দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাকরিবিধি/প্রবিধির যথাযথ প্রয়োগ ও প্রতিপালন করতে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। কমিশন বলেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তারা অনুমতি ছাড়া কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হতে পারবেন না।
এ ছাড়া গবেষণা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং ডিভাইস ক্রয়ে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর তালিকা প্রণয়নও করতে বলেছে কমিশন।
এছাড়া এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও লাভজনক কোনও কিছু যুক্ত না হওয়ার নির্দেশনা আগে থেকেই রয়েছে।
৪৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লেখা পৃথক তিনটি চিঠিতে এসব অনুরোধ জানানো হয়। ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মো. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
রোববার ইউজিসির পরিচালক (জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগ) ড. শামসুল আরেফিন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
৪৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লেখা চিঠিতে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তা বা কর্মচারী কর্তৃক স্বীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধি/প্রবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ ও প্রতিপালন করা অবশ্য কর্তব্য। চাকরিবিধি/প্রবিধি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিনানুমতিতে অন্য কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিগতভাবে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বা কোনো ধরনের লাভজনক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারেন না। কিন্তু কোনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে কেউ কেউ চাকরিবিধি/প্রবিধি অমান্য করে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে একদিকে যেমন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যাচ্ছেন, অন্যদিকে আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করছেন- যা কমিশনের গোচরিভূত হয়েছে। এমন কর্মকাণ্ড চাকরি বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক স্বার্থে স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধি/প্রবিধি যথায প্রয়োগ, অনুসরণ ও প্রতিপালনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য উপাচার্যগণকে অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালন ও উন্নয়ন খাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চাহিদা মতো প্রতি অর্থবছরে সরকার অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে গবেষণা কার্যক্রম অন্যতম বিধায় কমিশন গবেষণা কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এ খাতে অর্থ বরাদ্দ প্রদান করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাদ্দকৃত অর্থের সাহায্যে গবেষণা প্রকল্প আহ্বান এবং প্রাপ্ত গবেষণা প্রকল্প পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত প্রকল্পের অনুকূলে আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, গবেষণা খাতের অর্থ গবেষণা কার্যক্রমে ব্যয় করার নিয়ম থাকলেও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে, যা কমিশনের নিকট পরিদৃষ্ট হয়েছে। গবেষণা খাতে বরাদ্দকৃত সমুদয় অর্থ শুধুমাত্র নির্বাচিত গবেষণা প্রকল্পের কার্যক্রমে ব্যয়ের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করার অভিপ্রায়ে গত ২৫ জুন কমিশন এবং উপাচার্যগণের মধ্যে Zoom Cloud -এ এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্যগণের মতামতের ভিত্তিতে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমে যাতে সব শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারে, সে লক্ষ্যে উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধাসহ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ডাটা সরবরাহ এবং Soft loan/Grants-এর আওতায় Smartphone সুবিধার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য কমিশন থেকে শিক্ষামন্ত্রীর বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয় বলে জানানো হয় চিঠিতে।
চিঠিতে বলা হয়, অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে সব শিক্ষার্থীর ডিভাইস ক্রয়ে আর্থিক সক্ষমতা নেই, শুধুমাত্র সে সব শিক্ষার্থীর নির্ভুল তালিকা আগামী ২৫ আগস্টের মধ্যে ([email protected]) এই ই-মেইলে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হল।