যশোরে হচ্ছে বিশ্বমানের আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান - দৈনিকশিক্ষা

যশোরে হচ্ছে বিশ্বমানের আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দুজন দুই দেশের। দুজনের মধ্যেই রয়েছে অনেক মিল মানসিকতা, অধ্যবসায় আর আত্মত্যাগে। তাদের একজন অচ্যুত সামন্ত। ১৯৯২ সালে মাত্র ১২ শিক্ষার্থী আর ৫ হাজার টাকা নিয়ে ভারতের উড়িষ্যায় গড়ে তুলেছিলেন ‘কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি’ (কিট) নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সেখানে কেজি টু পিজি (কিন্ডারগার্টেন থেকে স্নাতকোত্তর) পর্যন্ত ২৭ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। প্রায় ১৫ বর্গকিলোমিটার জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সবাই উড়িষ্যার আদিবাসী ও দরিদ্র পরিবারের।

বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের শিক্ষা গ্রহণ তো বটেই, থাকা, খাওয়া, বিনোদন, চিকিৎসা সবকিছুই দেওয়া হয় বিনামূল্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব ভলিবল, বাস্কেটবল, টেনিস কোর্ট। কিট প্রতিষ্ঠার পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস (কিস্)। এখানেও বর্তমানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়াশোনা করছেন ২৫ হাজার আবাসিক ছাত্রছাত্রী। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিনামূল্যে শিক্ষার আলো বিতরণ করে চলা অচ্যুত সামন্ত নিজের দেশ ভারত ছাড়াও রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, চেক রিপাবলিকসহ বিভিন্ন দেশের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন ৩৩টি সম্মানসূচক ডক্টরেট। অবিবাহিত এই মানুষটি ৪২ বছর ধরে প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা কাজ করে চলেছেন। কিন্তু এক দিনের জন্যও অসুস্থ হননি। বসবাস করেন দুই রুমের এক ভাড়া বাসায়। আরেকজন অ্যাঞ্জেলা গোমেজ। শরীরে ক্যান্সারের বাসা। ব্রেন

স্ট্রোকও হয়ে গেছে একবার। বয়স ৬৫। এখনো সমানভাবে ছুটে চলেছেন তিনি। সকাল-বিকাল নিয়মিত অফিস করছেন। যাচ্ছেন গ্রামে-গঞ্জে, হাটে, মাঠে, ঘাটে। শেষ তিন দশকে প্রায় ১ কোটি নারী ও শিশুকে বাঁচতে শিখিয়েছেন তিনি তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ‘বাঁচতে শেখা’র মাধ্যমে; যার বেশির ভাগই ছিল সমাজ ও পরিবারে অবহেলিত, নির্যাতিত ও সুবিধাবঞ্চিত। তিন দশকের এই অসাধারণ কীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ ম্যাগসাইসাইসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। অবিবাহিত এই মানুষটির সম্পদ বলতে কিছুই নেই। যা ছিল তার সবই দিয়ে দিয়েছেন ‘বাঁচতে শেখা’কে। বাঁচতে শেখার একটি রুমে ভাড়া থাকেন। বাঁচতে শেখার ক্যান্টিনে টাকা দিয়ে খান। পরেন ২৬০ টাকা দামের শাড়ি। উল্লেখ্য, এই মহীয়সী নারীকে এ বছর দিয়েছে আজীবন সম্মাননা সংবর্ধনা এবং কিছু আর্থিক উপঢৌকনসহ স্বীকৃতি ছাড়পত্র। এ দুই জীবন্ত কিংবদন্তি এবার এক হয়ে কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের আদলে যশোরে গড়তে চলেছেন কিট-অ্যাঞ্জেলা গোমেজ রেসিডেনশিয়াল স্কুল। এ ব্যাপারে ১৩ জুলাই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্মারকটিতে স্বাক্ষর করেন কিটের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ড. অচ্যুত সামন্ত এবং বাঁচতে শেখার প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ড. অ্যাঞ্জেলা গোমেজ।

এ চুক্তি অনুযায়ী যশোর শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে হৈবতপুরে বাঁচতে শেখার নিজস্ব ২২ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হবে বিশ্বমানের একটি আবাসিক স্কুল। অ্যাঞ্জেলা গোমেজ বলেন, এ স্কুলটিতে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তবে প্রাথমিকভাবে প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু হবে। প্রতি শ্রেণিতে শিক্ষার্থী থাকবে ৫০ জন। সব মিলিয়ে প্রথম পর্যায়ে শিক্ষার্থী হবে ৩৫০ জন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। অ্যাঞ্জেলা গোমেজ বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানে সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র পরিবার ও অনগ্রসর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কন্যাশিশুরা লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। ৩৫০ কন্যাশিশুর থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, পোশাকসহ যাবতীয় খরচ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বহন করা হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি এসব কন্যাশিশুকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে। ’

তিনি বলেন, ‘আবাসিক এ স্কুলটির অবকাঠামো, আসবাবপত্র, যানবাহনসহ যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করবে কিস্। ছয় সদস্যের গভর্নিং বডির মাধ্যমে স্কুলটি পরিচালিত হবে। এ ছয়জনের মধ্যে বাঁচতে শেখার পক্ষ থেকে তিনজন ও কিসের পক্ষ থেকে তিনজন থাকবেন। স্কুলটি বাংলাদেশের বিদ্যমান নীতিমালা ও আইনকানুন অনুযায়ী পরিচালিত হবে। শুধু কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেবে কিস্ ফাউন্ডেশন। স্কুল পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্য যাতায়াত ভাতাসহ কোনো প্রকার সম্মানী পাবেন না। পরে স্কুলের পরিধি আরও বাড়ানো হবে। ভারত ও বাংলাদেশের এ দুই জীবন্ত কিংবদন্তি তাদের জীবনের সবটুকু সময় হতদরিদ্র, পিছিয়ে পড়া, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন। তারা নিজেদের দিকে তাকানোর সময় পাননি। সংসার করেননি। তাদের এত সম্পদ, অথচ কোথাও নিজের নামে এক কাঠা জমিও নেই, ব্যাংকে নিজের অ্যাকাউন্ট নেই। এ দুই মহারথীর স্বপ্ন, আশা ও আকাঙ্ক্ষা এক হয়ে যাওয়ায় এবার এ দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষের ঘরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়বে, ঘটবে জীবনমানের উন্নয়ন— তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারণ, এ দুজনের জীবনে ব্যর্থতা বলে কোনো শব্দ নেই।

প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে - dainik shiksha তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত - dainik shiksha বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010367155075073