ফরিদপুরে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই ভাষা শহীদদের স্মারক শহীদ মিনার। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ভাষার জন্য রক্তদানের ৬৯ বছর এবং ভাষা ভিত্তিক বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরে এই হলো ফরিদপুরের বাস্তবতা।
ফরিদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮৮৮টি। এর মধ্যে শহীদ মিনার আছে ৪৫৮টি বিদ্যালয়ে। অর্থাৎ শহীদ মিনার আছে প্রায় ৫২ ভাগ প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (৫১ দশমিক ৫৭)। নেই প্রায় ৪৮ শতাংশ বিদ্যালয়ে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের কোনো বরাদ্দ নেই, তবে একটি নির্দেশনা এসেছে। সব বিদ্যালয়ে একই ধরন, আকার ও আয়তনের শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।”
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় ও মাদরাসার শহীদ মিনার সংক্রান্ত আংশিক তথ্য পাওয়া গেছে। ফরিদপুরের ৯টি উপজেলার মধ্যে সদর, ভাঙ্গা ও সালথা উপজেলার তথ্য ওই কার্যালয় থেকে পাওয়া যায়নি।
বাকি ৬টি উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বোয়ালমারী উপজেলায় ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯টিতে শহীদ মিনার আছে, সাতটিতে নেই। ১৭টি মাদরাসার মধ্যে একটিতে আছে, ১৬টিতে নেই। আলফাডাঙ্গা উপজেলার ২০টি মাধ্যমিক স্কুলের মধ্যে ১১টিতে শহীদ মিনার আছে। সাতটি মাদরাসার কোনোটিতেই শহীদ মিনার নেই। সদরপুর উপজেলার ২৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৬টিতে আছে। এ উপজেলার পাঁচটি মাদরাসার মধ্যে কোনোটিতেই শহীদ মিনার নেই।
মধুখালী উপজেলায় ৪২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২২টিতে শহীদ মিনার আছে এবং ১১টি মাদরাসার মধ্যে তিনটিতে শহীদ মিনার আছে। চরভদ্রাসন উপজেলার সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে শহীদ মিনার আছে তবে একটি মাদরাসা থাকলেও তাতে শহীদ মিনার নেই। নগরকান্দা উপজেলার ১৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭টিতে শহীদ মিনার আছে এবং ছয়টি মাদরাসার কোনোটিতেই শহীদ মিনার নেই।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিষ্ণুপদ ঘোষাল বলেন, “আমাদের জাতির জন্য শহীদ মিনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাঙালি চেতনা ও আমাদের জাতিসত্ত্বার প্রথম উন্মেষ ঘটে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ভাষা শহীদদের প্রতি যথার্থ মর্যাদা দিতে হলে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ জরুরি।”
ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি শিপ্রা গোস্বামী বলেন, “৫০ বছরেও আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, এটি আমাদের জন্য লজ্জা। যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত বলে আমি মনে করি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের শর্তের মধ্যে শহীদ মিনার নির্মাণ ম্যান্ডোটরি হওয়া উচিত। ভাবতে অবাক লাগে, যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দেয় সে জাতির দেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।”
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কান্তি বালা পান্না বলেন, “আমাদের কমলমতি শিশু-কিশোরদের মাঝে ভাষা শহীদদের অবদানের কথা ঠিকমতো বুঝাতে হলে অবশ্যই প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু সরকারি নয়, বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও শহীদ মিনার স্থাপনে বাধ্য করতে হবে।”