মেডিক্যালের প্রশ্নফাঁস চক্রে ছয় চিকিৎসকসহ জড়িত ৪২ - দৈনিকশিক্ষা

মেডিক্যালের প্রশ্নফাঁস চক্রে ছয় চিকিৎসকসহ জড়িত ৪২

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে চিকিৎসক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ অন্তত ৪২ জনকে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ চক্রে জড়িত রয়েছেন ৬ চিকিৎসক। রয়েছেন কয়েকজন মেডিক্যাল শিক্ষার্থীও। এ চক্রের ফাঁস করা প্রশ্নপত্রে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হয়েছেন শত শত শিক্ষার্থী। চক্রটির বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁস করে ৯৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দারা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা মানিলন্ডারিং মামলায় প্রশ্নফাঁসে জড়িত অন্তত ৪২ জনকে অভিযুক্ত করে শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। শনিবার (১৩ আগস্ট) আমাদের সময় পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাজ্জাদ মাহমুদ খান।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেডিক্যাল প্রশ্নফাঁস চক্রের হোতা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু। জসিমের পরিবার ও স্বজনদের পাশাপাশি চিকিৎসক, মেডিক্যাল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীদের নিয়ে সারাদেশে চক্র গড়ে তোলেন। তার প্রধান সহযোগী আপন খালাতো ভাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর প্রিন্টিং প্রেসের মেশিনম্যান মো. আবদুস সালাম খান, জসিমের আপন বড় বোন শাহজাদী আক্তার ও স্ত্রী শারমীন আরা জেসমীন। চক্রের অন্যতম সদস্যদের মধ্যে আরও রয়েছেন, চিকিৎসক মুহাম্মদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান, রাশেদ খান মেনন, মোহাম্মদ আবদুছ ছালাম, জেডএমএস সালেহীন শোভন, এমএইচ পারভেজ খান, জাকির হাসান, মো. আলমাস হোসেন শেখ, সাজ্জাত হোসেন, আলমগীর হোসেন ও সোহেলী জামান। তারা পারস্পরিক যোগসাজশে ডেন্টাল ও মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র পাঁচ থেকে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করত।

জসিম উদ্দিনের ৩৩টি ব্যাংক হিসেবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ২১ কোটি ছিয়াত্তর লাখ টাকা জমা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি প্রশ্নফাঁসে টাকায় ১২ একরের বেশি জমি কিনেছেন। যার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। মিরপুরে দুই কোটি টাকার দুটি বাড়ি রয়েছে। ঢাকায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যের চারটি প্লট আছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে অন্তত ৬ চিকিৎসক জড়িত। তার মধ্যে হোতা জসিমের অন্যতম সহযোগী ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমদে প্রধান। জসিম ও ময়েজ উদ্দিন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিচ্ছুদের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র দিতেন। এ ছাড়া ময়েজের ‘ফেইথ’ নামে একটি ভর্তি কোচিং সেন্টার ছিল। কোচিং সেন্টারে আড়ালে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করাই ছিল তার মূল পেশা। ময়েজ উদ্দিনের ৩৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৯ কোটি তেরো লাখ টাকা লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। কোচিং সেন্টার পরিচালক কোচিং সেন্টার পরিচালনার আড়ালে মেডিক্যাল ভর্তি করত। এ চক্রের আরেকজন হোতা ডা. এমএস সালেহীন শোভন। একটি মেডিক্যাল কোচিং সেন্টার পরিচালনার আড়ালে তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় অভিযুক্ত হচ্ছেন আর চারজন চিকিৎসক। তারা হলেনÑ দিনাজপুরের একটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের একজন চিকিৎসক, মানিকগঞ্জ ও খুলনা সদরের দুজন চিকিৎসক।

চিকিৎসকদের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দুজন চিকিৎসক প্রশ্নপত্র ফাঁসের অন্যতম মূলহোতা। তারা জসিম উদ্দিনের সঙ্গে প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ সব ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। বাকি চারজন প্রশ্নপত্র সমাধান করা ও পরীক্ষার্থী সংগ্রহ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

এ ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস ও মানিলন্ডারিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত হচ্ছেনÑ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ছাত্রলীগের একজন সাবেক সহসভাপতি। টাঙ্গাইলের সখিপুর পিএম পাইলট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন শিক্ষক, টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের ২০১৫-১৫ সেশনের একজন ছাত্রী, ঢাকার শেরে বাংলানগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থপেডিকের (নিটোর) একজন কর্মচারী।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর প্রিন্টিং প্রেসের মেশিনম্যান আবদুস সালাম খান অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নফাঁস করে জসিমের আপন বড় বোন শাহজাদী আক্তার মীরাকে দিতেন। মীরা মোটা অঙ্কের বিনিময়ে সেটি জসিমের কাছে বিক্রি করতেন। পরে জসিন তার আপন ভাই, ভাতিজা, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের অর্ধশত সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমে সেই প্রশ্নপত্র ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ২০১৩ সাল থেকে ফাঁস শুরু হয়। প্রশ্নফাঁস মূলত চারটি ধাপে হয়। প্রথম ধাপে প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। দ্বিতীয় ধাপে চক্রের হোতাদের হাতে তা চলে যায়। এর পর তারা সহযোগীদের কাছে পৌঁছে দেয়। শেষ ধাপে টাকার বিনিময়ে তা পৌঁছে যায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মানিলন্ডারিং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মাধবী রানী পাল  বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মানিলন্ডারিংয়ের ঘটনায় ধানম-ি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিল সিআইডি। মামলায় জসিম উদ্দিন ও আবদুস সালামসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়। আমরা কয়েকজনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের প্রমাণ পেয়েছি। তদন্ত শেষে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ডিএমপির ধানমন্ডির মডেল থানায় গত বছর মানিলন্ডারিং আইনে জসিম উদ্দিন ও দুই চিকিৎসকসহ ১৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলার তদন্তে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও মানিলন্ডারিংয়ের সঙ্গে আরও ২৮ জনের সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসে। আরও কয়েকজনের ব্যাপারে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অনুসন্ধান শেষে দ্রুতই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010887145996094