মার্চে মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা - দৈনিকশিক্ষা

মার্চে মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিলম্বিত মেডিক্যাল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা মার্চ মাসে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ।

কর্মকর্তারা বলছেন, সব ঠিক থাকলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত করে তারা হয়ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারবেন।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর বুধবার বলেন, “ভর্তি পরীক্ষা নেব- এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। এটা মার্চের শুরুর দিকে হতে পারে। কীভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা পরিকল্পনা সাজাচ্ছি।”

অন্যবছর ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। সেই ফলাফল প্রকাশের পর মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়।

সাধারণত অক্টোবরের মধ্যেই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশ করা হয়। ১০ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন শেষে পাঠদান শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এবার মহামারীর কারণে সবকিছুই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

বছরের শেষভাগে এসে জানানো হয়, মহামারীর মধ্যে এ বছর আর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এইচএসসি ও সমমানের ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর মূল্যায়ন করা হবে জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে।

স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি শুরুর জন্য ডিসেম্বরের মধ্যেই এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এর আগে জানিয়েছিলেন।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, এইচএসসির মূল্যায়ন ফলাফল হাতে পেলে তারা মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে তার আগেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে।

“আমরা ফলাফলের অপেক্ষা করছি। হয়তো তাড়াতাড়িই রেজাল্ট দিয়ে দিবে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এ ব্যাপারে অফিসিয়ালি সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।”


কীভাবে এ ভর্তি পরীক্ষা হকে জানতে চাইলে এনায়েত হোসেন বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা চিন্তা করছি, পরীক্ষা আগের নিয়মে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার, আমরা তা করব। আমরা এখনও ফাইনাল করিনি। মার্চের শুরুর দিকে চিন্তা করছি। ফাইনাল করে আপনাদের জানিয়ে দেব।”

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ৭২ হাজার ২২৮ জন শিক্ষার্থী মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। আর ডেন্টলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল ২৫ হাজার ১১৬ জন।

এ বছর দেশের ৩৬টি সরকারি ও ৭০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১০ হাজার ৬৯০ জন শিক্ষার্থী এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতে পারেন।

আর সরকারি-বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ এবং মেডিকেল কলেজ সংযুক্ত ডেন্টাল ইউনিট মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৯৩৭ জন শিক্ষার্থী বিডিএস কোর্সে ভর্তি হতে পারেন।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম আহসান হাবিব জানান, মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানেই পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

“এখনও আমরা ফেইস টু ফেইস যে পরীক্ষার কথা চিন্তা করছি, মানে ফিজিক্যালি, এটা মোটামুটি চূড়ান্ত। ডিসেম্বরে বা জানুয়ারিতে শীতের প্রকোপের সময় পরীক্ষা না নেওয়ার একটা সিদ্ধান্ত আছে। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য শুক্রবার প্রয়োজন হয়। আমরা হিসাব করে দেখেছি, যে মার্চ মাসের ৫ তারিখ শুক্রবার পরীক্ষাটা নেওয়া যায়।”

গত বছর সারাদেশে ১৯টি কেন্দ্রের আওতায় ৩২টি ভেন্যুতে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। মহামারীর কারণে শিক্ষার্থীদের দূরত্ব রেখে বসাতে গেলে এ বছর ভেন্যু বাড়াতে হবে।

অধ্যাপক হাবিব বলেন, “একেকটি কেন্দ্রের আওতায় অনেকগুলো ভেন্যু থাকবে। যেখানে আগে দুটি থাকত, সেখানে চারটি হবে।”


ভর্তিচ্ছুরা দুশ্চিন্তায়

মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী, মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তির আবেদন করার জন্য বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় মোট জিপিএ হতে হয় কমপক্ষে ৯।

আদিবাসী ও পার্বত্য জেলার প্রার্থীদের ক্ষেত্রে মোট জিপিএ কমপক্ষে ৮ পয়েন্ট হতে হয়। তবে এককভাবে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫ এর কম হলে তা গ্রহণযোগ্য নয়।

এসএসসি এবং এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় অবশ্যই পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান থাকতে হবে। জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫ থাকতে হবে।

অন্যবছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফলের অপেক্ষার মধ্যেই স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন; সে কারণে উদ্বেগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। 

হুসাইন আরমান নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, “কীভাবে পরীক্ষা হবে এখন পর্যন্ত আমাদের জানা নেই। কখন পরীক্ষা হবে তাও ঠিক নেই। এই করোনাকালে এমনিতেই অনেক সমস্যার মধ্যে আছি। ঠিকমত শিক্ষকদের সহায়তা নিতে পারি না। হঠাৎ করে পরীক্ষার তারিখ দিয়ে দিলে অনেক ঝামেলায় পড়ব। কোন পদ্ধতিতে, কোন সময়ে পরীক্ষা হবে সেটা আগে থেকে জানালে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারব।”

নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার উজিলাব গ্রামের নূরে জান্নাত ফাতেমা ভৈরব রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী। তিনিও মেডিকেলে ভর্তি হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে এসেছেন।

তিনি বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পারায় প্রস্তুতিতে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। ফলে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা রয়েছে তার।

“হাতে-কলমে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারিনি। এ কারণে কিছুটা পিছিয়ে আছি। এখন ভর্তি পরীক্ষার দেরি হলে প্রস্তুতিতেও তার প্রভাব পড়বে। সেকেন্ড টাইম যারা পরীক্ষা দেবে, তাদের ভালো করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।”

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038619041442871