শিক্ষকদের দুটি পক্ষের দ্বন্দ্বে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের কোলচর এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬ বছর ধরে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। আর পলেস্তারা খসে বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। একতলা ভবনটিতে এলাকার লোকজন মালামাল রাখছে। একটি কক্ষে একটি জেলে পরিবার বসবাসও করছে।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি আব্বাস মোল্লা বলেন, ‘বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হয়েছে। কিন্তু দুপক্ষের দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ। আমি কয়েকবার বিদ্যালয়টি চালুর জন্য উদ্যোগ নিয়েছি কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। এতে এলাকার শিশুরা শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের দাবি, বিদ্যালয়টি এখন যেহেতু সরকারীকরণ হয়েছে, সে ক্ষেত্রে শিক্ষা বিভাগ নতুন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চালু করুক। এরপর আদালত থেকে যে পক্ষ রায় পাবে, সেই পক্ষ এর সুবিধা ভোগ করবে।
তবু বিদ্যালয়টি চালু করে এলাকার বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হোক।’
গত বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির একতলা ভবনের চারটি কক্ষের তিনটিতে পাটকাঠি ও লাকড়ি রাখা হয়েছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় ভবনের মেঝে ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ভেতরে-বাইরে রং ও পলেস্তারা উঠে গিয়ে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। একটি কক্ষে একটি জেলে পরিবার বসবাস করছে। এ সময় গৃহিণী রিনা বেগম ভবনের বারান্দায় বসে রান্না করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এইহানে অনেক দিন ধইরা থাকি।’
বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ১৯৭৫ সালে এলাকার বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আফসার উদ্দীনের নামে ‘শহীদ আফসার উদ্দীন প্রাথমিক বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এটি নিবন্ধিত হয়। শুরুতে আবদুল করিম হাওলাদার নামের এক ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক ও অন্য তিনজনকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। ওই সময় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর পরিচালনা কমিটি নিয়ে এলাকার দুটি পক্ষ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় জাফর আলী ও আবদুস ছাত্তার নামের দুই ব্যক্তি পাল্টাপাল্টি কমিটি করেন। এক পক্ষ বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান নেয়। আর জাফর আলীর পক্ষ সৈয়দ এনায়েত করিমকে প্রধান শিক্ষক ও অপর তিনজনকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়। এরপর ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এলজিইডি সেখানে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে। ভবন তোলার পর দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি নিজেদের শিক্ষক দাবি করায় সেখানে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এরপর প্রায়ই বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ থাকত।