সারাদেশে শিক্ষক নির্যাতনের প্রতিবাদ, ঈদের আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের শতভাগ উৎসব ভাতা দেয়া, মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণসহ ১২ দাবি আদায়ে আগামী শনিবার সারাদেশে জেলা সদরগুলোতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে প্রাচীন শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশে শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা দেয়া না হলে ও শিক্ষক নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে ঢাকায় মহাসমাবেশসহ কঠোর কর্মসূচি পালন ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
বুধবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিটিএর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসব দাবি দাওয়া উপস্থাপন করে শনিবার জেলা সদরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিটিএর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদের সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে, শিক্ষক নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়। এছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ, শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব দেয়াসহ ১১দফা দাবি জানায় বিটিএ।
বিটিএর দাবিগুলোর মধ্যে আছে, মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ করা, ঈদুল আজহার আগেই সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মত পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দেয়া, পূর্ণাঙ্গ পেনশন প্রথা চালু করা এবং পেনশন প্রথা চালু না হওয়া পর্যন্ত অবসর গ্রহণের ৬ মাসের মধ্যে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের পাওনা দেয়া এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন বন্ধ করা।
বিটিএর দাবি দাওয়ার মধ্যে আরও আছে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের বেতন যথাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ৭ম গ্রেডে উন্নীত করা, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলি প্রথা চালু করা, শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীত করা, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মত শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন এবং শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আনুপাতিক হরে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পদায়ন দেয়া, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক প্রণোদনা এবং শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে শিক্ষা সহায়ক ডিভাইস দেয়া, ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি ও বেসরকারি সকল বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে শিক্ষানীতি-২০১০ এর দ্রুত বাস্তবায়ন।
এসব দাবি আদায়ে আগামী শনিবার বেলা ১১টায় সারাদেশে জেলা সদরে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।
সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে, দুঃখ-কষ্টে ভুগে এবং বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। তাছাড়া কয়েক বছর যাবত কোনও সুবিধা না দিয়েই অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদর বেতন থেকে অমানবিকভাবে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনও বদলি এবং পদন্নোতির সুবিধা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, একই কারিকুলামের অধীন সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারী ও বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে পাহাড়সম বৈষম্য বিরাজ করছে। তাছাড়া, বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের থেকে একধাপ নিচে প্রদান করা হয়। ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা আগের মতোই রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ না করায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নানা সমস্যা বিরাজ করছে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক শিক্ষক নির্যাতনের মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা জেলার সাভারে শিক্ষক হত্যা, নড়াইলে শিক্ষকের গলায় জুতার মালাসহ বগুড়া, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মেরুদণ্ড ও জাতি গঠনের স্থপতি শিক্ষকরা আহত, নিহত, নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছেন। এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদসহ দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। দাবি পূরণ না হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিটিএর উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য বাবু রঞ্জিত কুমার সাহা, সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যক্ষ মো. আবুল কাশেম, সহসভাপতি আলী আসগর হাওলাদার ও বেগম নূরুন্নাহার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু জামিল মো. সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেনসহ অনেকে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।