লালমনিরহাটে পাটগ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা অর্জনে সরকারি উপবৃত্তির শতভাগ টাকা না পেয়ে অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা এজন্য সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন। আবার কেউ কেউ এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলার ১৩৪টি বিদ্যালয়ে উপবৃত্তির চার কিস্তি পরিশোধের জন্য মোট ৩ কোটি ৭২ লাখ ৩৮ হাজার ৩০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই চার কিস্তি হল গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই কিস্তি এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দুই কিস্তি। বরাদ্দকৃত এই টাকা ১১ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হলেও তা হিসেবে থেকে কম দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত একজন প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থী শুরুতে ৩০০ টাকা ও পরবর্তীতে ১ম শ্রেণীতে সে আরও ৬০০ টাকাসহ মোট ৯০০ টাকা পাবে। আর যে ১ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে সে পাবে ৬০০ টাকা। ২য় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত একই পরিবারের একজন শিক্ষার্থী হলে সে চার কিস্তিতে পাবে এক হাজার ২০০ টাকা, দু’জন হলে এক হাজার ৬০০ টাকা এবং তিনজন হলে তিন হাজর টাকা পাবে। উপবৃত্তির এ টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং শিক্ষা অফিস কর্তৃক নিয়োগকৃত একজন ট্যাক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে স্ব-স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকের নিকট প্রদান করবেন। কিন্তু উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হলেও অপেক্ষাকৃত কম টাকা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পাটগ্রামের কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, তাদের সন্তানের চার কিস্তির যে টাকা দেয়া হয়েছে তা নিতে গিয়ে একদিকে যেমন বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। তেমনি অপরদিকে তাদের নির্দিষ্ট প্রাপ্য থেকে কম টাকা হাতে তুলে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এছাড়াও টাকা দেয়ার সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কেউ উপস্থিত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
উপজেলার সোহেলবাগ এলাকার বাসন্তী নামে এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, তার দুই সন্তান সোহেলবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। এদের মধ্যে সন্তষী ৪র্থ শ্রেণী আর বাধন পড়ে প্রাক প্রাথমিকে। কিন্তু সন্তষী এবং বাধনসহ দু’জনকেই নিয়মের থেকে কম টাকা দেয়া হয়েছে। পার্শ্ববর্তী এলাকার মজিবর রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান, তার নাতনি আদরী নাজির গোমানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্রী। তাকে দেয়া হয়েছে ৬০০ টাকা। একই অভিযোগ করেন একই বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী মোরশেদুলের মা মর্জিনা। তাকেও ৬০০ টাকা দেয়া হয়েছে।
এদিকে আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি এক হাজার ২০০ টাকার স্থলে এক হাজার ১০০ টাকা, ৯০০ টাকার স্থলে ৮০০ টাকা, ৬০০ টাকার স্থলে ৫০০ টাকা করে শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের কম দেয়ার ব্যাপারটি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা অস্বীকার করলেও। শুক্রবার বিকালে পাটগ্রাম উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে বক্তব্য দিতে অপরাগত জানিয়ে বলেন, আগামী রোববার অফিসে আসেন কথা হবে।