শিক্ষকরা শত গঞ্জনা সহ্য করে নিরন্তর শিক্ষাদান করে যান - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকরা শত গঞ্জনা সহ্য করে নিরন্তর শিক্ষাদান করে যান

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

করোনাকালে 'প্রণোদনা প্যাকেজ' একটি আলোচিত শব্দ। যদিও অন্য সময়ে জাতির সংকটময় প্রয়োজনে প্রণোদনা প্যাকেজ শব্দযুগল ব্যবহূত হয়ে থাকে। বাজেট আলোচনায় বলা হয়েছে, প্রণোদনা প্যাকেজ চাহিদা মোতাবেক চলমান থাকবে। তাই হয়তো নিকট ভবিষ্যতে বলা হবে- কৃষি, বস্ত্র, শিল্প, পাট, আইটি, ক্ষুদ্র শিল্প, খাদ্য খাত ইত্যাদি প্রণোদনা চেয়েছে- আচ্ছা দিলাম। গার্মেন্ট, ব্যবসা, শ্রমিক, অমুক খাত, তমুক খাত চেয়েছে- ঠিক আছে, তাও দিলাম। শিক্ষা খাত চেয়েছে- এটা রেখে দিলাম, পরে দেখা যাবে। মঙ্গলবার (২২ জুন) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, পত্রিকা, টিভি টকশো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন, ভিডিও বার্তাসহ সব লাইনে শিক্ষকদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের বন্যা বয়ে যাচ্ছে, বিশেষত এই করোনা মহামারিকালে। অনেকে বলে যাচ্ছেন, শিক্ষকরা বসে বসে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন! তাদের কথায় আবেগতাড়িত হয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও ভুলভাবে জেগে উঠেছে। প্রশ্ন রাখছে- তারা বেতন দেবে কেন? বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা আবার ভেতরের খবর না জেনে প্রশ্ন তুলছে- তারা আবাসিক হলে না থাকতে পারলে শিক্ষকরা কোয়ার্টারে থাকছেন কেন? যা হোক, অস্বীকার করার উপায় নেই- করোনাকালে সারাবিশ্বে শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে চলছে। পাশাপাশি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের অভিপ্রায়ে বন্ধ রাখা হয়নি!

অর্থমন্ত্রী বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় অকপটে স্বীকার করেছেন, এ বছরের বাজেট ব্যবসাবান্ধব। ব্যাখ্যায় বলেছেন, ব্যবসা বাড়লে বিনিয়োগ বাড়বে। ফলে হাজারো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- সৃষ্টিতব্য কর্মসংস্থান শুধু কি শ্রমিক শ্রেণির হবে? না, তা তো নয়; উচ্চপদ যেমন- কর্মকর্তা, এক্সিকিউটিভ, হিসাবরক্ষক, প্রোগ্রামার, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, গবেষক, আইটি বিশেষজ্ঞ প্রভৃতি পদও সৃষ্টি হবে। আর এসব পদে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গ্র্যাজুয়েট ছাড়া চাকরি পায় না। অন্যদের মতো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়ূয়ারাও এক বছর পিছিয়ে পড়েছে। তাদের অনেকেই টিউশনি করে নিজের খরচ মিটিয়ে থাকে। করোনাকালে তাও অনেকটা বন্ধ। ফলে তাদের কেউ কেউ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। করোনা পরিস্থিতির শুরুতে শিক্ষার্থীরা দ্রুত বিদ্যাপীঠে ফিরতে পারবে- এ আশায় তাদের ব্যবহূত জিনিসপত্র আবাসস্থলে রেখে বাড়ি চলে গেছে। মেস বা আবাসিক হলে তালাবদ্ধ কক্ষে রাখা তাদের জিনিসপত্র-বইখাতা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে এসব ক্রয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন পড়বে।

করোনা মহামারি আমাদের অনেক নতুন বিষয় শিখতে বা গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। প্রণোদনা প্যাকেজে 'শিক্ষার্থী খাত' সে রকমই একটি নতুন খাত হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের না বাঁচাতে পারলে উচ্চশিক্ষিত জনবল তৈরির খাতে ধস নামতে পারে। ফলে ব্যবসাবান্ধব বাজেটে ঈপ্সিত হাজারো কর্মসংস্থান বিদেশিদের কবজাগত হবে। সংগত কারণেই কষ্টার্জিত অর্থের একটা বিশাল অংশ বিদেশে চলে যাবে। সে জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে কমপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।

এ খাতে দুই-চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কিস্তিতে নগদ অর্থ প্রদান করা যেতে পারে। বাজেটের তুলনায় এ অল্প পরিমাণ অর্থ প্রদানের মাধ্যমে দেশে ভবিষ্যৎ কর্ণধার, মেধাবী শিক্ষার্থীদের একটি বার্তা দেওয়া যাবে- তারা অবহেলিত নয় এবং রাষ্ট্র তাদের ব্যাপারে সজাগ। ফলে এসব সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি অন্যমাত্রার অনুশাসন সৃষ্টি করা সম্ভব হবে, যেটা তাদের নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। সর্বোপরি এ ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা বাঙালি হিসেবে বিশ্বসভায় কারোনাকালীন করণীয় ও মানবতার আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারব।

আমাদের সন্তানরা বিদ্যাপীঠে না গিয়েও একেবারে বসে নেই। শিক্ষকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সীমিত আকারে হলেও শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পাদন করে চলেছে। প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা না নিয়েও নিজ ঘরে বসে শিক্ষকরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পাঠদান করার মতো নতুন ব্যাপারটি রপ্ত করেছেন।

করোনাকালে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বহু শিক্ষক এখন কর্মহীন। বিভিন্ন মাধ্যমের খবরে তাদের হতাশাজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। বাধ্য হয়ে অনেকেই সেজেছেন ফল বিক্রেতা। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক অর্ধবেতনে শিক্ষকতা করে চলেছেন। তদুপরি শিক্ষককুল স্বল্প পরিমাণে হলেও ব্যক্তিগত, প্রতিষ্ঠানের তহবিল বা অ্যালামনাইদের সহায়তায় অতি চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অনেকটা গোপনে অর্থ সহায়তা করে গেছেন বা যাচ্ছেন। দুঃখজনকভাবে এসব খবর জানার প্রয়োজনীয়তা মনে না করেই আমরা নেতিবাচক মন্তব্য করছি।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

একটি মাধ্যমে একজন নিন্দুক সমালোচনায় বললেন, শিক্ষকরা শুধু বসে বসে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। অবশ্য পরক্ষণেই তিনি স্বীকার করলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষককুল কী করতে পারেন সে ব্যাপারে তার কোনো ধারণা নেই! প্রসঙ্গত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয় না। বেতন-ভাতার একটা বড় অংশ প্রতিষ্ঠানের সহযোগী কর্মীরাও নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ অর্থবছরের মোট বরাদ্দের প্রায় ৩০ শতাংশ বেতন ও ২৫ শতাংশ ভাতা সহায়তা হিসেবে ব্যয় ধরা হয়েছে। আর সেখানে শিক্ষককুলের জন্য ব্যয় মোট বেতন-ভাতার অর্ধেকের কাছাকাছি।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

বাস্তবতা হলো, প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণী কর্মকাণ্ডে শিক্ষকদের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ খুবই কম। তারা বিশেষত একাডেমিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন। বিশ্বের সব প্রান্তেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষকদের অধিক মর্যাদা দেওয়ার প্রয়াস লক্ষণীয়। মনুষ্য জাতির শিক্ষক হওয়ার জন্য পরোক্ষভাবে ওইসব বৈশিষ্ট্যের কিয়দংশ ধারণের তাগিদ রয়েছে বটে। সে জন্যই হয়তো আমাদের শিক্ষক জাতি শিক্ষার্থীদের ভুলভ্রান্তি বা আবেগপ্রসূত অন্যায়কে মার্জনা করে ও সামাজিক শত গঞ্জনা সহ্য করে নিরন্তর শিক্ষাদান করে যান।

 
লেখক : ড. মো. মমিনুল ইসলাম,  অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032670497894287