যেমন হচ্ছে মূল্যায়ন ও পরীক্ষা পদ্ধতি - দৈনিকশিক্ষা

যেমন হচ্ছে মূল্যায়ন ও পরীক্ষা পদ্ধতি

মাছুম বিল্লাহ, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

অন্তবর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই ঘোষণা করেছেন, পূর্ববর্তী সরকারের কারিকুলাম বাস্তবায়নযোগ্য নয়। ফলে সেখানে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে। এখানকার ভালো যেসব অংশ থাকবে সেগুলো গ্রহণ করে আমরা অনেকটাই ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত কারিকুলামে ফিরে যাবো। তার মানে এই নয়, আমরা না বুঝে মুখস্থ বিদ্যায় ফিরে যাচ্ছি। কেউ কেউ বলছেন, বর্তমানের বই পরিমার্জন করা মানে কারিকুলাম পরিবর্তন নয়। আসলে কারিকুলাম হচ্ছে একটি ব্যাপক বিষয় আর কারিকুলামের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যতোগুলো পদক্ষেপ আছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে পাঠ্যবই ব্যবহার। উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য পাঠ্যবই ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের কাঙিক্ষত দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করানোর প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। সেই প্রচেষ্টার পদ্ধতি ও দিকনির্দেশনা থাকে। যেমন-বিতর্কিত নতুন কারিকুলামের পদ্ধতির মধ্যেই ছিলো সমস্যা। আমাদের বাস্তবতা, অবকাঠামো, শ্রেণিকক্ষসহ সার্বিক বিন্যাস ও শিক্ষকদের অবস্থা ওই পদ্ধতিকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না। সব পদক্ষেপের পর মূল্যায়ন হচ্ছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা দিয়ে পরিমাপ করা হয় যে, একটি কারিকুলামের উদ্দেশ্য কতোটা বাস্তবায়ন হচ্ছে, কতোটা ধাক্কা খাচ্ছে কিংবা আসলেই কোনো সমস্যা আছে কি না।

উপরোক্ত বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চলমান পাঠ্যপুস্তকগুলো ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের বাকি ক’মাস অর্থাৎ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকছে যা, দৈনিক শিক্ষা ও আমাদের বার্তার বেশ কয়েকটি লেখার মাধ্যমে আমরা সরকারের কাছে যুক্তিসহ প্রস্তাব আকারে পেশ করেছি। পূর্ববর্তী সরকারের তথাকথিত ষাণ্মাসিক মুল্যায়ন যেটিকে আমরা বহুবার ‘প্রহসনের মূল্যায়ন’ বলেছি সেটি বাদ দিতে হবে। অন্তবর্তীকালীন সরকার তাই করেছে অর্থাৎ ষাণ্মাসিক মূল্যায়নের যে তারিখ ও পদ্ধতির কথা বলা হয়েছিলো তা ইতোমধ্যে বাদ দেয়ার ঘোষণা এসেছে। তাহলে পরীক্ষার প্রশ্ন কেমন হবে? এ নিয়ে অনেকেরই এখনো প্রশ্ন ও কিছুটা দ্বিধাও আছে ও থাকাটাই স্বাভাবিক। যারা দৈনিক শিক্ষা ও আমাদের বার্তা নিয়মিত পড়েন এবং দেখেন তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে, আমরা বেশ কয়েকটি লেখায় কয়েকবারই বলেছি, প্রচলিত বই থেকেই পূর্ববর্তী নিয়মে অর্থাৎ তথাকথিত নতুন কারিকুলামে উল্লেখিত ষাণ্মাসিক মূল্যায়নের যে প্রশ্ন এবং ধরন তা পুরো বাদ যাবে। ২০১২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত আমরা যে পুস্তক অনুসরণ করে প্রশ্নপত্র যেভাবে করতাম এখন নতুন কারিকুলামের ওপর লিখিত বইয়ের কন্টেন্ট থেকে সে ধরনের প্রশ্নই করা হবে যদিও সেটি একটু চ্যালেঞ্জিং। তারপরেও তাই করতে হবে সময়ের স্বল্পতাকে বিবেচনায় নিয়ে। প্রশ্নের আইটেম কী হবে তাও বলেছিলাম যে, প্রশ্নোত্তর, ম্যাচিং, বহুনির্বাচনী, কমপ্লিটিং, ব্যাখ্যাকরণ, কোন বিষয়ের ওপর সংক্ষিপ্ত নোট লেখা, একটি বিষয় কতোটা ভালো লেগেছে, কেনো লেগেছে, কোনো বিষয়ের উপস্থাপন ও পরিবেশন ঠিক আছে কি না ইত্যাদি। তবে, প্রশ্ন যেভাবেই করা হোক না কেনো তা যেনো শিক্ষার্থীদের চিন্তা-ভাবনা করে লিখতে হয়, তাদের অরিজিন্যালিটি যাতে বোঝা যায়। তার মানে প্রশ্ন হবে সৃজনশীল। তবে, সেই আগেকার মতো কাঠামোবদ্ধ সৃজনশীল ঠিক না অর্থাৎ জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক, প্রয়োগমূলক ও উচ্চতর দক্ষতামূলক পর পর সাজিয়ে নয়। একটি বিষয় শিক্ষার্থীরা বোঝতে পেরেছেন কি না সেটি যাচাই করার জন্য প্রশ্ন এমনভাবে করা, যাতে তার আন্ডারস্ট্যান্ডিংযের বিষয়টি উঠে আসে। অর্থাৎ মিশ্র ধরনের প্রশ্ন দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন করা হবে যাতে   শিক্ষার্থীকে বই পড়তে হয়, শুধু অন্যের তৈরি করা কিছু হুবহু লিখে দিয়েই যাতে ভালো গ্রেড পেতে না হয়। 

পরীক্ষা যেহেতু এভাবে হবে তাই প্রশ্নে নম্বর প্রদান করা হবে। সেই নম্বরকে ইচ্ছে মতো গ্রেডিং-য়ে রূপান্তর করা যাবে। বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় সেটি না করলেও অসুবিধা নেই। একজন শিক্ষার্থী যখন একটি বিষয়ে শতকরা ৮০ নম্বর পাবেন তখন ধরেই নেয়া হচ্ছে যে, তার গ্রেডিং হচ্ছে এ প্লাস। যেটি বোর্ড পরীক্ষায় করা হবে। চরমভাবে বিতর্কিত কারিকুলামের সেই বৃত্ত, চতুর্ভূজ ও ত্রিভুজ দিয়ে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা পরিমাপের বিষয়টি থাকছে না। এটি প্রথম থেকেই ভীষণভাবে বিতর্কিত ও প্রশ্নবোধক ছিলো। এনসিটিবির কর্মকর্তা এবং মন্ত্রণায়কে এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্য। 

আর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তো অবশ্যই নতুন বই আসছে সব ক্লাসের জন্যই। সেখানে বর্তমানের যে বই বিশেষ করে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বইয়ের কনটেন্টে যা যা আছে সেখানে প্রয়োজনীয় সংষ্কার করা হবে, সময় যেহেতু কম। অর্থাৎ যে যে অংশ বা চ্যাপ্টার রাখা সম্ভব হবে সেটুকু রাখা হবে, বাকিটা হবে নতুন। আর ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের পুরোটাই নতুন হবে। 

লেখক : লিড রিসার্স, দৈনিক আমাদের বার্তা ও দৈনিক শিক্ষাডটকম। 

আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003835916519165