কয়েক বছর ধরে সপরিবারে বসবাস করছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছেন পাবনার বেড়ার মাশুন্দিয়া-ভবানীপুর কে জে বি ডিগ্রি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বনাথ দত্ত। অথচ তিনি কলেজ থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। এ কাজে সহযোগিতা করছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বিশ্বাস এবং বিশ্বনাথ দত্তের ভাই সুনীল দত্ত, ব্যাংক কর্মকর্তা এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। জানা যায়, বিশ্বনাথ দত্ত স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চার-পাঁচ বছর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও এখনো কে জে বি ডিগ্রি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বহাল আছেন। প্রথম প্রথম তিনি কয়েক মাস পরপর হাজিরা দিয়ে যেতেন। এক বছর ধরে তিনি আর হাজিরাও দেন না। অথচ তার ব্যাংক হিসাবে বেতন-ভাতা জমা ও উত্তোলন হচ্ছে যথারীতি।
বিশ্বনাথ দত্তের চাকরির ইনডেক্স নং-৪০৩৩৮৪, সোনালী ব্যাংক, বেড়া শাখা, পাবনার ব্যাংক হিসাব নং-০০২০৬৩২৫১। ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে তার হিসাবে টাকা জমা ও উত্তোলনের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
জানা যায়, বিশ্বনাথ দত্ত তার বড় ভাই সুনীল দত্তের কাছে ব্যাংকের চেকবই স্বাক্ষর করে রেখে গেছেন। প্রতি মাসে বেতন বইয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজেই বিশ্বনাথ দত্তের নামের ঘরে স্বাক্ষর করে বেতন ব্যাংক হিসাবে জমা করার পরে বিশ্বনাথ দত্তের ভাই সুনীল দত্তকে দিয়ে ব্যাংক থেকে সমুদয় টাকা (মাসিক ৪০,৩৫৩ টাকা) উত্তোলন করিয়ে অর্ধেক টাকা নিজেই নিয়ে নেন। এ ছাড়া কলেজ অংশের মাসিক বেতনের ১ হাজার ৯৪৮ টাকার পুরোটাই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বিশ্বাস জাল স্বাক্ষর করে আত্মসাৎ করেন। বেতনের অর্থ গ্রহণের বিনিময়ে ভারতে অবস্থান করেও বাংলাদেশে চাকরি করাকে বৈধতা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বিশ্বাস।
কলেজেরই একজন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘বিশ্ব নাথ বহুদিন ধরে পরিবারসহ ভারতে থাকেন। এক বছর হলো কলেজে আসেন না, অথচ কলেজ থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন নিয়মিত। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বিশ্বাস নিজেই তার স্বাক্ষর দিয়ে দেন। আর আমরা শুনেছি বিশ^নাথের ভাইয়ের কাছে সোনালী ব্যাংকের চেক বইয়ে স্বাক্ষর করে রেখে গেছেন এবং সে নাকি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন।’
জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বিশ্বাস বলেন, ‘বিশ্বনাথ দত্ত বাইপাস সার্জারি করেছেন, অসুস্থ থাকায় সেখানে (ভারতে) চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছেন। কলেজ পরিচালনা কমিটি মানবিক দিক বিবেচনা করে তার বেতন বইয়ে স্বাক্ষর করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ব্যাংক থেকে কারা টাকা উত্তোলন করেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।’
সোনালী ব্যাংক বেড়া শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্বনাথ দত্তের ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসের বেতন প্রতি মাসেই জমা ও উত্তোলন হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল আজিজ খান বলেন, ‘আমি এই কলেজের নতুন সভাপতি হয়েছি। আমি বিশ্বনাথ স্যারের বিষয়ে শুনেছি, তিনি অসুস্থতার অজুহাতে ভারতে অবস্থান করেন। আমি সভাপতি হওয়ার পর কলেজে তিন-চারটি মিটিং করেছি। তার সাথে আমার একবারও দেখা হয়নি। এবার আমি কলেজে লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়ে ১৫ আগস্ট তাকে উপস্থিত থাকার জন্য বলেছি। যদি উপস্থিত না হন তাহলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজটির এক শিক্ষক বলেন, ‘অধ্যক্ষ এবং গভর্নিং বডির সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়া তো বেতনই হয় না। তাহলে কীভাবে এত দিন বিশ্বনাথের বেতন হয়? এই দুর্নীতিতে সবারই হাত আছে। এর চেয়েও বড় বিষয় হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কোনো কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এক বছরের বেশি থাকার নিয়ম নেই। অথচ কোনো অদৃশ্য শক্তির জোরে আব্দুস ছালাম বিশ্বাস তিন বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন।’
বেড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খবির উদ্দিন দাবি করেন বিষয়টি তার জানা ছিল না। তদন্তসাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহা. সবুর আলী বলেন, ‘তদন্ত করে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’