শিক্ষক আর শিক্ষার অধিকার একই সূত্রে গাঁথা - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক আর শিক্ষার অধিকার একই সূত্রে গাঁথা

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

প্রতিবছরের মত এবারও ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য হল, ‘যোগ্য শিক্ষকের অধিকার শিক্ষার অধিকার’। বর্তমান সরকারের শিক্ষাক্ষেত্রে বিশাল অর্জন থাকলেও শিক্ষা ও শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য আজও বিদ্যমান। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মাঝে সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য যেন রাজা ও গৃহস্থের বাড়ির শিক্ষকের মত। কারো কারো এমপিও নেই, তার মানে সে সরকার প্রদত্ত সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যাদের এমপিও আছে তারা পাচ্ছেন না পূর্ণ ঈদ বোনাস, বৈশাখী ভাতাসহ সরকারি শিক্ষকদের মত সুযোগ সুবিধা।

সরকারি প্রাথমিকের সহকারী ও প্রধান শিক্ষদের মধ্যেও রয়েছে বেতন বৈষম্য। পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের থেকে বেতন কম পান। তাঁরা সরকারি কর্মচারীদের মত নন ভ্যাকেশনাল সুবিধা পান না। শ্রান্তি বিনোদন ভাতা ৩ বছরের স্থলে ৪/৫ বছর পর পর পান। তারা সরকারি কর্মচারীদের সদ্যঘোষিত গৃহনির্মাণ ঋণ থেকে বঞ্চিত। সরকারি প্রজ্ঞাপন উপেক্ষা করে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দেওয়া হচ্ছে না মূল বেতনের ১০ শতাংশ।

স্বল্প বেতন ও বিভাগীয় পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় মেধাবী উচ্চ শিক্ষিতরা শিক্ষকতা পেশার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন না। কিছু সংখ্যক মেধাবী এ পেশায় যোগদান করলেও ভাল চাকরির সুযোগের জন্য তাদের মনে থাকে যাই যাই ভাব। আকর্ষণীয় পেশা না হওয়ায় শিক্ষকতায় তাঁরা মনোযোগী হতে পারছেন না। যোগ্য শিক্ষককে শিক্ষকতা পেশায় ধরে রাখতে আকর্ষণীয় বেতন ও পদোন্নতির সুযোগ দিতে হবে।

প্রত্যেক মানুষই সুন্দর জীবনের প্রত্যাশা করে। কেউই দারিদ্র্যের কষাঘাতে ধুঁকে ধুঁকে বাঁচতে চায় না। প্রত্যেকে জীবনে উন্নতি চায়। শিক্ষকতায় উন্নতি নেই বিধায় যোগ্য শিক্ষকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। আর শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে যোগ্য শিক্ষকের শিক্ষা থেকে। শিক্ষকদের পদোন্নতি দেওয়া হলে তাঁদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটি শিক্ষাবান্ধব প্রশাসন গড়ে উঠত।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০ শতাংশ মহিলা শিক্ষককের পদোন্নতি ও আকর্ষণীয় বেতন স্কেল দেওয়া হলে ত্বরান্বিত হবে নারীর ক্ষমতায়ন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারীর নেতৃত্বের পাশাপাশি তৃণমূলে নারীদের ক্ষমতায়ন করা হলে বাস্তবায়িত হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। শিক্ষকদের জবাবদিহিতা থাকবে শিক্ষার্থীদের কাছে। যোগ্য শিক্ষক বাছাই করা উচিত শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে। শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, কিন্তু শিক্ষার্থীকে আকর্ষণীয় পাঠদান করাতে পারছেন না, সে সব শিক্ষককে শিক্ষকতা থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়োগ দেওয়া উচিত। পাড়ায় পাড়ায় ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠছে শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই বললেই চলে। যোগ্যতাবিহীন শিক্ষকের ফলে শিশুদের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বিষয় মুখস্ত করানো হয়। ইংরেজি গ্রামারে যা ৬ষ্ঠ বা ৭ম শ্রেণিতে পড়ানো হয়, তা ১ম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে না বুঝে মুখস্থ করানো হয়। আরবি বিষয়টিও মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার উপযোগী করে মুখস্থ করানো হয়। প্রবাদে আছে ‘মনোবিজ্ঞান ছাড়া শিক্ষা, থলি ছিদ্র ভিক্ষা’।

সরকারি নিয়ন্ত্রণের অভাব ও যোগ্য শিক্ষকের অভাবে কিন্ডারগার্টেন নামক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিশু শিক্ষার্থীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার মূল লক্ষ্য জ্ঞান অর্জন ও বিকাশ না বুঝে মুখস্থ করার ফলে শিশুর জ্ঞান বিকশিত হওয়ার পরিবর্তে সঙ্কুচিত হচ্ছে। শিশু বড় হলে তাদের মধ্যে জ্ঞানের অভাব পরিলক্ষিত হলে অভিভাবকরা বলে থাকেন, ‘ছোট বেলায় অনেক কিছুই পেরেছে, এখন অনেকটা ভুলে গেছে। না বুঝে মুখস্থ করানো হলে জ্ঞান অর্জন তো হবেই না--বরং সেটা ভুলে যাবে। আজ স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরেও আমরা কি পেরেছি যোগ্য শিক্ষক তৈরি করতে? যোগ্য শিক্ষক তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হলে যোগ্য শিক্ষককে অধিকার দিতে হবে। শিক্ষককে অধিকারবঞ্চিত করে শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়ন করা যায় না।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয় না। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপনের জাতীয় কমিটির উদ্যোগে প্রতিবছর শিক্ষার সাথে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা দেওয়া হয়। প্রতিবারের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে ইউনেস্কো, আইএলও, ইউনিসেফ, ইউএনডিপি, গণসাক্ষরতা অভিযান, আইএইচডি, একশান এইড ও বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন সম্মিলিতভাবে দিনটি উদযাপন করে থাকে। দিনটি উদযাপনের জন্য শিক্ষক দিবসে ছুটি ঘোষণা করার আহ্বান জানাই। যোগ্য শিক্ষকের অধিকার, শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়ন হোক এ হোক আজকের প্রত্যাশা।

 

লেখক : আহ্বায়ক, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ এবং প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষা।

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035569667816162