মামলা হয়নি স্কুলছাত্রী জান্নাতিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় - দৈনিকশিক্ষা

মামলা হয়নি স্কুলছাত্রী জান্নাতিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায়

নরসিংদী প্রতিনিধি |

নরসিংদীর হাজিপুরে দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার পৌনে দুই মাস পেরুলেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি। আদালতে মামলা দায়ের করলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি পুলিশ ব্যুরো-অব-ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। থানায় মামলা রুজু না হওয়ায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে স্কুলছাত্রীর হত্যাকারীরা। মাদক ব্যবসায়ী অব্যাহত হুমকির মুখে ভয়ে ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ভুক্তভোগীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গাফিলতির কারণে বিনা বিচারে ধুঁকছে আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহত স্কুলছাত্রীর পরিবার।

অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এখনও রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় জান্নাতির পরিবার। অভিযুক্তদের বিচার ও গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্চার নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী। মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়ায় গত ২১ এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় নরসিংদীর হাজিপুরের দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রী জান্নাতি আক্তারের (১৬) গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় পাষণ্ড স্বামী শিপলু ও শাশুড়ি ও ননদ। দীর্ঘ ৪০ দিন দগ্ধ যন্ত্রণায় কাতরানোর পর অবশেষে চলে যায় না ফেরার দেশে।

পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১ বছর আগে নরসিংদী সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের শরীফুল ইসলাম খানের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে জান্নাতি আক্তার (১৬) সঙ্গে পার্শ্ববর্তী খাচের চর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়ার প্রেম হয়। কিছুদিন পরই পরিবারের অমতে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর আসল রূপ বেরিয়ে আসে। স্ত্রী জান্নাতিকে পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে মাদক ব্যবসায়ী শাশুড়ি শান্তি বেগম ও স্বামী শিপলু তাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এতে রাজি হয়নি জান্নাতি। তাই তার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। এর পর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করা হয়। দারিদ্র্যতার কারণে যৌতুকের দাবি মিটাতে পারেনি। ফলে জান্নাতির ওপর নেমে আসে কঠোর নির্যাতন। যৌতুকের টাকা না দেয়াসহ মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়া চলতি বছরের ২১ এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামী শিপলু ও শাশুড়ি শান্তি বেগম ও তার মেয়ে ফাল্গুনি বেগম জান্নাতির শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পরে এলাকাবাসীর চাপে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। দীর্ঘ ৪০ দিন মৃত্যু যন্ত্রণার পর গত ৩০ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহত জান্নাতির বাবা শরীফুল ইসলাম খান বলেন, মেয়ের শরীরে আগুন দেয়ার পর পরই থানায় মামলা করতে যাই। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে আদালতে মামলা দায়ের করি। আদালত থেকে পিবিআই পুলিশকে তদন্ত দেয়া হলেও তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেননি। এদিকে হত্যাকারীরা অব্যাহতভাবে আমাদের পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করছে। মামলা করলে আমার ছোট মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে। একই সঙ্গে আমাদের সবাইকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি দিচ্ছে।

ঢাকায় ফেরি করে চা বিক্রি করেন নিহত জান্নাতির বাবা শরীফুল ইসলাম খান। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে হাজিপুর গ্রামের একটি কুটিরে বসবাস করছেন। মুক্তিযোদ্ধা পিতার ভাতা ও চা বিক্রির টাকায় চলে তাদের সংসার।

নিহত জান্নাতির মা হাজেরা বেগম বলেন, মেয়েটাকে ফুসলিয়ে তারা তুলে নিয়ে যায়। সে যখন তার ভুল বুঝতে পেরেছে, তখন তাদের বাড়ি থেকে চলে এসেছে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন জোর করে তাকে নিয়ে যায়। আমরা গরিব তাই বাধা দিয়ে রাখতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, জান্নাতির শ্বশুরবাড়ির লোকজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাই তারা পুলিশ ও আইনকেও তোয়াক্কা করে না। তাদের বিরুদ্ধে ১০/১২টি মামলা আছে। রয়েছে পুলিশের সঙ্গে সখ্যতা। তাই আমাদের মামলাও নেয় না।

মৃত্যুর পূর্বে নিহত জান্নাতিকে আগুন দিয়ে পোড়ানোর বর্ণনা দিয়ে গেছেন খোদ জান্নাতি নিজেই। তার আর্তনাদে কেঁপে উঠেছিল পুরো হাসপাতাল চত্বর। পাশের বেডে থাকা এক রোগী ভিডিও ধারণ করেছে তার করুণ আর্তনাদ। সেখানে দেখা গেছে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিল সে। তীব্র ব্যথা সইতে না পেরে দরিদ্র পিতার কাছে ব্যথানাশক একটি ইনজেকশন দেয়ার দাবি জানায়। সেখানে সে বলছিল তোমার কাছে জীবনে আর কিছুই চাইব না বাবা। একটি ব্যথানাশক ওষুধ দাও। কিন্তু দরিদ্র পিতা ওষুধ কিনে দিতে পারেনি। ভুল বুঝতে পেরে নিজের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমাও চেয়ে গেছেন জান্নাতি।

জান্নাতির পিতা বলেন, একটি ইনজেকশনের দাম সাত হাজার টাকা। আরেকটির দাম ৩৮শ টাকা। আমি দরিদ্র চা বিক্রেতা। এত টাকা পাবো কোথায়? তাই মেয়ের শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে পারিনি। ধার-কর্জ ও ঋণ নিয়ে যত দিন ওষুধ দিতে পেরেছি ততদিন বেঁচে ছিল। এর পর আর মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি। এখন শুধু একটাই দাবি। হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. ফয়সাল সরকার বলেন, নরসিংদীতে ফেনীর নুসরাতের মতো আরও একটি ঘটনার জন্ম নিয়েছে। চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটলেও থানা পুলিশ মামলা নেয়নি। বাধ্য হয়েই আদালতের দারস্থ হয়েছি। আদালত ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বললেও পিবিআই পুলিশ তা দেয়নি। তাই মামলার কর্যক্রম বিলম্ব হচ্ছে। আসামিও গ্রেফতার হচ্ছে না।

নিহত জান্নাতির বীর মুক্তিযোদ্ধা দাদা সিরাজুল ইসলাম খান বলেন, জীবন দিয়ে মাদককে না করে গেছেন আগুনে দগ্ধ জান্নাতি। প্রেমের টানে ঘর ছাড়লেও যৌতুক ও মাদক ব্যবসার কাছে নতি স্বীকার করেননি। শ্বশুরবাড়ির কঠোর নির্যাতন সইতে সইতে ভুলের মাসুল দিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মাদক ব্যবসায়ী স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কঠোর বিচার চাই। জান্নাতির মতো করুণ পরিণতি যেন কারও না হয়।

দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003680944442749