মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা - দৈনিকশিক্ষা

মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

শিক্ষক সংকটে জর্জরিত প্রাথমিক শিক্ষা। এ সংকট অনেকটা বড় বড় ট্রাকের পেট্রোলের পাত্রে ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ লেখার মত। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিবেদিত শিক্ষক আজ খুব প্রয়োজন। সভ্যতার ভিত্তি শিক্ষা। সেটি সাধনার বিষয়। শিক্ষা আর শিক্ষাদান এক নয়। শিক্ষকতা একই সঙ্গে পেশা ও ব্রত। পেশা অর্থ ঠিক জীবিকা নয়, পেশাদারি। অর্থাৎ মনপ্রাণ, সাধ্য, সামর্থ্য উজাড় করে লক্ষ্য সাধনের চেষ্টা। একটি নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য বিশেষ দক্ষতা উজাড় করে দেয়া। মানুষ তার শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে মৌলিক আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটি অর্জন করে থাকে বাবা-মা ও প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছ থেকে। প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষা, জ্ঞান, নৈতিকতা, মূল্যবোধ বিশাল সমৃদ্ধ ইমারত। জাতি গঠনে মূল ব্যক্তি প্রাথমিক শিক্ষক। প্রাথমিক শিক্ষক পরিবারের সদস্যরা শিক্ষকের আদর্শে বেড়ে উঠে। প্রাথমিকে শিক্ষকের চাল-চলন, আচার-ব্যবহার নিয়ে তাদের সন্তানরা বিকশিত হয়। প্রাথমিকের শিক্ষকের পরিবারের সন্তানরা দেখে থাকে, তাদের পিতা-মাতার সময়নিষ্ঠ, কর্তব্যের প্রতি ভালবাসা ও শিশুদের প্রতি অগাধ প্রেম, বাবা-মায়ের সহচার্যে থেকে স্বল্প সময়ে রাত জেগে পরীক্ষা খাতা দেখাসহ আনুসাঙ্গিক কাজ করতে। এ দেখতে দেখতে প্রাথমিকের সন্তানেরা পুরোপুরি না হলে অর্ধ প্রাথমিক শিক্ষক হয়ে উঠে।

১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য ছিল এক শুভদিন। আগেরদিন রাতে ঢাকা শহরে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছিল। সেদিন হয়েছিল বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মহাসম্মেলন ঢাকা ওসমানী উদ্যানে। বিশাল উদ্যানে বৃষ্টির কাঁদা পানি। লক্ষাধিক শিক্ষকে ভরে ছিল ওসমানী উদ্যান। প্রধান অতিথির ভাষণে প্রেসিডেন্ট এরশাদ শিক্ষকের উপস্থিতি ও কাঁদা পানিতে লক্ষাধিক শিক্ষকের অবস্থান দেখে অভিভূত হয়ে পড়েন। আবেগময় কন্ঠে তিনি  বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির উদ্দেশ্যে বললেন, আপনাদের সভাপতি অধ্যাপক আযাদ আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন সমাবেশ আর মহাসমাবেশ কাকে বলে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আযাদ প্রাথমিক শিক্ষকদের পোষ্য কোটার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পেশাজীবীদের মধ্যে একমাত্র সৎ, চরিত্রবান প্রাথমিক শিক্ষক। তারা শুধু আগামী প্রজন্মের শিশুদের মানুষ গড়ার কারিগর নয়, সমাজ গড়ারও কাজে আত্মনিয়োগ করে থাকে। 
গ্রামে ধনী, দরিদ্র অধিকাংশ জনগণ শিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে তাদের বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। প্রাথমিক শিক্ষকদের সহচার্যে থেকে অভিজ্ঞতা গ্রহণ ও পেশার শ্রদ্ধা একমাত্র প্রাথমিক শিক্ষকদের পরিবারের রক্তে বিদ্যমান থাকে। এ দৃষ্টিকোন প্রাথমিক শিক্ষকদের সন্তানদের পোষ্যের কোটা ২০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। প্রাথমিকে পোষ্য কোটার সাথে অন্যান্য কোটার বৈশিষ্ট আলাদা। এ কোটা বহাল থাকলে অভিজ্ঞতা ও প্রাথমিক শিক্ষকদের শ্রদ্ধাশীল সন্তানরা প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি আন্তরিক হয় কাজ করবে। ফলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

প্রাথমিকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও পোষ্য কোটা যথাযথ পূরণ হচ্ছে না। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের পর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয়। মৌখিক পরীক্ষায় নানা কারসাজিতে লিখিত পরীক্ষা পোষ্য কোটায় উত্তীর্ণদের বাদ দিয়ে সাধারণ কোটা থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হতাশাব্যাঞ্জক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। শিক্ষক নিয়োগে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের যাদের প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল বয়সের শেষ হওয়ার কারণে বর্তমান নিয়োগ পরীক্ষায় তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ নেয়া অযৌক্তিক। কারণ সংশ্লিষ্টদের সময়ক্ষেপণের কারণে তাদের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। তার বাসনা ভালভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের সকল জনগণের শিক্ষক হিসেবে অধিষ্ঠিত আছেন। অথচ প্রাথমিকের শিক্ষক হওয়ার জন্য যারা বর্তমানে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তারা কেন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও মৌখিক পরীক্ষায় কিছুটা নয়-ছয় হওয়ার কারণে অনেক যোগ্য শিক্ষকের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। পুল নীতিমালা-২০১৪ এর রিট জটিলতার কারণে দীর্ঘ চার বছর নিয়োগ বন্ধ ছিল। যার কারণে অনেকেরই বয়স শেষ হয়ে যায়। এর জন্য তারা কোনভাবে দায়ী ছিল না। তাছাড়া সেশন জটের কারণে চার বছরের কোর্স শেষ হতে তাদের ছয় থেকে সাত বছর লেগে গেছে। তারা একটি মাত্র নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছে।

সাবেক মহাপরিচালক ফসিউল্লাহ সাহেবের মতে ভাইভায় অংশগ্রহণ করলেই একজন ছাত্র ২০ নম্বরের মধ্যে ১৫ নম্বর পায়। তার মানে লিখিত পরীক্ষয় উত্তীর্ণ হয়েছে, তাদের যোগ্য বলে আমি মনে করি। যেহেতু তারা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তাদের বিষয়টি কেন বিবেচনা করা হবে না বিষয়টি বোধগম্য নয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের মতো প্রাথমিকের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে যারা বিভোর তাদের বয়সের বিষয়টি বিবেচনা করে হলেও তাদের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা হোক। শিক্ষক সংকট রেখেও পোষ্য কোটা বাদ দিয়ে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের স্বপ্ন অবাস্তব। বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করছি। 

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।

আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035820007324219