ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বরগুনার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। এতে ডুবে গেছে ওইসব এলাকার ঘরবাড়ি। এছাড়াও জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ভেসে গেছে মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে মুগডাল, চিনা বাদাম এবং ভুট্টার ক্ষেত।
আম্ফানের প্রভাবে বরগুনায় বুধবার (২০ মে) সন্ধ্যায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলা শহর। শত শত দোকানে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে কোটি টাকার মালামাল। পানিতে থৈ থৈ করছে নিম্নাঞ্চল, ডুবে গেছে বসতবাড়ি ও ফসলের ক্ষেত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে চালের আড়ত, ইলেকট্রনিক্সের দোকান, ফার্মেসি, কাপড়ের দোকান, কসমেটিকসের দোকানসহ শহরের কয়েকশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।
বরগুনার বিভিন্ন উপজেলার অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার পাথরঘাটা উপজেলার গাব্বাড়িয়া, পদ্মা, খলিফার হাট, মাছের খাল, কালমেঘা, কাঁঠালতলীসহ বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা, বুড়িরচর, ছোট লবণগোলা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জলোচ্ছ্বাসের পানি প্রবেশ করেছে।
বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ, পূর্ব সফিপুর এবং বামনা লঞ্চঘাট, অযোদ্ধা, কলাগাছিয়া বড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী কাঁঠালতলী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মনমথ রঞ্জন খরাতী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে দুইটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে এই দুই গ্রামের মাছের ঘের ভেসে অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও দুই গ্রামের অন্তত দুইশ একর জমির মুগডাল সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সোহেল রানা দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, এই ইউনিয়নের কুমিরমারা এলাকায় বেশকিছু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ শুরু হয়েছে।
বরগুনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আহমেদ দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল রাতে বরগুনায় সাড়ে ১১ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকা থেকে ইতোমধ্যেই পানি নেমেও গেছে। আমরা ভেঙে যাওয়া বাঁধ দ্রুত মেরামত করার জন্য কাজ শুরু করেছি।
এদিকে বরগুনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, সদর উপজেলার একটি মুরগি খামারের ৮শ মুরগি জলোচ্ছ্বাসের কারণে মারা গেছে। এতে এক লাখ ২৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও তালতলী উপজেলার একটি গাভীর খামারে ক্ষতি হয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকার। আরও দুইটি মুরগির খামারে ক্ষতি হয়েছে ছয় লাখ টাকার। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরগুনায় ক্ষতি নিরূপণের তালিকা চলমান রয়েছে বলেও দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান তিনি।
বরগুনা জেলা ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক দেওয়ান সোহেল রানা দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর আমি বরগুনা সদর উপজেলার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ নিশানবাড়িয়া এবং চালিতাতলা এলাকাসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখেছি। এছাড়াও বেতাগী উপজেলার বদনিখালী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছি। এসব এলাকায় কিছু গাছপালা ভেঙে উপড়ে পড়েছিল, তা আমরা অপসারণ করেছি। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে এসব এলাকায় তেমন কোনো ক্ষতিসাধন হয়নি।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, আমরা আগে থেকেই সতর্ক থাকায় ও যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করায় জেলায় তেমন কোনো ক্ষতিসাধন হয়নি। তারপরও আমরা জেলার ক্ষতির তালিকা নিরূপণের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।