ম্যানিলায় এডিবি’র বার্ষিক সভায় - দৈনিকশিক্ষা

ম্যানিলায় এডিবি’র বার্ষিক সভায়

মনোয়ার হোসেন |

অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং উন্নয়নসংক্রান্ত আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক বৈঠক, সেমিনার, রাউন্ড টেবিল, বার্ষিক সভা, একজন পেশাজীবী অর্থনৈতিক সাংবাদিক, বিশেষ করে রিপোর্টারের কাছে গুরুত্ব বহন করে। কারণ এসব সভা বা সম্মেলন থেকে বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান গতি-প্রকৃতি কীরকম তা জানা যায় এবং ভবিষ্যতে উন্নয়ন বা অর্থনীতি কোনদিকে মোড় নিতে পারে, সে ব্যাপারেও একটা ধারণা পাওয়া যায়। এ কারণে অর্থনৈতিক রিপোর্টাররা সব সময়ই চেষ্টা করেন অর্থনীতি বা এই সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের বৈঠক বা কনফারেন্স অনেক সময় সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে হলেও কভার করতে।

স্পষ্টভাবে বলতে গেলে বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ কয়েকটি উন্নত দেশের হাতে চলে গেছে। বিশ্ব বাণিজ্যও চলে গেছে কয়েকটি দেশের হাতে। আর উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন বা ডেভেলপমেন্ট নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বিভিন্ন দাতা সংস্থা বা উন্নয়ন সহযোগী বা লগ্নি প্রতিষ্ঠানের সহায়তার মাত্রার ওপর। এই বিবেচনায় যে কোনো আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার কোনো বৈঠক/কনফারেন্স ও তার সিদ্ধান্ত উন্নয়নশীল দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই কারণে তা একজন অর্থনৈতিক সাংবাদিকের কাছেও গুরুত্ববহ।

বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে ভূমিকা রাখছে। এই তিন আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে এডিবি’র সহায়তা সবচাইতে বেশি বলে জানা যায়। বাংলাদেশ এডিবি’র একজন সদস্য বিধায় এর বোর্ড অব গভর্নরসের নিয়মিত বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখছে।

এডিবি’র প্রধান কার্যালয় ম্যানিলায় সংস্থার ৪৫তম বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে। স্বাভাবিকভাবেই অর্থমন্ত্রণালয় এবং এর অধীন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সর্বপ্রকার প্রস্তুতি নিয়ে বোর্ড অব গভর্নরসের বৈঠকে যোগদান করতে রওনা হলেন। সেবার ছয় সদস্যবিশিষ্ট এক ডেলিগেশন বার্ষিক বৈঠকে যোগদান করে। ডেলিগেশনের নেতৃত্বে স্বাভাবিক নিয়মেই ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আমাকে ডেলিগেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল একমাত্র সাংবাদিক হিসাবে। ডেলিগেশনের একজন সদস্য হিসাবে ম্যানিলায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতও ছিলেন।

মে মাসের ২ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত এই বৈঠক চলে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে। ফিলিপাইন সরকার অংশগ্রহণকারী সকল দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের জন্য বিভিন্ন সহায়তা দিয়েছিল এবং সুবিধা মঞ্জুর করেছিল। সমুদ্রের ধারে একটি নামী হোটেলে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। হোটেল থেকে সভাস্থল বা ভেন্যু তিন/চার মিনিটের ড্রাইভ। ম্যানিলা শহরের এই অংশটি অত্যন্ত সবুজ, বাড়িঘর, লোক চলাচল কম। কনফারেন্স প্রাঙ্গণটি বিশাল।

মূল ভবনটিও বিরাট। তাতে একাধিক বড় আকারের আর মাঝারি ও ছোট আকারের হলঘর, যেগুলোতে বিভিন্ন বিষয় বা ইস্যুর ওপর সেমিনার/সভা হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সরকারি/বেসরকারি প্রতিনিধিরা ছাড়াও ছিল ওপেক (তেল উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশের সংগঠন), একাধিক আন্তর্জাতিক এনজিও এবং বিভিন্ন দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা, যারা স্বার্থসংশ্লিষ্ট সভায় অংশ নিতে এসেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, সব মিলিয়ে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা হাজার অতিক্রম করে যাবে। লিবিয়ার নাগরিক, একজন ওপেক প্রতিনিধি, নিজের থেকেই আমার সাথে পরিচিত হয়ে বললেন, তিনি গাদ্দাফি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কী করেছেন এবং নিজের বেতনের বড় অংশ নিয়মিতভাবে গাদ্দাফি বিরোধীদের চাঁদা হিসাবে দিয়েছেন। অবাক হলাম সদ্যপরিচিত কিন্তু অজানা একজন ব্যক্তির কাছে কেউ এমন কথা বলতে পারে কিনা এই ভেবে। 

ডেলিগেশনের একজন সদস্য হিসাবে (আমার আইডেন্টিফিকেশন ব্যাজে সাংবাদিক কথাটি উল্লেখ ছিল না) যে কোনো মিটিং বা সেমিনার দেখতে বা শুনতে, এক কথায় কভার করতে অসুবিধা ছিল না (এক্সক্লুসিভ সভা ছাড়া)। বার্ষিক সভার ভেন্যুর সবকিছুতেই উচ্চমানের ছাপ ছিল। বার্ষিক সভায় গৃহীত বহু সিদ্ধান্তের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মত ছিল উন্নয়নশীল এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়নে অধিকতর সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় যোগাযোগে (কানেক্টিভিটি) সহায়তা জোরদার করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি।

বার্ষিক সভার দিনগুলোতে একটি জিনিস আমাকে আকর্ষণ করেছে। সেটি হচ্ছে আমাদের অর্থমন্ত্রীকে অংশগ্রহণকারী অনেক দেশের অর্থমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে জানেন। তাঁর সাথে আলাপ/আলোচনার সময় ওসব দেশের মন্ত্রীদের উচ্ছ্বাস ও বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে মনে হতো তাঁরা একে অপরকে দীর্ঘদিন থেকে জানেন। বার্ষিক সভাতে ভারতের অর্থমন্ত্রী (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি) প্রণব মুখার্জির সাথে দেখা হলে তাঁরা একে অপরকে যেভাবে শুভেচ্ছাদিত করেন, তাতে মনে হয়েছিল বহুদিন পর এক বন্ধু অপর বন্ধুর দেখা পেল।

সম্মেলনের তৃতীয় দিনে সকালে ভেন্যু প্রাঙ্গণে দেখা হলো হাসানুল হক ইনুর সাথে। তিনি তখন সংসদ সদস্য (এবং পরবর্তীতে তথ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন)। তাঁকে দেখে ভালো লাগল। অর্থমন্ত্রীও খুশি হলেন। সেদিন আলুভর্তা ডাল, ভাত ইত্যাদি সহকারে ডিনার খেয়েছিলাম রাষ্ট্রদূত মাজেদা রফিকুন্নেসার বাসভবনে। সেখানে হাসানুল হক ইনুর সাথে আবার দেখা হলো। ডিনারশেষে তাঁকে তাঁর হোটেলে পৌঁছে দিয়ে আমরা আমাদের হোটেলে ফিরলাম।

মুহিত ভাইয়ের দ্রুত ঢাকায় ফিরে যাওয়ার প্রয়োজন হলো (আমাকে তাই বলা হয়েছিল)। তিনি এবং ভারতের অর্থমন্ত্রী একসাথে দেশের পথে রওনা হলেন। তাঁকে সী অফ করতে আমরা সবাই ম্যানিলার একটি বিমান ঘাঁটিতে উপস্থিত হলাম। বিমান ঘাঁটিতেই অবস্থিত বিরাট সুসজ্জিত হলঘরে (সম্ভবত বিশেষ অতিথিদের জন্য বিমান ঘাঁটির এই অংশটি ব্যবহৃত হয়) একটি বড় টেবিলের দুইপাশে বসে তাঁরা আলাপ শুরু করলেন। পাশের একটি সোফায় আমি বসলাম। আশেপাশে অন্য কেউ ছিল না। কিছুক্ষণ পর মনে হলো এখানে আমার উপস্থিত থাকা সঠিক নয়। আমি উঠে গিয়ে সামান্য দূরে আরেকটি সোফায় কিছুক্ষণ বসে হলঘর থেকে বের হয়ে অপেক্ষমাণ নির্দিষ্ট গাড়িতে উঠে বসলাম। এর কিছুক্ষণ পর তাঁদের ফ্লাইট টেক অফ করলে আমরা হোটেলে ফিরে এলাম। পরদিন সকালে শিডিউল অনুযায়ী সিঙ্গাপুর হয়ে ঢাকায় পৌছলাম রাত্রে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক 
 

দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068821907043457