মেডিকেল কলেজের আদলে দেশের সরকারি-বেসরকারি মেরিন একাডেমিতে ক্যাডেট ভর্তিতে অভিন্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এ বছর থেকে একই প্রশ্নপত্রে এ পরীক্ষা হবে। ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হতে পারে এ মাসেই। পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা মেধা ও পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে। সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সমন্বিত ক্যাডেট ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন করেছে। নতুন নির্মিত চারটি সরকারি মেরিন একাডেমিতে এবারই প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। সব মিলিয়ে ১১টি সরকারি ও বেসরকারি মেরিন একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে ৭৭৮ জনকে নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
টাকার বিনিময়ে ভর্তি এবং নির্ধারিত সময়ের পর শিক্ষার্থী ভর্তি দেখিয়ে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে কয়েকটি বেসরকারি মেরিন একাডেমির বিরুদ্ধে। এসব অনিয়ম বন্ধে সমন্বিত ভর্তি নীতিমালা ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শিক্ষার্থীর কোটা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। সূত্র বলছে, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা শেষ করে অনেকেই বিদেশগামী জাহাজে চাকরি করেন। ভর্তি পরীক্ষা ও সার্টিফিকেট নিয়ে অনিয়মের কারণে দেশের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হচ্ছিল। তবে বেসরকারি মেরিন একাডেমির নীতিনির্ধারকরা জানান, নতুন এ নিয়মের ফলে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারে ক্যাডেটের চাহিদা কমে গেছে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থী সংকটের কারণে অনেক বেসরকারি মেরিন একাডেমি বন্ধ হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকারি ও বেসরকারি মেরিন একাডেমিতে ক্যাডেট ভর্তির ন্যূনতম মান একই রাখায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নানা নেতিবাচক খবর আমাদের কাছে এসেছে। তাই ভর্তি পরীক্ষায় স্বচ্ছতা আনতে সমন্বিত পদ্ধতি চালু হচ্ছে।
সূত্রমতে, মেরিন একাডেমিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম-সচিবের নেতৃত্বে ভর্তি পরীক্ষার কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটি এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই জুলাইয়ে ভর্তি পরীক্ষার সার্কুলার প্রকাশের পরিকল্পনা নিয়েছে। এবার শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আবেদন করবে। আবেদনপত্রে শিক্ষার্থীরা পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ক্রমানুযায়ী উল্লেখ করবে। নৌপরিবহন অধিদপ্তর নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিয়মিত ও নভেম্বরের মধ্যে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে একযোগে ক্লাস শুরু হবে। ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ন্যূনতম যোগ্যতা এসএসসি ও এইচএসসিতে অন্তত জিপিএ-৩.৫০। এইচএসসিতে পদার্থ ও গণিতে আলাদাভাবে জিপিএ-৩.৫ থাকতে হবে। ইংরেজিতে থাকতে হবে জিপিএ-৩.০। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য পদার্থ ও গণিতসহ ‘সি’ গ্রেডে এ-লেভেল পাস হতে হবে। বয়স ১৮-২৫ বছর। উচ্চতা- পুরুষ ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি ও মেয়ে- ৫ ফুট ২ ইঞ্চি হতে হবে।
শিক্ষার্থী বাছাই নীতিমালায় বলা হয়েছে- ৩০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। এর মধ্যে ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যত্তিক পরীক্ষায় ২০০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। বাকি ২০০ নম্বর হবে এসএসসি পরীক্ষার জিপিএর ১৫ গুণ ধরে সর্বোচ্চ ৭৫ নম্বর ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএর ২৫ গুণ ধরে সর্বোচ্চ ১২৫ নম্বর মিলিয়ে। পাস নম্বর ৪০ শতাংশ। মেধাতালিকায় উত্তীর্ণরা নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে শারীরিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। তাদের দৌড় ও সাঁতার পরীক্ষায় পাস করতে হবে। কোনো নম্বর না থাকলেও ছাত্রদের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি এবং লিখিত পরীক্ষায় নম্বরের ভিত্তিতে সমন্বিত মেধাতালিকা করা হবে। চাহিদার ৪-৫ গুণ আকারে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে।
প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শিক্ষার্থীর কোটা : ১১ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির কোটা ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে সরকারি বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ২৪০ জন ও মেরিন ফিসারিজ একাডেমিতে ৭০ জন ক্যাডেট ভর্তি করা হবে। বরিশাল, রংপুর, সিলেট ও পাবনা- এ চারটি নবনির্মিত সরকারি মেরিন একাডেমিতে ৫০ জন করে ক্যাডেট নেয়া হবে। বেসরকারি মেরিন একাডেমিগুলোর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমিতে ৭০ জন, মাস মেরিটাইম একাডেমিতে ৬০ জন, ওশান মেরিটাইম একাডেমিতে ৫০ জন, ওয়েস্টার্ন মেরিটাইম একাডেমিতে ৪০ জন এবং ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ট্রেনিং একাডেমিতে ৪৮ শিক্ষার্থী ভর্তির কোটা ঠিক করা হয়েছে। এ বছর ভর্তিতে কোটা অনুসরণ করা হবে।