আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম ওরফে হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসা কর্তৃপক্ষ রেলের জায়গা অবৈধ দখলে রাখতে আদালতে মামলা দায়েরের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে। চট্টগ্রাম আদালতের হাটহাজারী সহকারী জজ আদালতে ঘোষণা ও স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য অপর মামলা (নং ২৫৪/২০১৩) দায়ের করা হয়েছিল। মামলাটি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। তবে এ মামলার বাদী ছিলেন মাদরাসার মহাপরিচালক প্রয়াত শাহ আহমদ শফী। এ মামলার মাধ্যমে রেল কর্তৃপক্ষসহ ওই এলাকায় থাকা লিজ গ্রহীতাদেরও বিবাদী করা হয়েছে। রেলওয়ে ভূসম্পত্তি লিজ প্রদান বিধিমালা অনুযায়ী রেল ভূমি বরাদ্দ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে রেলভূমি দখলে রাখা ও লিজ প্রাপ্তির আবেদন সম্পূর্ণ অবৈধ বলে রেলওয়ের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ও প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে স্বল্প পরিসরে মাদরাসাটি পরিচালনা শুরু হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিত্যক্ত ভূমি হিসেবে উল্লেখ করে বাদী রেলভূমি অবৈধভাবে দখলে রাখার আবেদন জানিয়েছিল। মাদরাসার আবেদন অনুসারে ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের ১ একর ৬০ শতক জায়গা হাটহাজারী মাদরাসার নামে রেজিস্ট্রি কবলায় (নং-৭৩৯, তাং ১৫/৩/১৯৯৩) অনুযায়ী আহমদ শফী মাদরাসার নামে ভূমিটি হস্তান্তর করেন। তবে ১ একর ৬০ শতক জায়গার মধ্যে ১৯ শতক জায়গা বিভিন্ন ব্যক্তির ঘরবাড়ি রয়েছে বলে দাবি করেন। এমনকি রেল কর্তৃপক্ষের কাছে এসব জমি অবৈধ দখলদার অপসারণ করে হস্তান্তর করার দাবিও জানানো হয়েছে।এদিকে, রেলের নিজস্ব লে আউট প্ল্যানের লাইসেন্স করা প্লট রয়েছে হাটহাজারীর আলীপুর এলাকায়। এখানে মোট জায়গার পরিমাণ ১ একর ৩১ শতক। এ জমি লিজ পাওয়ার জন্য রেলের নিকট আবেদন করা হয়। খাজনা পরিশোধ শর্তে বাংলা ১৪২০ এর ৩১ চৈত্র পর্যন্ত খাজনা রেলকে পরিশোধ করেছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ, যা ভোগ দখলেও রয়েছেন মামলার বাদী আহমদ শফী। একই এলাকার রেলের আরেকটি লে আউট প্ল্যানে ১ একর ৭৩ শতক জায়গা কৃষিভূমি এবং ৮০ শতক জায়গা জমি ও পুকুর বিদ্যমান রয়েছে।
উল্লেখিত এ জায়গা রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির উদ্দিন আহমেদের নামে লিজকৃত ছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু অবৈধভাবে কবির উদ্দিন আহমদ রেলের এ লিজকৃত জায়গা মাদরাসার কাছে ছেড়ে দিয়ে ব্যক্তিগত আয় বৃদ্ধি করেছেন। লিজ বলবত থাকা পর্যন্ত মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এ ভূমির খাজনা পরিশোধ করেছে। ২০১০ সাল পর্যন্ত কবির উদ্দিন আহমেদ এ লিজ গ্রহণ করলেও অবৈধভাবে মাদরাসার কাছে হস্তান্তরের পর মারা যান। যেহেতু ২০১০ সাল পর্যন্ত পুকুর ও জায়গা লিজ বলবত থাকলেও লিজ গ্রহীতার মৃত্যুর কারণে ও রেলের বিধান অনুযায়ী লিজ বাতিল হয়ে যায়।
২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ১ নবেম্বর আহমদ শফী এই ভূমি লিজের জন্য আবেদন করেন। ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি রেলের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে অবৈধভাবে মামলার বাদী দখলে থাকার বিষয়টি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই আহমদ শফী বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা পাহাড়তলীর দফতরে যোগাযোগ করে উল্লেখিত আবেদনের পক্ষে লিজ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। পাহাড়তলীর বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, রেল যে কোন ভূমি লিজ দেয়ার সময় পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়া কার্যকর করে লিজ গ্রহীতাদের নিকট হস্তান্তর করেন। উল্লেখ্য, মৎস্যচাষের জন্য জলাশয় বা পুকুর পাড় পাঁচ বছর মেয়াদে লিজ প্রদান করার বিধান রয়েছে।
২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুলাই মাহবুবুল আলম তালুকদার ও মোঃ মুসার নামে ১ একর ৩০ শতক জায়গা লিজ দেয়া হয়। বাংলা ১৪১৫ থেকে ১৪১৯ সাল পর্যন্ত এবং বাংলা ১৪২০ থেকে ১৪২১ সাল পর্যন্ত প্রত্যেকের নামে ১১ হাজার ৮০১ টাকা পেঅর্ডারের মাধ্যমে গ্রহণ করে হাটহাজারী স্টেশন এলাকার এই ভূমি বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুলাই এবং ২৬ আগস্ট লিজকৃত জায়গার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার চেষ্টা চালান আহমদ শফী। অবশেষে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে রেল ভূমি দখলে রাখতে এই অপর মামলাটি করা হয়েছিল।
এ মামলায় হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক প্রয়াত আহমদ শফী বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা/ পূর্ব, প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা/পূর্ব, রেলের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক, হাটহাজারীর আলীপুর এলাকার মৃত মোঃ সুলতানের ছেলে আবুল কালাম, হাটহাজারী রেল স্টেশনের দক্ষিণ পাশের খান মনজিলের শাহ আলম, হাটহাজারি ফটিকা এলাকার অলি মিয়ার পুত্র মুসা মিয়া ও উত্তর মার্দাশা বদিউল আলম হাট এলাকার মৃত সুলতান আহমদ তালুকদারের পুত্র মাহবুবুুল আলম তালুকদারের নামে এ মামলাটি দায়ের করেছেন।