মানসিক স্বাস্থ্য একটি সর্বজনীন মানবাধিকার - দৈনিকশিক্ষা

মানসিক স্বাস্থ্য একটি সর্বজনীন মানবাধিকার

মো. আমিনুল হক |

আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। প্রতিবছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয় সারা বিশ্বে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মানসিক স্বাস্থ্য একটি সর্বজনীন মানবাধিকার’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ‘স্বাস্থ্য হলো এমন এক অবস্থা যা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতাকে বোঝায়’। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, একজন ব্যক্তি শারীরিকভাবে সুস্থ হলেই সম্পূর্ণ সুস্থ নয়, তার মন মানসিকতা যেমন ইতিবাচক/সুস্থ হতে হবে তেমনি সামাজিকভাবেও হতে হবে গ্রহণযোগ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ‘মানসিক স্বাস্থ্য বলতে এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যেখানে ব্যক্তি তার নিজস্ব ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পারে, জীবনের নানা পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে, তার কার্যক্রমগুলো উৎপাদনমুখী ও কার্যকরী হয় এবং সে তার সমাজেও অবদান রাখতে সক্ষম হয়।’ 

আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলো হলো খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনোদন। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের অবস্থান পঞ্চম। আর স্বাস্থ্য বলতে কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যকে বোঝায় না মানসিক স্বাস্থ্যকে বোঝানো হয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আমাদেরকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে অনেকটাই সচেতন করেছে। এজন্যই হয়তো মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টিকে সর্বজনীন মানবাধিকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, ‘মানুষ তার জীবনব্যাপী যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগের দাবিদার হয় এবং যা ব্যতীত তার ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয় না, সেগুলোই হলো মানবাধিকার’ মানবাধিকার ভোগের ক্ষেত্রে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পরুষ, ধনী-গরিব যে ধরনের নাগরিকই হোক না কেনো, তার রাজনৈতিক মতামত ও পদমর্যাদা যাই হোক না কেনো, যে যে দেশেরই নাগরিক হোক না কেনো অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগের ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য হবে না। 

শারীরিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে রোগ জীবানু প্রবেশ করে রোগের সৃষ্টি করে। কিন্তু মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, অভিজ্ঞতা, পরিবার, সমাজ ও পরিবেশের নানাবিধ উপাদান প্রভাব বিস্তার করে। শিশুদের উল্লেখযোগ্য মানসিক সমস্যা হলো অতিরিক্ত জেদ ধরা, অবাধ্যতা, গালি দেয়া, চুরি করা, অন্যকে মারধর করা, স্কুলে না যাওয়া, পড়াশোনার সময় নানা ধরনের বাহানা করা। বয়স্কদের উল্লেখযোগ্য মানসিক সমস্যা হলো ভয়, দুঃশ্চিন্তা, বিষন্নতা, সামাজিক ভীতি খুঁতখুঁতে ভাব অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ সমস্যা, অনিদ্রা, মাদকাশক্তি, যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়া, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি। 

আত্মহত্যার প্রধান কারণ মানসিক সমস্যা। বহু শিক্ষার্থী পরীক্ষার ফলাফলে আশানুরূপ গ্রেড অর্জন করতে না পেরে আত্মহত্যা করে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর চল্লিশ লাখ টিন এজার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এবং প্রায় এক লাখ সফল হন। ডব্লিউএইচও এর প্রতিবেদন (২০১৪) অনুযায়ী উন্নত বিশ্বে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি কিন্তু আমাদের দেশে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। এর কারণ হলো-আর্থ সামাজিক অবস্থা, ইভটিজিং, নির্যাতন, যৌতুক, সম্ভ্রমহানি, অবমাননা ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে এদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই অধিক। 

মাদকাশক্তির অন্যতম কারণ হলো মানসিক সমস্যা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, মাদক নির্ভরশীলতা ও মানসিক রোগ প্রায়ই একসঙ্গে ঘটে থাকে। ব্যক্তির আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা অর্জনের কৌতুহল, ঝুঁকি নেয়ার প্রবণতা, হতাশা, উদ্বেগ, যৌনশক্তি বৃদ্ধি, চাপ মোকাবিলা করতে না পারা, প্রত্যাখ্যান করতে না পারা, দৈহিক যন্ত্রণা লাঘব, বিষন্নতা প্রভৃতি কারণে মাদক গ্রহণ করে। মাদকের প্রভাবে মস্তিষ্কের রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন হয়। এর প্রভাবে মস্তিষ্কের আনন্দ আর প্রতিদান পুরস্কার পাওয়ার ব্যবস্থা ধ্বংস করে। ফলে মস্তিষ্ক স্বাভাবিক যে সকল কারণে পুলকিত হওয়ার কথা তার থেকে মাদক গ্রহণে অধিক পুলকিত হয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক আনন্দদায়ক কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে এবং নিষিদ্ধকর্মে আনন্দ পেতে থাকে। এভাবে সামাজিকভাবে তিনি একা হয়ে পড়েন, বিষণ্ন বোধ করেন। পরবর্তীকালে তিনি ভালো কাজ করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।

মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তি ইতিবাচক কাজে আনন্দ পান। হতাশাকে মেনে নিয়ে তা জয় করা চেষ্টা অব্যাহত রাখেন, নিজের অক্ষমতাকে মেনে নেন, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, জীবনকে অর্থপূর্ণ মনে করেন, আত্মবিশ্বসী ও সামাজিক হয়, অন্য ব্যক্তির সঙ্গে মিশতে পারেন, অন্যের মঙ্গল কামনা করেন। এ ছাড়া মাদক গ্রহণ করেন না, মামলায় জড়িয়ে পড়েন না, একা থাকেন না, যৌন বিকৃতি নেই, আত্মহত্যার চেষ্টা করেন না, প্রযুক্তিগত সুবিধার ইতিবাচক প্রয়োগ করেন, পিতা-মাতা, শিক্ষক, প্রতিবেশী ও সমাজের মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য হন, সময়মতো খাবার গ্রহণ করে এবং রাতে নিয়মিত ঘুমিয়ে থাকেন।

মানসিক সুস্থতা ব্যতীত একজন মানুষ সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেন না। ফলে তিনি তার দায়িত্ব-কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে পারেন না। তাই শারীরিক স্বাস্থ্যের ন্যায় মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র গুরুত্ব দিলে ‘মানসিক স্বাস্থ্য একটি সর্বজনীন মানবাধিকার’ এই প্রতিপাদ্য সফল হবে বলে আশা করা যায়। 

লেখক: অধ্যক্ষ, মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজ

 

সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052299499511719