতে পান। জবানবন্দিতে ৪৩ নেতার নাম উল্লেখ করেছেন তিনি। বাবুনগরী স্টেজে আসেন বাদ মাগরিব। মামুনুল হকসহ সবাই সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। সমাবেশ থেকে হুমকি দেওয়া হয়, যদি তাদের ১৩ দফা দাবি আদায় না হয়, তাহলে সরকার পতনের আন্দোলন করা হবে।

ফখরুল জবানবন্দিতে আরও বলেন, খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে মাইনুদ্দিন রুহি তাকে জানান, এই খরচের ব্যাপারে সাদেক হোসেন খোকার বাসায় ৫ মের আগেই বৈঠক হয়েছে।

পরে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, ২০১৩ সালের ঘটনা নিয়ে কেন এত দিন পরে হেফাজত নেতার বক্তব্য আসছে। ওই সংগঠনের কোনো নেতার সঙ্গে বৈঠক করার প্রশ্নই আসে না। হেফাজত ও আমাদের রাজনীতি পুরোপুরি ভিন্ন।

ছাতকে আরও এক মামলা :মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের ছাতক থানায় গতকাল বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরও একটি মামলা হয়েছে। এদিকে, নারায়ণগঞ্জে নাশকতার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানিয়েছেন সিআইডিপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান।

সিআইডিপ্রধান সাংবাদিকদের বলেন, নারায়ণগঞ্জে তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় প্রাথমিক তদন্তে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সংশ্নিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি। তিনি একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে আছেন। রিমান্ড শেষ হলে তাকে নারায়ণগঞ্জের মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, হেফাজতে ইসলামের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২৩টি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে সিআইডি। প্রাথমিকভাবে নারায়ণগঞ্জে দায়ের করা মামলায় মামুনুল হকের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেও সিআইডি অন্য সব মামলা খতিয়ে দেখছে। যদি অন্য কোনো মামলায়ও তার সম্পৃক্ততা মেলে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সিআইডির একাধিক টিম এ নিয়ে কাজ করছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, সব মামলায় প্রাথমিক তদন্তে তিন ধরনের লোকের সংশ্নিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। একটি গ্রুপ উপস্থিত থেকেছে, অন্য গ্রুপ অনুপস্থিত থাকলেও ইন্ধন দিয়েছে, অপর গ্রুপ দুস্কর্মে সহযোগিতা করেছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম বলা যাচ্ছে না।

দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038259029388428