করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’-এর প্রাদুর্ভাব বাড়ায় ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য অমর একুশে বইমেলা হবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। নির্ধারিত সময় পার হলেও শঙ্কিত প্রকাশকদের অনেকেই এখনো স্টলের ভাড়া পরিশোধ করে নির্ধারিত নিয়মে আবেদনও করেননি। তবে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি বলছে, স্বাভাবিক গতিতেই এগিয়ে চলছে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও অবকাঠামো নির্মাণের কাজে শ্রমিকদের ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।
গত ২৪ নভেম্বর বইমেলায় অংশগ্রহণের আবেদন আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। যেখানে বলা হয়, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে স্টলের ভাড়া পরিশোধ করে নির্ধারিত নিয়মে আবেদন করতে হবে প্রকাশকদের। নির্ধারিত তারিখে প্রকাশকদের অনেকে টাকা জমা না দেওয়ায় পরে ১৩ ডিসেম্বর আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে স্টলের ভাড়া পরিশোধের সময় বাড়ায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান। সেখানে বলা হয়, ‘২০ ডিসেম্বরের মধ্যে অর্ধেক ভাড়া পরিশোধ এবং ৫ জানুয়ারির মধ্যে বাকি টাকা পরিশোধ করতে হবে প্রকাশকদের।’ তাতেও প্রকাশকদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে গত ৫ জানুয়ারি পুনরায় ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত স্টলের ভাড়া পরিশোধের সময় বাড়ায় একাডেমি।
প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলা আয়োজন নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা। করোনা পরিস্থিতি বাড়ায় মেলা আয়োজনের ব্যাপারে সরকারের মনোভাব পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। ইতিমধ্যে স্টল ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়ে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে। সে ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রকাশকরা।
গতকাল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরেজমিনে দেখা গেছে, মেলার অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করছে শ্রমিকরা। একাডেমিতেও চলছে মেলা আয়োজনের দাপ্তরিক কর্মব্যস্ততা।
একাডেমির একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, আয়োজক প্রতিষ্ঠানের কেউ কেউ মেলা অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। ইতিমধ্যে বইমেলা সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ করোনায় আক্রান্তও হয়েছেন। প্রকাশকদের মাঝেও করোনার ভীতি রয়েছে। এই অবস্থায় বইমেলা আয়োজন করা হবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেই জানানো হবে। তবে মেলার আয়োজক হিসেবে বাংলা একাডেমি প্রস্তুতি নেওয়ার কাজ চলমান রেখেছে।
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ গতকাল সোমবার বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকেই বইমেলা শুরুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত আমরা আশা করছি বইমেলা হবে।’
প্রকাশকদের কাছ থেকে স্টলের ভাড়া পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত টাকা পরিশোধের সময় রয়েছে। অনেকেই টাকা জমা দিচ্ছেন। ১৩ তারিখের পর আমরা বুঝতে পারব, কতজন প্রকাশক টাকা দিয়েছেন? এখনই এই বিষয়ে বলা যাবে না।’
প্রকাশকদের স্টল ভাড়া কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সরকার যদি ভর্তুকি দেয়, তবে প্রকাশকদের যারা টাকা জমা দিয়েছেন, তাদেরকে স্টলের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এখনো পর্যন্ত স্বাভাবিক নিয়মেই ভাড়ার টাকা গ্রহণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘করোনা বাড়ছে, অন্যান্য কর্মকাণ্ড কিন্তু থেমে নেই। আমরা আশাবাদী বইমেলা সঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই মেলায় আসবেন এবং সফল একটি বইমেলা হবে। এখন সরকারের কাছ থেকে কী সিদ্ধান্ত আসে, সেটা আরও ১০/১৫ দিন পরে হয়তো বোঝা যাবে।’