র‌্যাঙ্কিং : কেনো ও কীভাবে - দৈনিকশিক্ষা

র‌্যাঙ্কিং : কেনো ও কীভাবে

বোরহানুল হক সম্রাট |

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের র‌্যাঙ্কিং বা ক্রম তালিকা কেনো করা হয়? এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- ভালোমন্দের একটা হিসাব বের করা, যাতে ওই শিক্ষালয় সম্পর্কিত ও সংশ্লিষ্ট সবাই নিজেদের অবস্থানটা জানতে পারেন। সে হিসেবে পথচলতে, সিদ্ধান্ত নিতে, নিজেদেরকে এগিয়ে নিতে, প্রয়োজনে কাঠামোগত সংস্কার করার ভাবনাটাও সবাই পেয়ে যান। এখন এই যে ভালোমন্দের সনদ দেয়ার একটা প্রচেষ্টা, সেটা করার অধিকার বা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে কার।

সারাবিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ নিয়ে শীর্ষ সারির র‌্যাঙ্কিং যারা করেন তাদের নিয়েও নানা সমালোচনা রয়েছে। র‌্যাঙ্কিং এর প্রক্রিয়া নিয়ে কথা ওঠে। কখনো কখনো যখন মনের মতো হয় না, তখন তার সমালোচনা করেন পেছনে পড়ে যাওয়া অথবা এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই যুক্ত হতে না পারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। 

যেমন ধরুন- বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্রহণযোগ্য র‌্যাঙ্কিং করে থাকে টাইমস হায়ার এডুকেশন। কিন্তু সেই তালিকায় আমাদের বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম-ই আসেনি বহু বছর। কারণ কী? তারা যেভাবে, যে নিক্তি দিয়ে যাচাই করে সেখানে আমাদের প্রবেশাধিকারই খুব সামান্য। যেমন এ বছর ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিং ২০২৩ এ প্রথম ৬০০ এর মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। এ দুটির অবস্থান ৬০১ থেকে ৮০০ এর মধ্যে। 

সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট বলছে, এ সময়ের জনপ্রিয় ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিং’ ১৩টি পৃথক কর্মক্ষমতা সূচক ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে পয়েন্ট দিয়ে থাকে। যেসব ক্যাটাগরিতে তারা পয়েন্ট দেয়, সেগুলোর মধ্যে শিক্ষকতার জন্যে রয়েছে শতকরা ৩০ ভাগ পয়েন্ট। এই ক্যাটাগরিতে যেসব বিষয় যাচাই করা হয়, সেগুলো হচ্ছে- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, পিএইচডি-ব্যাচেলর ডিগ্রি শিক্ষার্থী অনুপাত, পিএইচডিধারী শিক্ষকদের অনুপাত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়। সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয় শিক্ষকদের নিজস্ব লেখাপড়া ও গবেষণার ওপর। 

আমরা জানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য সরকারের বাজেট আনুপাতিকহারে কত কম! শিক্ষকসংখ্যা হু হু করে বাড়লেও যোগ্য শিক্ষকের আকাল কতোটা! আবার ধরুণ ‘একাডেমিক র‌্যাঙ্কিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ (এ.আর.ডব্লু.ই)’ যেটি পূর্বে ‘সাংহাই যিয়াও টং ইনডেক্স’ নামে পরিচিত ছিলো, তার কথা। এই র‌্যাঙ্কিং ক্যাটাগরি ও পয়েন্ট বিন্যাস হচ্ছে- (১) নোবেল প্রাইজ এবং ফিল্ডস মেডেল জয়ী এলামনাই-এর সংখ্যা (১০ শতাংশ) (২) নোবেল প্রাইজ এবং ফিল্ডস মেডেল জয়ী শিক্ষক ও গবেষকের সংখ্যা (২০ শতাংশ) (৩) বাছাই করা ২১টি সাবজেক্ট, ক্যাটাগরির জার্নাল সাইটেশনে যেসব শিক্ষক এগিয়ে আছেন তাঁদের সংখ্যা (২০ শতাংশ) ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই যদি হয় ক্যাটাগরি তাহলে র‌্যাঙ্কিং এর মধ্যে পড়তে হলেও তো প্রতিষ্ঠানের কাঠামো বা সুনাম তেমনই হতে হবে। 

শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম সহযোগী প্রতিষ্ঠান দৈনিক আমাদের বার্তাকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানী ঢাকার মধ্যকার কলেজের র‌্যাঙ্কিং এর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাথে সাথে তার ভিত্তি কতোটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে সেই ধারণা শুরু থেকেই মাথায় রেখেছে। আমরা চেষ্টা করেছি এমন একটি মানদণ্ড করতে যাতে বাস্তবতার নিরিখে যতোটা সম্ভব বেশি কলেজ এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। ফলে শিক্ষকদের যোগ্যতা আর ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে শিক্ষার পরিবেশ, ফলাফল এসব নিয়ে আমরা যথাসম্ভব মাঠপর‌্যায়ে অনুসন্ধানের চেষ্টা চালিয়েছি। 

যদি আবার ফিরি বিশ্বের নানা র‌্যাঙ্কিং নিয়ে, তাহলে আমরা আরেকটি বিষয় দেখতে পাবো। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংয়ে টিএইচই যে ফর্মুলা বা সূত্র ব্যবহার করে সেখানে তারা রেপুটেশন বা সুনামের জরিপ চালায়। হাজার হাজার মানুষকে জিজ্ঞেস করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কেমন। আবার গবেষণার অংশেরও অধিকাংশ (৬০ শতাংশ বা মোট স্কোরের ১৮ শতাংশ) আসে রেপুটেশন বা সুনামের জরিপ থেকে। হাজার হাজার গবেষককে প্রশ্ন করা হয়, কোন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেরা বলে তাঁদের ধারণা। দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তার সাংবাদিক ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় শতকরা ২৫ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিন উপস্থিত হয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় জনমতের খবর নিয়েছেন।
 
৩০৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের রাজধানী ঢাকায় প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। নানা বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে এখানে বাস করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেখানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠদান প্রক্রিয়াসহ ২১টি বিষয় যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করেছি প্রথমবার কলেজ র‌্যাঙ্কিংয়ের মতো দুরূহ কর্মযজ্ঞের পথে হাঁটতে। আমাদের আশা, এটা যুগযুগ ধরে চলতে থাকবে, কলেবর বৃদ্ধি হবে। 

পৃথিবীর কোনো র‌্যাঙ্কিং সমালোচনার উর্দ্ধে নেই। তবে সবার-ই চেষ্টা সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার। সেই প্রচেষ্টায় আমরাও এক সঠিক মাপকাঠি নির্ণয়ের ঝুঁকি নিয়েছি। সবার আন্তরিক সহযোগিতায় প্রথম ধাপের র‌্যাঙ্কিং সম্পন্ন করা সম্ভব হলো।  

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল    SUBSCRIBE   করতে ক্লিক করুন।

শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী তীব্র সেশনজটের মহাশঙ্কা - dainik shiksha তীব্র সেশনজটের মহাশঙ্কা কলেজে ভর্তি : অতি চালাকদের শিক্ষাবোর্ডে ধরনা! - dainik shiksha কলেজে ভর্তি : অতি চালাকদের শিক্ষাবোর্ডে ধরনা! ক্যাম্পাস খুললে শিক্ষকরা কর্মসূচি চালু রাখবেন - dainik shiksha ক্যাম্পাস খুললে শিক্ষকরা কর্মসূচি চালু রাখবেন প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে কোটা, যা জানালেন সচিব - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে কোটা, যা জানালেন সচিব কলেজে ভর্তির সময় বাড়লো, ক্লাস শুরু ৬ আগস্ট - dainik shiksha কলেজে ভর্তির সময় বাড়লো, ক্লাস শুরু ৬ আগস্ট স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর - dainik shiksha স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056920051574707