শিক্ষকের প্রিয় শিক্ষার্থী কারা? - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকের প্রিয় শিক্ষার্থী কারা?

ফারজানা ইসলাম |

১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিই। ৮৬ সাল পর্যন্ত সেখানে শিক্ষকতা করার সময় যাঁদের শিক্ষার্থী হিসেবে পেয়েছিলাম, তাঁদের মধ্যে দুজন পরে আমার সহকর্মী হন। একজন আমার বর্তমান বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর অনেককে শিক্ষার্থী হিসেবে পেয়েছি যাঁরা পরে শিক্ষক, উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তা, বড় কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সরকারের আমলার দায়িত্ব পালন করছেন। আবার এমন অনেক শিক্ষার্থী পেয়েছি, যাঁরা হয়তো পেশাগত জীবনে তেমন বলার মতো কিছু করছে না। কিন্তু মানুষ হিসেবে তাঁরা অসাধারণ।

আমার অনেক শিক্ষার্থী পেশাগত জীবনে সরাসরি নৃবিজ্ঞানকে হয়তো কাজে লাগানোর সুযোগ পাননি। অনেকে সাংবাদিকতায় গিয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের চেয়েও ভালো করেছেন। তবে ব্যক্তি হিসেবে তাঁরা নৃবিজ্ঞানের চিন্তা ও চর্চাকে জীবনে গ্রহণ করেছেন। নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের আমরা যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দেওয়ার চেষ্টা করেছি তা হচ্ছে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করা। প্রতিষ্ঠানকে, প্রতিষ্ঠিত ধারণাকে, সমাজের মধ্যে থাকা বিভেদকে আমরা প্রশ্ন করতে শিখিয়েছি। এই যে চর্চা আমরা বিভাগে তৈরি করেছি, তার রেশ আমরা এখনো আমাদের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখতে পাই। আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, আমাদের শিক্ষার্থীরা অন্য যেকোনো বিভাগের চেয়ে একটি বিষয়কে অন্যভাবে দেখে। এটাই আমি মনে করি শিক্ষক হিসেবে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন।ফারজানা ইসলাম। উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশে প্রথম নৃবিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয়। আজ দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকেরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের। তাঁরা তাঁদের শিক্ষার্থীদের কাছে নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন করার শক্তি তৈরি করছেন। এটা জাতিগঠনে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অবদান রাখার একটি ক্ষুদ্র চেষ্টা হিসেবেও আমি মনে করি।

আমার জীবনে সুপ্ত স্বপ্ন হচ্ছে একটি উদারনৈতিক সমাজ গড়া। এ বিষয়ে আমার সত্যজিৎ রায়ের একটি ছবির কথা মনে পড়ে। যেখানে একটি চরিত্রে অভিনয় করা উত্পল দত্ত তাঁর নাতিকে বলছেন, ‘আর যাই হও, কূপমণ্ডূক হইয়ো না।’ এই কূপমণ্ডূকতাকে আমি মনে করি আমাদের দেশের অন্যতম সমস্যা। অনেক ভালো শিক্ষার্থীর পাশাপাশি এমন অনেক শিক্ষার্থী পেয়েছি, যাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় হয়তো জেন্ডার ও সামাজিক বৈষম্য নিয়ে বেশ ভালো জানেন বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনে ও সামাজিক চর্চায় তাঁর কোনো প্রতিফলন দেখতে পাই না। এটাকেই আমি একধরনের কূপমণ্ডূকতা হিসেবে মনে করি। আমি মনে করি, সবার আগে একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে মানবতাবোধ ও শিক্ষা থাকতে হবে।

আমার শ্রেণিকক্ষে কেউ আমাকে প্রশ্ন করলে তা আমি তার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। তা যদি আমার মত ও পথের বিরুদ্ধেও হয়, আমি করার সুযোগ শিক্ষার্থীদের দিয়েছি। আমি মনে করি, মানুষ, প্রকৃতি ও ইতিহাসের ব্যাপারে সহনশীল হতে না পারলে প্রকৃত মানুষ হওয়া যাবে না। সেই শিক্ষাই আমি আমার শিক্ষার্থীদের দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

লেখক: ফারজানা ইসলাম, উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যা​লয়

কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032680034637451