আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সীমান্তের ওপারের সাংবাদিকদের অবদান অনেক। ত্রিপুরার আগরতলায় থাকা সাংবাদিকরা হয়ে ওঠেন যোদ্ধা। সে সময় সীমান্তের ওপারে ত্রিপুরার আগরতলা ছিলো ওয়ার ক্যাপিটাল (যুদ্ধকালীন রাজধানী) এই কারণে সেখানের সাংবাদিকদের দায়িত্ব ছিলো অনেক বেশি। উল্লেখ করা দরকার, ২৫ মার্চ ঢাকার ঘটনা অস্পষ্টভাবে সীমান্তের ওপারে পৌঁছে।
আগরতলার অধ্যাপক মিহির বাবু ও বিপুল মজুমদার ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় অনেক চেষ্টার পর ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রের অফিসের রেডিও সেটে স্বাধীন বাংলার বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করেন। সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক সত্যব্রত চক্রবর্তীর দেয়া তথ্যে জানা যায় ২৭ মার্চ সকালে ‘দ্য স্ট্যাটস ম্যান’ এর সম্পাদক এলিস আব্রাহাম তাকে টেলিগ্রাম করে ঢাকার খবর ও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের খবর মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দিয়ে সীমান্ত অঞ্চলে যেতে বলে সন্ধ্যায় খবর পাঠাতে বলেন। তিনি সীমান্ত ঘুরে আখাউড়া, সোনামুড়া হয়ে কুমিল্লায় আসেন। কসবা রেলওয়ে ষ্টেশনের সামনে দেখেন রেল লাইনে বসে লোকজন পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছেন। ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ। ঢাকার কোনো খবর নেই। কসবা রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর হয়েছে। খবর সংগ্রহ ও তা প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ‘দৈনিক সংবাদ’ ভবন। আগরতলার সাংবাদিকদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনী, ভারতীয় মিত্র বাহিনীর যোগাযোগ বৃদ্ধি পেতে থাকে।এপার থেকে যাওয়া সাংবাদিক, আগরতলার সাংবাদিক ও বিদেশি সাংবাদিকদের হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। এপার থেকে যাওয়া স্বাধীনতাকামী বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষদের সহযোগিতায় আগরতলার সাংবাদিকেরা এগিয়ে আসেন। মুক্তিবাহিনীর সেক্টর কমান্ডাররা আগরতলায় গেলেই সাংবাদিকদের সঙ্গে তাদের কথা বার্তা হতো।
সাপ্তাহিক সংবাদপত্রগলোও পিছিয়ে থাকেনি। এপার থেকে আগরতলায় যাওয়া সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী, সন্তোষ গুপ্তসহ অন্যান্যরা সবসময় আগরতলার সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ভুমিকা রাখেন। তথ্য সূত্রে জানা যায়, ওয়ার ক্যাপিটাল আগরতলার চিত্রি সাংবাদিকরাও পিছিয়ে ছিলেন না। দুটি সংবাদপত্রের অফিসে জরুরিভিক্তিতে টেলিপ্রিন্টার মেশিন বসানো হয়। চিত্র সাংবাদিকরাও পিছিয়ে ছিলেন না। তারাও সবসময় তৎপর থাকতেন। সাংবাদিকদের সহযোগিতায় ত্রিপুরার আগরতলার ছাত্র সমাজ তরুণ যুব সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে আসেন। আগরতোলার প্রেসক্লাবের ভুমিকাও কম ছিলো না। সংবাদ আদান-প্রদানের আরেকটি কেন্দ্রবিন্দু ছিলো আগরতলা প্রেস ক্লাব। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আগরতলার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। যারা উপস্থিত হতে পারেননি তারা পরে বাংলাদেশে আসেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আগরতলার সাংবাদিকদের ভুমিকা ও অবদান ভোলার ভুলার নয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাদের ভুমিকা ও অবদান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি ইতিহাস।লেখক : ওয়ালিউর রহমান বাবু