মা হলো চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী, সন্তানের নাম ‘অত্যাচার’ - দৈনিকশিক্ষা

মা হলো চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী, সন্তানের নাম ‘অত্যাচার’

গাজীপুর প্রতিনিধি |

পাঁচ মাস আগে এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের এক যুবকের যৌন লালসার শিকার হয়ে কিশোরী মায়ের পেটে জন্ম হয়েছিল কোমল একটি শিশুর। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকেই কিশোরী ও তার স্বজনরা শিশুটির পিতৃপরিচয়ের দাবিতে বিচার চেয়ে ঘুরেছে সবার দ্বারে দ্বারে। কিন্তু বিচারের পরিবর্তে তাদের ওপর চলছে নানা ধরনের মানসিক ও সামাজিক অত্যাচার। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই শিশুটির নাম রেখেছে ‘অত্যাচার’।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার গিলারচালা গ্রামে কিশোরী মা ও তার শিশু সন্তানের ওপর অত্যাচার এমনভাবে ভর করেছে যে প্রথম বার ধর্ষণে কিশোরীর শিশু জন্ম হওয়ার পর, ফের ধর্ষণের শিকার হয়েছে কিশোরী মা। মাকে ধর্ষণের পাশাপাশি শিশু সন্তানটির ওপরও করা হয়েছে শারীরিক নির্যাতন। এ ঘটনায় ৭ মে কিশোরী মা ও তার শিশু শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়।

কিশোরী ও তার স্বজনেরা জানান, পৌর এলাকার গিলারচালা গ্রামের হাজী আব্দুল মান্নানের বাড়িতে তারা কিশোরীকে নিয়ে সপরিবারে ভাড়া থাকতেন। কিশোরীটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

গত বছর কিশোরীকে ধর্ষণ করে বাড়ির মালিকের ছেলে জহিরুল ইসলাম। এতে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়। এ ঘটনা স্থানীয়ভাবে প্রকাশ পেলে কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় জহিরুলকে অভিযুক্ত করে গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। গ্রেফতার হয় অভিযুক্ত জহিরুল। একপর্যায়ে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়।

এদিকে, জামিন পেয়ে জেল থেকে বের হয়ে আসে জহিরুল। সামাজিকভাবে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে থাকা এই পরিবারের অসহায়ত্বকে কেন্দ্র করে আবারও শুরু হয় নানা ধরনের নির্যাতন।

এবার মামলা প্রত্যাহারের চাপ, সঙ্গে আসামিদের হয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিলান উদ্দিন দুলালের আপসের প্রস্তাব। কিন্তু সব কিছু নাকচ করে কিশোরী যখন তার সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে অনড় তখন নেমে আসল আবার অত্যাচার।

৭ মে (মঙ্গলবার) সকালে কিশোরীর বাবা ও মা কাজের জন্য বাইরে চলে গেলে আবারও ধর্ষণের শিকার হয় কিশোরী মা। এবার সেজান (১৯) নামে এক তরুণ কিশোরীকে ধর্ষণ করে। পরে কিশোরীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।

কিশোরীর বাবা জানান, তাদের সামাজিক অবস্থান নেই। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানায়। একটু সচ্ছল থাকার আশায় তারা শ্রীপুরে এসে কাজ নিয়েছিলেন। কিন্তু গত ১ বছর ধরে তাদের ওপর যে ধরনের নির্যাতন হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রতিবাদস্বরূপ তারা শিশুটির নাম রাখেন ‘অত্যাচার’।

তিনি বলেন, বিচার পাই আর না পাই শিশুটির নামের মাধ্যমে আমরা অত্যাচারের কাহিনী শোনাতে চাই সবাইকে। সবাইকে বুঝাতে চাই গরিবের জন্য আইনের ভাষা অন্যরকম। এই সন্তানের পিতৃপরিচয় আড়াল করতে নানা ধরনের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সাদি বলেন, ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে প্রথমবার শ্রীপুর থানায় মামলা করেন। যাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল তার ডিএনএ টেস্ট করে অভিযোগের সত্যতা পাইনি। তবে দ্বিতীয়বার সেজান নামের একজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেজান নেত্রকোনা সদর উপজেলার গাজার কান্দি গ্রামে হাবুলের ছেলে। সে মান্নান হাজির বাড়ির ভাড়াটিয়া। সেজানেরও ডিএনএ টেস্ট করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সাদি।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মইনুল হক খান বলেন, মঙ্গলবার কিশোরী ও তার শিশু সন্তানকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলে রাতেই বাড়ি ফিরে যায় তারা।

এমন একটি ঘটনা সামাজিকভাবে মীমাংসার উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে শ্রীপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিলান উদ্দিন দুলাল বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই।

সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050499439239502