দখল বুঝে নেওয়ার নামে হঠাৎ করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রা মোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাকে দুরভিসন্ধিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ঐতিহাসিক ভবনটিকে ধ্বংস্তূপে পরিণত করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জে ভেঙে দেওয়া ঐতিহাসিক বাড়িটি পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এ সময় বাড়িটির দখলদার দাবিদার ফরিদ চৌধুরীর পরিবার সেখানে অবস্থান করছিল।
শিক্ষা উপমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'হঠাৎ করে একটা ঐতিহাসিক ভবন ভেঙে দেওয়া একেবারেই গর্হিত কাজ হয়েছে। আমার দৃষ্টিতে এটা বেআইনি।
এই স্থাপনার হেরিটেজ হিসেবে একটা মূল্য আছে, সেটাকে সম্মান দেখানো উচিত ছিল। সেটা ভেঙে দেওয়ার পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে। দখল বুঝিয়ে দেওয়া বা বুঝে নেওয়ার নামে হঠাৎ করে ভবনটা ভেঙে ফেলা হয়েছে, এটা একেবারেই আমার কাছে দুরভিসন্ধিমূলক মনে হয়েছে।'
তিনি বলেন, যে কোনো ঐতিহাসিক স্থাপনার মালিকানা যিনিই পান সেটা ভেঙে ফেলার অধিকার কারও থাকে না। এই জায়গাটা যতটুকু জানি একটা অর্পিত সম্পত্তি। আমার সন্দেহ হচ্ছে- জেলা প্রশাসনকে পক্ষভুক্ত না করেই এটা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। অর্পিত সম্পত্তি কীভাবে ব্যক্তি মালিকানায় গেল সেটাও তদন্ত করে দেখতে হবে।'
জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া নিয়েও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করে নওফেল বলেন, 'একজন নাজির এসে নাকি জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছেন। কাগজপত্রে যা দেখেছি, তার তো ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার ছিল না। অর্পিত সম্পত্তির কেয়ারটেকার জেলা প্রশাসন, তাদের না জানিয়ে কীভাবে জায়গাটা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, সেই বিষয়টা পুলিশ প্রশাসনের দেখা দরকার ছিল। নাজিরের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার ছিল কিনা, সেটাও পুলিশের দেখা দরকার ছিল।'
সার্বিক বিষয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ঐতিহাসিক বাড়িটিকে জাদুঘর করার দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে অবশ্যই তিনি ভূমিকা রাখবেন। যাত্রা মোহন সেন (জে এম সেন) হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। সুতরাং তিনি অনেক আগে থেকেই অবগত আছেন যে জে এম সেনের বাড়ির একটা ঐতিহাসিক মূল্য আছে। প্রতিমন্ত্রী বিষয়টি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়েরও দৃষ্টিগোচর করার ঘোষণা দেন।
ভবনটিতে গড়ে তোলা 'শিশুবাগ স্কুল' জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, একটা স্কুলের সরকারি অনুমতি থাকার পরও কীভাবে হঠাৎ করে সেটাকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, এটা একটা বড় প্রশ্ন। আবার উচ্ছেদের বিষয়ে জেলা প্রশাসন অবগত ছিল না, সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে এখানে অনেক ষড়যন্ত্রমূলক কাজ হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও বাড়ির ভেতরে 'দখলদার' ফরিদ চৌধুরী ও তার লোকজনের অবস্থানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের বৈধতাটা কী সেটা দেখতে হবে। এ বিষয়ে পুলিশের উদ্যোগী হওয়া উচিত।