যে গ্রামে শিশুরা নিজেরাই নিজেদের শিক্ষক - Dainikshiksha

যে গ্রামে শিশুরা নিজেরাই নিজেদের শিক্ষক

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

7e4d8b3265f67c46fb57cd05cd9b2b0d-children

ভারতের উত্তর প্রদেশের জনবহুল একটি গ্রাম ভাউমাউ। দিনের বেশির ভাগ সময় নারী-পুরুষ সেখান জমি চাষে ব্যস্ত থাকেন। অনেকে খাটেন দিনমজুর হিসেবে। এত কাজের মধ্যে সন্তানদের দেখার সময় কোথায়? শিশুরা সেখানে বেড়ে ওঠে নিজের খেয়ালে।

অভিভাবক না থাকলে কী হবে, শিশুরা নিজেরাই নিজেদের পথ বেছে নিয়েছে। নিজেরাই শিক্ষার্থী, নিজেরাই শিক্ষক। অবলম্বন বলতে ট্যাবলেট কম্পিউটার (ট্যাব)। শিক্ষা-বিষয়ক ভিডিও, গল্প, খেলার আয়োজনে ভরা সেই ট্যাব থেকে শিশুরা ইংরেজি শেখে। বিজ্ঞান-বিষয়ক পরীক্ষা চালায়।

প্রথম বলে পরিচিত বেসরকারি সংস্থার একটি প্রকল্পের আওতায় গ্রামটিতে ট্যাবের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা-বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের তিন মাসের জরিপ বলছে, ১১ শতাংশ শিশুর ভাষাগত দক্ষতা বেড়েছে। বিশেষ করে মাতৃভাষার ওপর দখল বেড়েছে। একই সঙ্গে শিশুরা ইংরেজি ও বিজ্ঞানও পড়তে পারছে। বলতেও পারছে।

সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো শিশুরা প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছে। তারা প্রযুক্তিগত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করতে পারছে।

ভারতের অন্যান্য গ্রামের মতো এই গ্রামের শিশুরাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। কিন্তু প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় অল্পই শেখে তারা। সেটাকে ঠিক প্রকৃত শিক্ষা বলা যায় না। ২০১৪ সালের শিক্ষা-বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ভারতে স্কুলগামী শিশুদের হার বাড়লেও শিক্ষার মান নিয়ে সংশয় রয়েছে। ছয় থেকে আট বছরের অনেক শিশু অক্ষরও ভালো করে চেনে না। তবে ভাউমাউয়ের এই প্রকল্প ভারতের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এতে শিশুরা প্রযুক্তির ব্যবহার শিখছে। খুলে যাচ্ছে তাদের জ্ঞানের জানালা। শিশুর কৌতূহলী মন অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছে।

ভাউমাউ গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিশুরা কম্পিউটার ল্যাবে কাজ করছে। কম্পিউটারে ছবি আঁকছে। কীভাবে ট্যাবের বোতাম ব্যবহার করতে হয়, ভিডিওর মাধ্যমে তাও শেখানো হচ্ছে। অথচ ভাউমাউতে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। কিন্তু বিশেষ ব্যবস্থায় বেসরকারি সংস্থাটি ট্যাবের ব্যবস্থা করেছে।

এক বিকেলে গ্রামে ঘুরতে গিয়ে অবাক হতে হলো। ধূলিধূসর পথে নোটবুক হাতে বসে আছে তিন বালক। তারা একসঙ্গে বসে মানবকঙ্কালের ওপর ধারণ করা কোনো ভিডিও দেখছে। ছেলেরা জানাল, তারা শিখেছে মানবশরীরে ২০৬টি হাড় রয়েছে।

আরেকটু এগোতে দেখা হলো তিন মেয়ে ও দুই ছেলের একটি দলের সঙ্গে। তারা ভিডিও দেখছে। ইংরেজি নানা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। দেখা গেল, এক বালক নিজেই তৈরি করেছে ফ্যান ও ফ্ল্যাশলাইট। মোবাইল ফোনের কার্ডবোর্ড, টেপ, তার ও নানা যন্ত্রপাতি দিয়ে সে এটি তৈরি করেছে।

গ্রামের শিশুদের মধ্যে প্রযুক্তির এই আলো ছড়িয়েছেন মাধব চাভন ও রুকমিনি ব্যানার্জি। হাইব্রিড লার্নিং প্রোগ্রাম নামে এই প্রকল্পের উদ্ভাবক তাঁরা। ভারতের শিক্ষা-বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা প্রথমের সঙ্গে প্রায় ২০ বছর ধরে সংশ্লিষ্ট তাঁরা।

প্রথম প্রকল্পের আওতায় ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া প্রায় তিন হাজার ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। ইন্দুস টাওয়ার ও ভোডাফোন ফাউন্ডেশন এর তহবিলদাতা। উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান ও মহারাষ্ট্রের ৪০০ গ্রামে এই প্রকল্প চালু। ২৬ হাজার শিশু পাচ্ছে প্রযুক্তিগত শিক্ষা। মাঠপর্যায়ে এই প্রকল্পের প্রায় ৮০ জন কর্মী আছেন।

চাভন বলেন, তাঁরা গ্রামগুলো থেকে লিখতে, পড়তে পারেন, এমন ব্যক্তিদের বেছে নিয়েছেন। গ্রামবাসীকে কেবল দুটি কাজ করতে হয়। শিশুরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ট্যাব ব্যবহার করে। আর বড় কাউকে সারা রাত ট্যাবটি চার্জ করতে হয়।

চাভন বলেন, শিশুরা যাতে শিক্ষা-বিষয়ক কর্মসূচি ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে ট্যাব ব্যবহার করতে না পারে, এ জন্য একটি পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়। কেবল ওই পাসওয়ার্ড দিয়ে ঢুকেই শিশুরা ট্যাব ব্যবহার করতে পারে।

প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের সমন্বয়ক নেহা শর্মা বলেন, শিশুরা অনেক কিছু শিখেছে। এটি প্রথম তাদের কৌতূহল মেটায়। তাদের কাছে শেখাটাই আনন্দের। বিবিসি অনলাইন অবলম্বনে

নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053219795227051