ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান কর্তৃক জাতির জনক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিসহ নানা ঘটনায় শাস্তির সুপারিশ আজ উঠছে সিন্ডিকেট সভায়। বেলা তিনটায় বসছে গুরুত্বপূর্ণ এ সিন্ডিকেট। জানা গেছে, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাতির জনক মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির প্রমান আগেই মিলেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল সংবিধান লংঘনের প্রমান তুলে ধরে চাকরিচ্যুতি সুপারিশও করেছেন আগেই। আলোকে গঠিত ট্রাইবুনালের সুপারিশসহ আজ সিন্ডিকেটে উঠছে।
তবে অধিকাংশ সিন্ডিকেট সদস্য ও বিশ^বিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাবি কর্তৃপক্ষের একটি অংশের রহস্যজনক ভুমিকা নিয়ে। জাতির জনক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির প্রমাণ পাওয়ার পরেও অপরাধীকে রক্ষা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রগতিশীল শিক্ষকরা। ব্যক্তিস্বার্থে জাতির জনকের অবমানাকারিকেও চাকরিতে কৌশলেও বহাল রাখার চেষ্টা হচ্ছে। অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান জানান দিতে আজ সকাল ১০টায় উপাচার্য অফিসে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের শিক্ষকদের একটি অংশ। এজন্য সোমবার রাতেই সাদা দলের পক্ষ থেকে নিজস্ব মদাদর্শের শিক্ষকদের উপাচার্য অফিসে হাজির থাকতে ‘বিশেষভাবে’ আহবান জানানো হয়েছে। শিক্ষকদের সেলেফোনে পাঠানো হয়েছে এসএমএস।
তবে শিক্ষকের অপরাধ ও কর্তৃপক্ষের ভুমিকায় ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের একাধিক পক্ষ আদালতে আইনী পদক্ষেপে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। জাতির জনকের মর্যাদা রক্ষায় আদালতে মামলারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মামলার জন্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতৃবৃন্দ শাহাবাগ থানায় গিয়ে কথা বলেছেন। তারা থানায় ঘটনায় অপরাধীর শাস্তি চেয়ে আইনী পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন করেছেন। প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীরা বলছে, যে কোন মুল্যে ঢাবিতে জাতির জনকের মর্যাদা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সমুন্নত রাখা হবে।
সিন্ডিকেটের অন্তত চার জন সদস্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে অভিনব কৌশলে এক গ্রেড পদাবনত দিয়ে হলেও চাকরিতে টিকিয়ে রাখার একটা চেষ্টা আছে। ভয়াবহ ইতিহাস বিকৃতিসহ নানা গুরুতর অপরাধ করার পরে মার্কেটিং বিভাগের এ শিক্ষককে রেহাই দেয়ার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যেই আ্যটর্নি জেনারেলের সুপারিশের সব পরিস্কার হয়েছে।
আ্যটর্নি জেনারেল তার পারিশপত্রে সংবিধার লংঘনের তথ্য প্রমান তুলে ধরে লিখেছেন, ‘ অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান তাঁর লেখায় স্বাধীনতার ঘোষণা সম্বন্ধে যা লিখেছেন তা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থি সংবিধানের ৬ষ্ঠ তফসিলের পরিপন্থী। তিনি ১৯৭১ সনের ২৫ শে মার্চের পরে যে আন্দোলনের চিত্র এঁকেছেন তা সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদে বর্ণিত বক্তব্যের পরিপন্থী। অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানের বিতর্কিত লেখাটি সংবিধানের ৬ষ্ঠ ও ৭ম তপসিলে বর্ণিত তথ্যের পরিপন্থী ও ইতিহাসের বিকৃতি।’
শাস্তির সুপারিশ করে এরপর আ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, ‘এমতাবস্থায়, আমার মতে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয়া উচিত। সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যগণ যদি আমার সাথে একমত পোষণ করেন সেক্ষেত্রে অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী থেকে অব্যাহতির বিষয়টি উল্লেখ করে তাঁকে পুনরায় কারণ দর্শানের নোটিশ প্রেরণ করা যেতে পারে।’
এদিকে আজ তিনটায় সিন্ডিকেট বসছে জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘সিন্ডিকেট সভায় ভার্চ্যুয়াল নয় সাভাবিক সময়ের মতো মুখোমুখি বসবে।’ তবে করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এভাবে বৈঠক করার বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই আপত্তি তুলেছেন বেশ কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য।