মানুষরূপী পঙ্গপাল বনাম ছাত্রসমাজ - দৈনিকশিক্ষা

মানুষরূপী পঙ্গপাল বনাম ছাত্রসমাজ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রাণঘাতী মহামারি করোনার ছোবলে তাবত্ দুনিয়ায় মানব সভ্যতায় ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। অদৃশ্য এই ঘাতক ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়লাভে নিরলস কাজ করছেন তামাম পৃথিবীর নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। একবিংশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক উত্কর্ষের যুগেও অসহায় মানুষ। কিন্তু তবুও ঝাপসা চোখে আলোর ঝলকানির প্রত্যাশায় বিশ্ববাসী। মুক্ত পৃথিবীর আলো-বাতাসের স্বাদ আস্বাদনে প্রহরের প্রতীক্ষায় আজ সবাই। কিছুটা হলেও সুখের কথা, বৈশ্বিক ও দেশীয় থমকে যাওয়া জীবনে গতি সঞ্চরণে আমার দেশের তরুণ ও ছাত্রসমাজ হাত গুটিয়ে বসে নেই। মাঠে নেমেছে তারা। মানবিক মূল্যবোধ যে বাংলাদেশে এখনো বিদ্যমান তা আমরা দেখলাম আবারও একটিবার। সোমবার (৪ মে) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, তরুণ এই ছাত্রসমাজ দেখাতে সক্ষম হলো কীভাবে এই মহামারিতে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়, মানুষের জন্য কাজ করতে হয়, উত্পাদনের অচল চাকা ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও সচল করা যায়। মহত্ এই অগ্রযাত্রায় দেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও ছাত্রসংগঠনগুলো অসহায় ও মেহনতি কৃষক ও দিনমজুরের কাতারে এসে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে পথচলা শুরু করল। অন্ধকারের পথ মাড়িয়ে ছাত্রসমাজের গৌরবময় ইতিহাসের রোমন্থন শুরু হলো। কিন্তু কষ্টের কথা, ঠিক এ সময় কিছু মানুষরূপী পঙ্গপাল ও হুতুম প্যাঁচারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে ত্রাণের নামে সেলফিবাজি, চটকদারি বিজ্ঞাপন, মানুষের সামনে হাতেম তাই সাজার মহড়া, ফটোসেশনের মচ্ছব ও কৃষকের কাঁচা ধানে মই দিয়ে ঘটনার মোড় পরিবর্তন করে দিল। ফিকে হয়ে গেল অগ্রযাত্রার সোনালি গল্প। আলাপচারিতা আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হলো নেতিবাচক মন্তব্য। আবারও সেই অবিশ্বাস আর আস্থাহীনতা। কালো মেঘে ঢেকে গেল আলোর ঝলকানি।

সাম্প্রতিক পরিবর্তিত পৃথিবীর চরিত্র কেমন হতে পারে সেটার সঠিক কোনো রূপরেখা দাঁড় করানো হয়তো অসম্ভব। মেরুদণ্ড বেঁকিয়ে যাওয়া শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো আবারও ঘুরে দাঁড়াতে নতুনভাবে রূপরেখা প্রণয়ন করছেন। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিও এদিক থেকে পিছিয়ে নেই। সংকটকালীন অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় জিডিপির ২.৫২ শতাংশ, পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণাসহ রাষ্ট্রীয় নানা কার্যকরি পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু হতাশার কথা হলো এই রূপরেখা অনুযায়ীও যদি আমরা এই সম্পদগুলোর সুষম বণ্টন নীতি অনুসরণ করতাম হয়তো ঘটে যাওয়া কিছু পরিস্থিতি নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য কেউ করত না। আলোর মশালধারী ভদ্র পল্লির মশাইরা আলো বিলানোর পরিবর্তে আগুন দিয়ে ঘর পোড়ানোর গল্পের বিষয়গুলো জাতির সামনে আসত না। ত্রাণের চাল চোরের কবজায়, ভোগ্যপণ্য খাটের তলায়, এমন বিষয়গুলো গণমাধ্যমে প্রচারিত হতো না।

সত্যিকার অর্থে সংকটপূর্ণ মহাদুর্যোগময় এই মুহূর্তেও যারা এমন ঘৃণ্য কাজে অংশ নিতে পারে তারা যে দেশটাও বেচে দেবে এতে সন্দেহ নেই। কথায় আছে কুইনিন জ্বর সারাবে বটে কিন্তু কুইনিন সারাবে কে! এই বিষয়টি আর বোঝার বাকি নেই যে, দেশে সত্ মানুষের যথেষ্ট অভাব আছে। বর্তমান সরকারের মহত্ অনেক উদ্যোগই ভেস্তে যাচ্ছে সুযোগসন্ধানী রূপ পরিবর্তনকারী কিছু কিটের কারণে। প্রধানমন্ত্রীর একার সদিচ্ছায় সবকিছুর পরিবর্তন হওয়া খুব সোজা ব্যাপার নয়। রাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে শুদ্ধি অভিযান ছিল সেটি হয়তো আর কিছুটা সময় স্থায়ী হলে খারাপ হতো না। ওদের বধ না করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে গেলে এমনভাবে বরাবরই হোঁচট খেতে হবে সরকারকে।

এই তরুণ ছাত্রসমাজ যখনই কোনো ভালো কাজ শুরু করবে তখনই কিছু পঙ্গপালের তেলেসমাতিতে ঘটনার মোড় পরিবর্তন হওয়াটা নতুন কিছু নয়। শেষ ফলাফল ম্যাসাকার। এসব খোলস পালটানো, লোক দেখানো মানুষকে ডিঙিয়ে তরুণ সমাজ এগোবে কীভাবে? এই গুণধররা নিজেরাও কাজ করবে না, যাদের কাজের মানসিকতা আছে তাদেরও কাজ করতে দেবে না। হিংসা হয়েছিল ওদের। ছাত্রসমাজ এত এত ভালো কাজ করছে আমাদের কিছু তো করতে হবে। কিন্তু ছাগল দিয়ে কি আর হালচাষ হয়? প্রযুক্তির উত্কর্ষের যুগে সবই হাতেনাতে ধরা খায়। ভালো কাজ করার ইচ্ছে থাকলে কাঁচা ধান কেটে নষ্ট করা কেন? করোনাকালের এই সময় যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে বেমালুম সবাই ভুলে গেল? সাংবাদিক, প্রশাসন নিয়ে ফটোসেশনের কি খুবই দরকার? খেতের ভেতর নেমে ধান নষ্ট করার দায়ভার কে নেবে? থামুন এবার। বহুত হয়েছে। যারা কাজ করতে চায় ও পারে ওদের করতে দিন।

পৃথিবীর ইতিহাস থেকে আমরা অনুমান করতে পারি মহামারির কারণে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থেকেছে। এতে বিচলিত হলে সেটাতে সফলতা কোথায়? আজকের এই তরুণ ছাত্রসমাজকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশের অর্থনীতি ও প্রগতির চাকা আমাদেরই সচল করতে হবে। কৃষক, রিকশাওয়ালা, মেহনতি মানুষের ট্যাক্সের টাকায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। দেশের কাছে আমাদের অনেক দায়বদ্ধতা আছে। সরকারঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশ গড়তে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আমরা যারা মফস্সল এলাকায় আছি আমাদের লাঙল ধরতে হবে। অন্ধকার অমানিশার ঘোর কাটিয়ে সোনার বাংলার প্রকৃত প্রতিচ্ছবি আমাদের দিয়ে সূচিত হবে এই কামনা।

লেখক : কে এম মাহ্ফুজুর রহমান মিশু, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ, কুষ্টিয়া।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.012553930282593