বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যায় তার স্ত্রীকে দায়ী করে নিহতের বাবার বক্তব্যের পরদিনই একই সুরে গতকাল রোববার সকালে মানববন্ধন করা হয়। রিফাত হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়ে আয়োজিত ওই মানববন্ধনে স্থানীয় এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলেও উপস্থিত ছিলেন। রিফাত খুনের প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের সঙ্গে শম্ভুপুত্রের ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ আছে, নিজেদের বাঁচাতে মিন্নিকে ফাঁসাতে একটি চক্র হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে উঠেপড়ে লেগেছে। তারাই শুরু থেকেই সামাজিক গণমাধ্যমে মিন্নির বিরুদ্ধে নানা কথা ছড়াচ্ছে। মানববন্ধনেও তার প্রকাশ ঘটেছে। স্থানীয় পুলিশও এ চক্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মিন্নি বলেছেন, রিফাত হত্যা মামলা ভিন্ন খাতে নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। স্থানীয় প্রভাশালীরা তার শ্বশুরকে চাপ দিয়ে তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন।
গতকাল দুপুরে বরগুনা সদর উপজেলার নয়াকাটা গ্রামের নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে মিন্নি বলেন, বরগুনায় ০০৭ নামের গ্রুপটির (রিফাতের হত্যাকারী) পৃষ্ঠপোষকরা খুবই ক্ষমতাবান ও অর্থশালী। তাই তারা রিফাত হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে নিজেদের বাঁচাতে তার শ্বশুরের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তার শ্বশুর সম্পূর্ণ মনগড়া ও বানোয়াট কথা বলেছেন। মিন্নি বলেন, 'আমার শ্বশুর অসুস্থ এবং একমাত্র ছেলে হারিয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ফলে যা বলেন তার কোনো কিছুই পরে মনে থাকে না।'
শনিবার রাতে বরগুনায় সংবাদ সম্মেলনে রিফাতের বাবা আব্দুল হালীম দুলাল শরীফ বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। তিনি মিন্নিকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান। মিন্নি তার শ্বশুরের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান।
মিন্নি বলেন, 'আমি আমার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য অস্ত্রের মুখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা করেছি। আমার সাহসের প্রশংসা করেছে সারাদেশের মানুষ। সেই থেকে আমার স্বামীর বিচারের দাবিতে সারাদেশে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ ঘটনায় আমার শ্বশুর নয়ন বন্ডসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আমি এক নম্বর সাক্ষী; কিন্তু বর্তমানে রিফাত হত্যার বিচার অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।' মিন্নি বলেন, তাকে হয়রানি এবং মানসম্মান নষ্ট করার জন্যই ফেসবুকে বিভিন্ন ছবি এডিট করে পোস্ট করা হচ্ছে।
মানববন্ধন নিয়ে নানা প্রশ্ন :মিন্নিকে রিফাত হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা মন্তব্য করে তাকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করা হলেও এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সকালে বরগুনা প্রেস ক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। তবে সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারের এ মানববন্ধন হলেও এতে উপস্থিত ছিলেন কিছু চেনামুখ। ছিলেন না স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন রিফাতের চাচা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আজীজ শরীফ, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও এমপি শম্ভুর পুত্র অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মারুফ মৃধা। মানববন্ধনে রিফাতের বাবাও উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় অভিযোগ করা হয়, রিফাত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন রিফাতের স্ত্রী মিন্নি। তার নেতৃত্বেই রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করেছে নয়ন বন্ড ও তার গ্রুপের সদস্যরা। তাই মিন্নিকে দ্রুত গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
আরও দু'জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি :রিফাত হত্যা মামলার আরও দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রোববার সন্ধ্যার পরে টিকটক হৃদয় ও রাতুল শিকদার বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর কাছে জবানবন্দি দেয়।
এর আগে এ মামলায় আরও সাত আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আদালত টিকটক হৃদয়কে কারাগারে এবং রাতুল শিকদারের বয়স কম হওয়ায় সেফহোমে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরীফকে।