দেশে সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক) এক বছরের ব্যবধানে শিক্ষার্থী কমেছে। তবে নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বেড়েছে। একই সময়ে মাদরাসার সংখ্যা সামান্য কমলেও বেড়েছে শিক্ষার্থী সংখ্যা।
দেশের শিক্ষার তথ্য নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ শিক্ষা পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের তথ্য নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্যের সঙ্গে আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের তথ্য পর্যালোচনা করে প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থী বৃদ্ধি ও কম হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ১৮ হাজার ৮৭৪টি। এসব বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে ৮৯ লাখ ৩০ হাজার ২৪৫ জন শিক্ষার্থী। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের তুলনায় শিক্ষার্থী কমেছে ৮৬ হাজার ৫২৪ জন। ওই বছর মোট শিক্ষার্থী ছিল ৯০ লাখ ১৬ হাজার ৭৭৩ জন। অবশ্য স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে মাধ্যমিকে এখন মোট শিক্ষার্থী এক কোটির বেশি।
ব্যানবেইস কেবল শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দেয়। কারণ, বিশ্লেষণ করে না। ফলে কী কারণে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী কমেছে, আর মাদরাসায় বেড়েছে, সে বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন থেকে কিছু জানা যায়নি। তবে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, এখানে করোনার একটি প্রভাব রয়েছে।
গত দুই বছর ছিল করোনাকাল। এই সময়ে পড়াশোনার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীর ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। টানা প্রায় ১৮ মাস পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে সশরীর ক্লাস শুরু হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছিল, করোনা মহামারির মধ্যে গত বছর দেশের অর্ধেকের বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ লাখ ৮১ হাজার শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে ৪৭ হাজারের বেশি ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। আর শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার শিক্ষার্থী। বাকিদের অনুপস্থিতির সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। অধিদপ্তরের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখা দেশের ১১ হাজার ৬৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের তথ্য সংগ্রহ করে ওই তথ্য পেয়েছিলো।
মাদরাসা কমেছে, বেড়েছে শিক্ষার্থী
ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দেদেশে মাদরাসা ছিল ৯ হাজার ২৯১টি। এর মধ্যে মাত্র তিনটি সরকারি। বাকিগুলো বেসরকারি মাদরাসা। দেশের মাদরাসাগুলোতে মোট শিক্ষার্থী ২৬ লাখ ৫৭ হাজার ২৫২ জন। ২০২০ খ্র্রিষ্টাব্দে মাদরাসায় শিক্ষার্থী ছিল ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ৪৩৯ জন, আর মোট মাদরাসা ছিল ৯ হাজার ৩০৫টি। এক বছরের ব্যবধানে এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে। এই তথ্য বলছে, মাদরাসা কমলেও বেড়েছে শিক্ষার্থী।
অবশ্য ব্যানবেইসের প্রতিবেদনে কেবল সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রাথমিকোত্তর মাদরাসাগুলোর তথ্য দেয়া হয়েছে। যেখানে দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল স্তরে পড়ানো হয়। যা যথাক্রমে সাধারণ ধারার মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, ডিগ্রি ও স্নাতকোত্তরের সমতুল্য।
কারিগরিতেও বেড়েছে শিক্ষার্থী
এদিকে কারিগরি ও ভোকেশনালেও (স্বতন্ত্র) শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান-দুটিই বেড়েছে। দেশে এখন ২ হাজার ৪৮৯টি কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ৭ লাখ ৬২ হাজারের বেশি। যা ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ছিল প্রায় ৭ লাখ ১৯ হাজার। তখন প্রতিষ্ঠান ছিল ২ হাজার ৪৭৪টি।
ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেড়েছে। এখন দেশে এই দুই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১৬০টি। যা ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ছিল ১৫১টি।
সব মিলিয়ে এখন প্রাথমিকোত্তর বিভিন্ন স্তর মিলিয়ে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ৯৭ লাখ ২১ হাজারের বেশি; যা ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ছিল ১ কোটি ৯৪ লাখের বেশি। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি অনুযায়ী, শুধু প্রাথমিকে মোট শিক্ষার্থী ২ কোটি ৯০ হাজার ৫৭ জন। করোনাকালে এক বছরের ব্যবধানে প্রাথমিকে মোট শিক্ষার্থী কমেছে সাড়ে ১৪ লাখের বেশি।