রাবিতে কর্তৃপক্ষ নয় হল চালাচ্ছে ছাত্রলীগ! - দৈনিকশিক্ষা

রাবিতে কর্তৃপক্ষ নয় হল চালাচ্ছে ছাত্রলীগ!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কর্তৃপক্ষকে তোয়াক্কা না করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ ছাত্র হলে সিট দখলে একচ্ছত্র আধিপত্য চালাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও নিজের গ্রুপে ভেড়ানোর শর্তে দলীয় কর্মী কিংবা পছন্দের ছোট ভাইকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই হলে সিটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে অনেকের আবার সংশ্লিষ্ট হলে সংযুক্তিও থাকে না। কিন্তু তাতে কোনো সমস্যা হয় না ছাত্রলীগের কাছে। শিক্ষার্থীরাও তাই সিটের জন্য কর্তৃপক্ষের বদলে ছাত্রলীগ নেতার কাছে ধরনা দিচ্ছেন। অবস্থা এমন যে হলে সিট পাওয়ার একমাত্র উপায় সংশ্লিষ্ট হল ছাত্রলীগের ‘অমুক’ ভাই। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রফিকুল ইসলাম ও রেদওয়ানুল হক।

প্রতিবেদনে আর বলা হয়, অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ছাত্র হলে প্রায় একই চিত্র। কোনো কক্ষে সিট ফাঁকা হওয়া মাত্রই সেই সিট দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে ছাত্রলীগ। প্রতিটি হলেই পলিটিক্যাল ব্লক করে সেখানে অবৈধভাবে দলীয় কর্মীদের সিট দিচ্ছে তারা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে সিট বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে তাঁদের এসব কর্মকাণ্ড দেখেও দেখছে না হল প্রশাসন। মোট কথা, নেতাকর্মীদের বেপরোয়া আচরণে কোণঠাসা প্রশাসন। তাদের নীরব ভূমিকায় ভুগতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

সম্প্রতি শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক হলে সিট দেয়ার বিনিময়ে এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে রাবি ছাত্রলীগের উপপ্রচার সম্পাদক বাবর তিন হাজার টাকা নেন বলে অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগী বিষয়টি আরেক ছাত্রলীগ নেতাকে জানান। যার ভয়েস কল রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তবে বাবর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত নই।’

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাদার বখশ্, নওয়াব আব্দুল লতিফ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শহীদ হবিবুর রহমানসহ বেশির ভাগ হলেই অবৈধভাবে সিট দখল করে রেখেছে ছাত্রলীগ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহীদ হবিবুর রহমান হলের ৪০৫ নম্বর রুমে অবৈধভাবে থাকছেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিক। নিয়ম অনুযায়ী হলে সিট পাওয়ার জন্য অবশ্যই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে হবে। ওই হলের ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজুল ইসলামের আত্মীয় সাদিক তিন মাস ধরে রাবি হলে থাকছেন বলে জানা গেছে।

তবে মিনহাজ বলেন, ‘সাদিক মাস দেড়েকের মতো হলে থাকছে। মাছরাঙা টেলিভিশনের রাজশাহী প্রতিনিধি গোলাম রব্বানী আমার পরিচিত বড় ভাই। তিনি আমাকে বলেছিলেন সাদিককে অল্প কয়েক দিনের জন্য হলে রাখতে। তাই রেখেছি।’ মিনহাজ দাবি করেন, তিনি বিষয়টি প্রাধ্যক্ষকে জানিয়েছেন।

তবে প্রাধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম জানান, মিনহাজের সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর কোনো কথাই হয়নি। সাংবাদিক রব্বানী বলেন, ‘সাদিক আমার এখানে কাজ শিখছে। সে মিনহাজের আত্মীয়। আমি কাউকে বলিনি হলে তুলতে। আর সাদিক কোথায় থাকে সেটাও জানি না।’

এদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থী সাকিবুল হাসান হবিবুর রহমান হলে উঠতে গেলে মিনহাজ বাধা দেন। পরে হল প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টরের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা হয়। ঠিক এর আগের দিন একই ঘটনা ঘটে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে। গত ১ ফেব্রুয়ারি মতিহার হল থেকে এক অবৈধ শিক্ষার্থীকে বের করে দেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলী আসগর। পরে ওই শিক্ষার্থীকে আবার অবৈধভাবে সেই রুমেই স্থান দেয়া হয়। যদিও ছাত্রলীগ তখন দাবি করেছিল প্রক্টর ওই শিক্ষার্থীকে হলে তুলে দিয়েছেন; কিন্তু প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর তা করেননি বলে জানিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশ না করে একজন হল প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘গায়ের জোরে কিংবা দলে ভারী—যে কারণেই হোক না কেন, নেতাকর্মীরা হলগুলোতে এসব করে যাচ্ছে।’ তিনি জানান, যারা অবৈধ তাদের হল থেকে বের করে দিতে গেলে বিভিন্নভাবে বাধা আসে।

হলগুলো ঘুরে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা রুমে রুমে গিয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের লিস্ট করেন। তাঁদের পরীক্ষা কবে শেষ এবং কবে তাঁরা হল ছাড়বেন এ সময়গুলো লিখে নেন তাঁরা। পরে এসব শিক্ষার্থী চলে গেলে ওই সিটগুলো দখলে নেয় ছাত্রলীগ। নাম গোপন রাখার শর্তে রাবি ছাত্রলীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতা বলেন, ‘হল কমিটি না থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনাই এসব কিছুর পেছনে দায়ী। নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে কাউকে তোয়াক্কা করছে না তারা।’ শিক্ষার্থীরা জানান, সিটের জন্য হলের নেতাদের কাছে জিম্মি তাঁরা। অনেকেই আবার সিটের জন্য টাকাও দেন এসব নেতাকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমরা দু-এক দিনের মধ্যেই হলের দায়িত্বে থাকা নেতাকর্মীদের নিয়ে বসব। হলগুলোতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি যেন বজায় থাকে আমরা সে চেষ্টাই করব।’

হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক রেজাউল করিম বকসী বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে শুনেছি। দু-এক দিনের মধ্যেই উপাচার্যের সঙ্গে হল প্রাধ্যক্ষরা বসে এগুলো কীভাবে বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049488544464111