মাদরাসা শিক্ষকদের দুই সংগঠন মুখোমুখি অবস্থানে | মাদরাসা নিউজ

মাদরাসা শিক্ষকদের দুই সংগঠন মুখোমুখি অবস্থানে

মাদরাসা প্রধান ও কর্মচারী নিয়োগের যোগ্যতা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে মাদরাসা শিক্ষকদের দুই সংগঠন। সম্প্রতি মাদরাসার অধ্যক্ষ, সুপার এবং গ্রন্থাগারিক ও সহ-গ্রন্থাগারিক পদে সাধারণ ধারায় শিক্ষিতদের নিয়োগের দাবি জানিয়েছে মাদরাসার সাধারণ ধারার শিক্ষকদের সংগঠন মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশনের নেতারা।

মাদরাসা প্রধান ও কর্মচারী নিয়োগের যোগ্যতা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে মাদরাসা শিক্ষকদের দুই সংগঠন। সম্প্রতি মাদরাসার অধ্যক্ষ, সুপার এবং গ্রন্থাগারিক ও সহ-গ্রন্থাগারিক পদে সাধারণ ধারায় শিক্ষিতদের নিয়োগের দাবি জানিয়েছে মাদরাসার সাধারণ ধারার শিক্ষকদের সংগঠন মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশনের নেতারা। আর সাধারণ ধারায় শিক্ষিতদের মাদরাসায় এসব পদে নিয়োগের সুযোগ দেয়ার দাবিকে  উদ্ভট, অযৌক্তিক ও অবান্তর বলে মন্তব্য করেছে শিক্ষকদের অপর সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। 

মাদরাসা শিক্ষকদের দুই সংগঠন মুখোমুখি অবস্থানে

সম্প্রতি মাদরাসার সংশোধিত নীতিমালা ও জনবল কাঠামো প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালার কয়েকটি দিকে অসঙ্গতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে মাদরাসার সাধারণ ধারা শিক্ষকদের সংগঠন মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতারা নীতিমালা সংশোধন করে মাদরাসার অধ্যক্ষ সুপার ও লাইব্রেরিয়ান ও সহকারী লাইব্রেরিয়ান নিয়োগের দাবি জানানো হয়। 

সাধারণ ধারার শিক্ষকদের যুক্তি ছিল, তাদের মাদরাসার প্রশাসনিক পদে নিয়োগের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তারা সে সুযোগ চান। আর লাইব্রেরিয়ান পদে সাধারণ ধারার শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ না থাকায় বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। তাই, এসব পদে সব ধারার শিক্ষার্থীদের আবেদনে সুযোগ দেয়ার দাবি জানান তারা। 

এদিকে জেনারেল শিক্ষকদের এ দুই দাবিকে অবান্তর ও ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতারা। তাদের মতে, এদেশের মাদরাসাগুলো আলেম ওলামা, ইসলামী গবেষক ও চিন্তাবিদদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত মাদরাসার প্রশাসনিক জিম্মাদার বা অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সুপার, সহসুপার, প্রধান শিক্ষক ইত্যাদি মাদরাসা ধারায় শিক্ষিত আলেমরাই হয়ে আসছেন।

অপরদিকে সাধারণ ধারার শিক্ষকদের এসব প্রশাসনিক পদে নিয়োগের সুযোগ দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সংগঠনটিন নেতারা।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতাদের দাবি, মাদরাসার লাইব্রেরিয়ান পদে কেবল সাধারণ শিক্ষিত বা ব্যবহারিক ভাষা জ্ঞানসম্পন্ন কর্মী নিয়োগ কিছুতেই যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ ইসলামী শরীয়া, কুরআনিক সায়েন্স, ফেকাহ ইত্যাদি বিষয়ভিত্তিক পারদর্শী লোক ছাড়া মাদরাসার লাইব্রেরিয়ান হতে পারে না। কারণ অনেক বই আছে যেগুলো আরবী ও ফারসি ভাষায় রচিত। 

যদিও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের এ দুই যক্তিকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশনের নেতারা। 

বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন ও মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী বিবৃতিতে বলেন, এদেশের মাদরাসাসমূহ আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ, বুজুর্গানে দীন, ইসলামী গবেষক ও চিন্তাবিদদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তাদের উদ্দেশ্য একটিই- প্রকৃত নায়েবে রাসূল, শরীয়া বিশারদ, ইসলামবিষয়ক বিজ্ঞানী ও ইসলামের সেবক তৈরি করা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত মাদরাসার প্রশাসনিক জিম্মাদার তথা অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সুপার, সহসুপার, প্রধান শিক্ষক ইত্যাদি মাদরাসা শিক্ষিত আলেমরাই হয়ে আসছেন। এমনকি ১৭৮০ সালে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ ২৪০ বছর যাবতই মাদরাসা পরিচালনা ও প্রশাসন ওলামায়ে কেরামের হাতে রয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন কর্তৃক সাধারণ শিক্ষিতদের মাদরাসার দায়িত্বে নিয়োগের দাবি উঠেছে। যা নিঃসন্দেহে মাদরাসা ধ্বংসের একটি হীন চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। ভারতে যেমন অনেক জায়গায় সরাসরি মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, বাংলাদেশে সরাসরি বন্ধ না করে ভেতর থেকে মাদরাসাকে অন্তঃসারশূন্য করে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। অথচ এদেশে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব সাধারণ শিক্ষিতরা যেভাবে পালন করছেন, ঠিক এভাবেই মাদরাসা শিক্ষার প্রশাসনিক দায়িত্ব মাদরাসা শিক্ষিতদের হাতেই থাকা সমীচীন। নেতৃদ্বয় বলেন, সাধারণ শিক্ষিতরা মূলত সাধারণ চাকরি নেয়ার জন্য লেখাপড়া করেছিলেন।

দেশে কর্ম সংস্থান না থাকায় কিংবা তারা কোন উপযুক্ত স্থানে নিযুক্ত হতে না পারায় মাদরাসায় চাকরি নিয়েছেন। এতে তাদের ইসলামী শিক্ষার সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। মাদরাসা ব্যবস্থার প্রতি শুকরিয়া জানানো উচিত। কোনক্রমেই তাদের উচিত হবে না, মাদরাসা শিক্ষার হর্তাকর্তা হওয়ার চেষ্টা করা। কেননা তারা একমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত। অথচ মাদরাসা শিক্ষিতরা বিশেষায়িত ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষিত নাগরিকদের সমপরিমাণ বরং আরো বেশি লেখাপড়া করে সাধারণ শিক্ষার সনদও লাভ করেছেন। বর্তমানে তারা বিশেষ লেখাপড়ার পাশাপাশি মাদরাসার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে আরো বেশি সক্ষম।

জমিয়াত নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন কর্তৃক উত্থাপিত দাবিসমূহের একটি হচ্ছে, মাদরাসার গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে জেনারেল শিক্ষিতদের আবেদনের সুযোগ দান। এটি একটি অযৌক্তিক অবান্তর দাবি। কেননা মাদরাসায় কুরআন হাদীস, উসূল ফেকাহ, বালাগাত, মানতেক, ফারায়েজ, উসুলে তাফসির, উসুলে তাফসির বিভাগের উচ্চতর গবেষণামূলক রেফারেন্স গ্রন্থাদি আরবী ফার্সী ভাষায় রচিত। তাছাড়া আরবী সাহিত্য ও ব্যাকরণ বিভাগের উচ্চতর গবেষণা গ্রন্থসমূহ আরবী ভাষায় রচিত। এসব কিতাব সজ্জিতকরণ, বিন্যাস, অনুসন্ধান, সরবরাহকরণ ইত্যাদিতে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানী গ্রন্থাগারিক প্রয়োজন। সাধারণ শিক্ষিত লোকের পক্ষে একাজটি সম্পাদন করা মোটেও সম্ভব নয়। কেবল ব্যবহারিক আরবী জানা ব্যক্তির পক্ষেও এ পদ শোভা পায় না। তার জন্য মাদরাসা শিক্ষিত হওয়া আবশ্যিক। বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন কর্তৃক এ দাবি একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ বিশেষ। দেশের মাদরাসা শিক্ষার সাথে জড়িত আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ, ইসলামী বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ধর্মপ্রাণ মানুষ এ ধরনের সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নেবে না। আমরা মনে করি, সরকারের সাথে আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ ও তাদের কোটি কোটি ভক্ত অনুসারীর সাথে সরকারের দূরত্ব তৈরির জন্যই একটি মহল এসব অবান্তর চেষ্টা করছে। আমরা সকলের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিব মহোদয়সহ শিক্ষা পরিবারের সকল স্তরের দায়িত্বশীলগণের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করছি যে, মাদরাসা শিক্ষার বাস্তবতা উপলব্ধি করে তারা পরবর্তী সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের এ বিবৃতি নিয়ে জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি জহির উদ্দিন হাওলাদার বৃহস্পতিবার বিকেলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তাদের বিবৃতি অবান্তর ও অযৌক্তিক। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে এর জবাব দেয়ার পরিকল্পনা করছি। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।