র‌্যাগিং : শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

র‌্যাগিং : শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। র‌্যাগিং ও আবাসিক হলের ডাইনিং ম্যানেজার হিসাবে পছন্দের লোক নিয়োগ নিয়ে জটিলতায় এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে স্থায়ী বহি

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। র‌্যাগিং ও আবাসিক হলের ডাইনিং ম্যানেজার হিসাবে পছন্দের লোক নিয়োগ নিয়ে জটিলতায় এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে স্থায়ী বহিষ্কারসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া এবং সার্টিফিকেট স্থগিত রাখা হয়েছে। শিক্ষাজীবনের কালো দাগ থেকে মুক্তি পেতে অনেক শিক্ষার্থী একাডেমিক কাউন্সিলে আবেদনও করেছেন।

ডাইনিং ম্যানেজার নিয়োগে কুয়েটের লালন শাহ হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনকে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ৩০ নভেম্বর কয়েকজন শিক্ষার্থী ড. সেলিমকে বাড়ি যাওয়ার পথে গতিরোধ করে এবং তাকে তার কক্ষে যেতে বাধ্য করে। এরপর ওইদিন বাসায় ফিরে ড. সেলিম মারা যান। পরিবার ও শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের অভিযোগ-মানসিক চাপ দেওয়ায় ইইই বিভাগের প্রফেসর ড. সেলিম মারা যান। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পায়। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে কুয়েক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ চার ছাত্রকে আজীবন বহিষ্কার এবং ৪০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে পোস্টার-ফেস্টুন সাঁটানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

কুয়েটের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. ইসমাইল সাইফুল্লাহ বলেন, শিক্ষক মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি সম্প্রতি উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪৪ জন শিক্ষার্থীকে শোকজ করা হয়। ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি শোকজের জবাব যাচাই-বাছাই করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। এরপর সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শাস্তির বিষয়ে সব শিক্ষার্থীকে ই-মেইলে জানানো হয়েছে। একাডেমিক কাউন্সিলের কাছে অনেক শিক্ষার্থী আপিলও করেছেন।

কুয়েটের আজীবন বহিষ্কার চার শিক্ষার্থী হলেন-কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৩ ব্যাচের সাদমান নাহিয়ান সেজান, একই বিভাগের ১৬ ব্যাচের রিয়াজ খান নিলয় এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬ ব্যাচের হাসান আব্দুল কাইয়ুম ও মোহাম্মদ কামরুজ্জামন (রাজ্জাক)। এর মধ্যে সেজান কুয়েট ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক।

কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫ ব্যাচের তাহমিদুল হক ইশরাক ও একই বিভাগের ১৬ ব্যাচের মাহমুদুল হাসান, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫ ব্যাচের সাদমান সাকিব ও এএসএম রাগিব আহসান মুন্না, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬ ব্যাচের মাহিন মুনতাসির, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬ ব্যাচের মীর জামিউর রহমান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১৩ ব্যাচের রুদ্রনীল সিংহ শুভকে দুই শিক্ষাবর্ষের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে তাদের চিরতরে বহিষ্কার করা হয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭ ব্যাচের আনিকুর রহমানকে কুয়েট থেকে এক শিক্ষাবর্ষের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আবাসিক হল থেকেও চিরতরে বহিষ্কার করা হয়।

২২ শিক্ষার্থীকে এক শিক্ষাবর্ষের জন্য বহিষ্কার করা হলেও শর্তসাপেক্ষে শাস্তি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা হলেন-ফয়সাল আহমেদ রিফাত, ইমরান হোসেন আওয়াল, খালিদ সাইফুল্লাহ শুভ্র, ফাইয়াজ রহমান, নূর মোহাম্মদ, নাইমুর রহমান অন্তু, সাবির জোয়ারদার, মাহবুবুর রহমান রাফি, আতিকুর রহমান, সাদিকুল ইসলাম, নাজমুস সাকিব সিফাত, গোলাম কিবরিয়া, ওসমান ফারুক, সাগর তরফদার, প্রান্ত কর্মকার, সাফাত হাসান, মানিক কুমার সরকার, আমিনুল ইসলাম, মুহিব্বীর হোসেন সরদার, ইমতিয়াজ আহমেদ, সাফায়েত মাহবুব ও আনোয়ার হোসেন সাকিব। ১০ শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। তারা হলেন আহসানুল আবেদীন, কবির হোসেন, শুভ মন্ডল, শাহরিয়ার আহমেদ মুশফিক, ফয়সাল কবির ফাহিম, শাফিন আহমেদ, আদনান ইসলাম, সাকিব সরদার, সানজিদুল ইসলাম ও সাদাফ হেলাল।

এদিকে খুবির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে রাতভর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি ইংরেজি বিভাগের কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে র‌্যাগিং করা হয়। এ ঘটনায় ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর পাঁচ শিক্ষার্থীকে শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে খুবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান রাজা, রাজবর্মণ বিধান, মিনহাজ উর রহমান ও সাবেরুল বাশার নিরবের সার্টিফিকেট ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে রাজা ও বিধানকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। এছাড়া একই অভিযোগে শিক্ষার্থী ফাহাদ রহমান অঝোরকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। খুবির ছাত্রবিষয়ক পরিচালক শরীফ হাসান লিমন জানান, অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হয়েছে। করোনা সংক্রমণ, ৫-৬ মাস উপাচার্য না থাকা এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত কারণে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হয়েছে।