বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য ফরম বিভাগে-বিভাগে পাঠানো হচ্ছে। এনটিআরসিএ কার্যালয় থেকেই ফরমগুলো বিভিন্ন বিভাগে পাঠাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগের ফরম পাঠানো হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগের ফরম প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই সব প্রার্থীদের ফরম বিভাগগুলো পাঠানো হবে। আর দ্রুতই প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা।
যদিও অনেক প্রার্থী পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরমে ঠিকানা ও জেলার নাম ভুল লিখেছেন বলে এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন। এতে ফরম প্রক্রিয়ায় কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। তবে, সব জটিলতা সমাধান করেই প্রার্থীদের ফরম পাঠানো হচ্ছে। আর ফরম না পাঠানো ৬ হাজার প্রার্থীকে সুযোগ দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
গত রোববার দুপুরে এনটিআরসিএ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে ফরম প্রক্রিয়াকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সচিব ওবায়দুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আমরা ফরম বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তাদের খালি জায়গা না থাকায় তারা আমাদের কার্যালয় থেকেই ফরমগুলো বিভাগে বিভাগে পাঠাচ্ছে। ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর ফরম পাঠানো হয়েছে। এখন ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর ফরম প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব জেলার প্রার্থীদের ফরম পাঠানো হবে।’
কবে নাগাদ প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে দ্রুত পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজ শুরু করা হবে। আশা করি ফরমগুলো হাতে পেলেই তারা কাজ শুরু করবেন।
যেসব প্রার্থী ফরম পাঠাননি তাদের আবারও সুযোগ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যে ফরমগুলো পেয়েছি সেগুলোর প্রক্রিয়া হচ্ছে। এগুলো বিভাগে বিভাগে পাঠানো হলেও যারা ফরম পাঠাননি তাদের আবারও ফরম পাঠানোর সুযোগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। আমরা সুপারিশ করা সব প্রার্থীর ফরমই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠাতে চাই।’
এদিকে এনটিআরসিএর সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা ফরমে ভুল তথ্য দেওয়ায় অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। অনেক সময় প্রার্থীর ফরমের তথ্য ও সার্ভারের তথ্য মিলছে না। শিক্ষক পদে সুপারিশ পাওয়ার পরেও প্রার্থীরা নিজেদের ঠিকানা ঠিকভাবে লিখতে পারছেন না, যা দুঃখজনক।
তিনি আরও জানান, ‘একজন প্রার্থী, তিনি এক জেলার বাসিন্দা, সেখান থেকে শিক্ষক নিবন্ধন পাস করেছেন। সে সনদ অনুযায়ী সুপারিশ পেয়েছেন। এখন তিনি তার স্বামীর সাথে অন্য জেলায় বসবাস করেন। কিন্তু তিনি স্বামীর জেলার নাম তার খামের ওপর লিখে পাঠিয়েছেন। তার তথ্য খুঁজে পেতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। এ ধরনের ব্যক্তি শিক্ষক পদে সুপারিশ পেয়েছেন।’ এ ধরনের প্রার্থীদের তথ্য খুঁজে বের করে তাদের সাথে যোগাযোগ করে সংশোধন করে দেওয়া হচ্ছে, যোগ করেন তিনি।
জানা গেছে, শিক্ষক পদে নতুন সুপারিশ পাওয়া প্রায় ৬ হাজার প্রার্থী পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য ফরম পূরণ করে পাঠাননি। ৩৮ হাজার ২৮৬ জন নিবন্ধিত প্রার্থীর ফরম পূরণ করে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও ৬ হাজার প্রার্থীর ফরম পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা। ৩২ হাজার ২৮৩ জন প্রার্থী ফরম পাঠিয়েছে এনটিআরসিএতে।
এদিকে নিয়োগ সুপারিশের জন্য নির্বাচিত হওয়ার প্রায় তিনমাস পরেও চূড়ান্ত সুপারিশ না পেয়ে হতাশ প্রার্থীরা। তারা দ্রুত শিক্ষক পদে যোগদান করার দাবি জানিয়েছেন। চাকরি পাওয়ার পরেও যোগদানে অহেতুক দেরি হওয়ায় অনেক প্রার্থীই হতাশ। তারা বলছেন, দ্রুত যোগদানের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষকসংকট কিছুটা কমবে। তারা যোগাদানের পর পুলিশ ভেরিফিকেশন করারও দাবি জানিয়েছেন।
করোনায় দেড় বছরের বেশি সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। স্কুল খোলার পর শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছিল সরকার। আবেদন গ্রহণের পর প্রার্থীরা গত ১৫ জুলাই প্রাথমিক সুপারিশও পেয়েছেন ৩৮ হাজার ২৮৬ জন প্রার্থী। কিন্তু শিক্ষক পদে যোগদানের আগে প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও প্রার্থীরা। কিন্তু এ জন্য অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের দ্রুত যোগদান করানোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।