রাবিতে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়েও নিশ্চিত হয়নি গুণগত গবেষণা - দৈনিকশিক্ষা

রাবিতে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়েও নিশ্চিত হয়নি গুণগত গবেষণা

রাবি প্রতিনিধি |

গত পাঁচ অর্থবছরে গবেষণা খাতে সাড়ে ১৭ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। যদিও এ সময়ে গবেষণাকেন্দ্রিক তেমন কোনো অর্জন নেই দেশের পুরনো এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গড়পড়তা অর্থ বরাদ্দ, পর্যবেক্ষণের অভাব ও সমন্বয়হীনতার কারণে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় হলেও এর সুফল মিলছে না।

২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১ পাঁচ অর্থবছর মিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বরাদ্দের পরিমাণ ১৭ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৪ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয় ৪ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ কোটি ৫ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ কোটি ৫০ লাখ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি অর্থবছরেই বেড়েছে গবেষণা বরাদ্দ।

জানা যায়, প্রতি অর্থবছরে গবেষণা বরাদ্দ প্রদানের লক্ষ্যে শিক্ষকদের কাছ থেকে গবেষণা প্রকল্পের প্রস্তাব নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেসব প্রস্তাব থেকে বাছাইকৃত প্রকল্পের বিপরীতে গবেষকপ্রতি ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন গবেষকরা। শিক্ষকদের গবেষণা প্রতিবেদনগুলো জমা নেয়ার পর সেগুলো স্তূপ করে রাখা হয়। ব্যক্তি উদ্যোগে হাতে গোনা দু-একটি জার্নালে প্রকাশ করা হলেও অধিকাংশ গবেষণার শেষ পরিণতি ঘটে প্রতিবেদন স্তূপে।

শিক্ষকরা বলছেন, নিম্নমানের গবেষণা ও তা প্রকাশের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকার কারণে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ গবেষণাই আলোর মুখ দেখে না। অপ্রকাশিত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা দেশ ও জাতির কোনো কাজে আসছে না। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. রেদওয়ানুর রহমান বলেন, গবেষণা প্রকল্প শেষ হলে নাম লিপিবদ্ধ করে রিপোর্টগুলো স্তূপ করে রাখা হয়। কেউ খুলেও দেখে না সেগুলো। অন্যদিকে প্রকাশনার জন্য যে খরচ হয় সেটি ব্যক্তিগত অর্থ থেকেই ব্যয় করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ হাজার টাকাও পান না গবেষক। এজন্য অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। গবেষণার ক্ষেত্রে আনপাবলিশড ডাটার কোনো মূল্য নেই বলে দাবি তার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গবেষণা প্রকল্পের হাতে গোনা যে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তার বেশির ভাগ আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জার্নালে। সামাজিক বিজ্ঞান, কলা অনুষদ, বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ, আইন অনুষদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ, কৃষি অনুষদসহ ছয়টি অনুষদ ও ইনস্টিটিউটের জার্নালে দু-একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। যদিও বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে জায়গা করে নিতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের জার্নালে প্রকাশের প্রয়োজন পড়ে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম বলেন, প্রকল্প নেয়ার সময় শর্ত জুড়ে দেয়া হয়, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গবেষণাটি প্রকাশ করা যাবে না। গবেষণা প্রকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাগ্রহ ও শর্তের কড়াকড়িও অনেকটা দায়ী।

অন্যদিকে মানহীন গবেষণার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের একজন অধ্যাপক তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, প্রকাশ উপযোগী হতে গেলে সে রকম ফাইন্ডিংসও দরকার। তড়িঘড়ি করে শেষ করা গবেষণা প্রকল্পের প্রতিবেদনগুলোয় যে পরিমাণ অসংলগ্নতা থাকে, তাতে সেটি প্রকাশযোগ্য থাকে না। অনেকে চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নেন, প্রতিবেদন মূল্যায়ন করতে গিয়ে এসব দেখতে পেয়েছেন তিনি। এসবের বাইরে কিছু মৌলিক গবেষণাও চোখে পড়েছে, যেগুলো প্রকাশ উপযোগী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার বিষয়গুলো দেখভাল করা হয় প্রশাসনিক ভবনের একাডেমিক শাখা থেকে। একাডেমিক শাখার উপরেজিস্ট্রার আখতার হোসেন বলেন, গবেষণা প্রকল্প শেষ হওয়ার পর একাডেমিক শাখা-২, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সেমিনারকক্ষ ও অনুষদ কার্যালয়ে একটি করে অভিসন্দর্ভ জমা দেন গবেষক। সেখানেই গবেষক ও শিক্ষার্থীরা পড়ার সুযোগ পান। আসলে প্রকল্প দেয়ার সময় প্রবন্ধ প্রকাশ করতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই। তাই প্রকল্পের অধিকাংশ গবেষণা শেষ হওয়ার পর কোনো জার্নালে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেয়া হয় না। অনুষদভিত্তিক দু-একজন গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, তবে সেটি নিজ দায়িত্বে। তার মধ্যে অনুষদগুলোর জার্নালে কিছু প্রবন্ধ প্রকাশ হয়। তবে সব মিলিয়ে ঠিক কী পরিমাণ প্রবন্ধ প্রকাশ হয় সেগুলোর হিসাব নেই।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, গবেষণা প্রকল্পের প্রতিটি থেকে কমপক্ষে একটি করে পেপার যাতে প্রকাশ করা হয় সে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া ওই গবেষণা প্রকাশের ব্যয়ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে কীভাবে করা যায় সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039699077606201