রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার পক্ষে? - দৈনিকশিক্ষা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার পক্ষে?

মেহেদী হাসান |

শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের প্রধানতম পূর্বশর্ত শিক্ষার্থী-বান্ধব পরিবেশ। কেননা উচ্চ শিক্ষা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষিতে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ নির্ণীত হয় শিক্ষার্থীরা কতখানি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা-বান্ধব তথা শিক্ষার্থী-বান্ধব পরিবেশের অভাব প্রকটাকার ধারণ করেছে। এ ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরো নাজুক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কার্যত নিশ্চুপ ও ভাবলেশহীন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া বেশকিছু ঘটনা সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এসব ঘটনা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরের মতোই উদাসীনতা প্রকাশ করেছে যা ক্ষোভের মাত্রাকে আরো তীব্রতর করেছে।

কিছু দিন আগে পর পর কয়েকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ ছাত্রদের মনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলে। হলের আবাসিক এক ছাত্রের সাথে তার পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাত্ করার সময় এক পুলিশ সদস্য সিগারেট খাচ্ছিল। তাকে দূরে গিয়ে সিগারেট খেতে বলা হলে ছাত্রটিকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে পুলিশ সদস্যটি। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক অপরাধের শাস্তি হলো স্যরি বলে কর্মে পুনর্বহাল। গুরু পাপে এরূপ লঘু দণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজের জন্য তীব্র অপমানজনক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য অপর একটি সমস্যা হলো বহিরাগতদের অত্যাচার। বহিরাগত সন্ত্রাসীরা নির্বিঘ্নে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতর তাদের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। সন্ধ্যা হলেই তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইলসহ সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। প্রতিনিয়ত বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের ছুরিকাহত ও ছাত্রীদের ইভটিজিং-এর শিকার হতে হচ্ছে। দলীয় পোশাকধারী বেশকিছু বহিরাগতদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল শোডাউনের কারণে ক্যাম্পাসের সড়কগুলোতে চলাচল বিপজ্জনক হয়ে গেছে। এসব বহিরাগতকে প্রতিরোধে প্রশাসনের দৃশ্যত কোনো প্রকার ভূমিকাই নেই। ফলে এরা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। আর এসকল ঘটনার ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো প্রশাসনিক কাজের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো প্রশাসন ভবন (মূল প্রশাসন ভবন)। শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে এখানে এসে। কোনো প্রশাসনিক কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের কোনো প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া যায় না। দুর্ব্যবহার ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক কাজের নিত্যসঙ্গী। শিক্ষার্থীদের প্রতি কর্মচারীদের ব্যবহার এতটাই খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কর্মচারী কর্তৃক শিক্ষার্থী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের এহেন অপমান সকলের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি, শৃঙ্খলা ও শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার মূল দায়িত্বটি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের অধিকার ও নিরাপত্তা বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চুপ। আবার ক্ষেত্র বিশেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকে। ফলে এমতাবস্থায় প্রশ্ন জাগে- বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার পক্ষে?

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে প্রশ্ন করা হলে তার নির্লিপ্ত উত্তর, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়’। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা দিতে না পারলে আপনারা কাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন বা আপনাদের প্রয়োজনীয়তাটি কি?

বেশ কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া আরেকটি ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে গভীর ভাবে রেখাপাত করে। নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান ফটকগুলোতে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী কাউকেই ঢুকতে দেয়নি সরকার দলীয় এসব প্রভাবশালীরা। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে এহেন কাজ অনভিপ্রেত। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠগুলোও আর শিক্ষার্থীদের নেই। খেলার মাঠগুলো স্থানীয়দের দখলে চলে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেখানে খেলাধুলা করার সুযোগ কম। স্থানীয়দের সাথে এ নিয়ে প্রায়ই সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাক-বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও এটি বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্বলতা ও ঔদাসীন্য পড়ালেখার পরিবেশ ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। দিন দিন এই পরিস্থিতি আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে শিক্ষার পরিবেশ ভেঙে পড়বে। তাই বারবার মনে একটিই প্রশ্ন জাগে- ‘কেউ কি দেখার নেই?’

লেখক :শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - dainik shiksha অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ - dainik shiksha বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049481391906738